- মুজিববাদী ৭২-এর সংবিধান অনতিবিলম্বে বাতিল করতে হবে
- জুলাই বিপ্লবের আলোকে ‘প্রোকলেমেশন অব রিপাবলিক’ ঘোষণা করতে হবে
- চলতি সপ্তাহের মধ্যে আ.লীগ, ছাত্রলীগ ও ১৪ দলকে নিষিদ্ধ করতে হবে
- ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসর রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনকে চলতি সপ্তাহের মধ্যে পদচ্যুত করতে হবে
- ২০১৪, ১৮ ও ২৪ সালের নির্বাচন অবৈধ ঘোষণা করে সংসদ সদস্যদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে
নতুন পাঁচ দফায় আবারও উত্তাল দেশ। রাস্তায় নেমেছে ছাত্র-জনতা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, বঙ্গভবন এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গতকাল বিক্ষোভ-সমাবেশ থেকে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগসহ পাঁচ দফা বাস্তবায়নে আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আরও কয়েকটি সংগঠন থেকে এসব দফা দেয়া হয়েছে।
সেগুলো হলো— মুজিববাদী সংবিধান, অর্থাৎ ৭২-এর সংবিধান অনতিবিলম্বে বাতিল করতে হবে। চলতি সপ্তাহের মধ্যে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও ১৪ দলকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে ঘোষণা করে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করতে হবে। ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে চলতি সপ্তাহের মধ্যে পদচ্যুত করতে হবে। এ সপ্তাহের মধ্যে জুলাই বিপ্লবের আলোকে ‘প্রোকলেমেশন অব রিপাবলিক’ ঘোষণা করতে হবে। বাংলাদেশের বিদ্যমান গণতন্ত্রকামী ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলের মতের ভিত্তিতে বাংলাদেশ চলবে। গত তিনটি নির্বাচন, যেমন— ১৪ সালের নির্বাচন, ১৮ সালের নির্বাচন, ২৪ সালের নির্বাচনকে অবৈধ ঘোষণা করতে হবে। এই তিনটি নির্বাচনে যারা অবৈধ সংসদ সদস্য ছিলেন, তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হতে এবং তারা যেন ভবিষ্যতে আর কখনো নির্বাচন না করতে পারেন, সে জন্য আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ অগাস্ট ভারতে পালিয়ে যান ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা। সেদিন রাতে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি মানবজমিন পত্রিকার সম্পাদক মতিউর রহমানকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপতি বলেন, তিনি শুনেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন; কিন্তু তার কাছে এ-সংক্রান্ত কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই। রাষ্ট্রপতির ওই বক্তব্যের পর তার অপসারণ বা পদত্যাগের দাবি জোরালো হয়ে উঠেছে। রাষ্ট্রপতি ‘মিথ্যা বলে শপথ ভঙ্গ’ করেছেন মন্তব্য করেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। একইসঙ্গে ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে ছাত্র-জনতা।
গতকাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ চলতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবারের মধ্যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে পদত্যাগ করতে আল্টিমেটাম দিয়েছেন। সমাবেশে একই দাবি জানিয়েছেন আরেক সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসুদও। কর্মসূচিতে সারজিস আলমসহ কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা অংশ নেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দেয়ায় রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে শহীদ মিনারে সমাবেশ ডাকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গতকাল বেলা সাড়ে ৩টার দিকে সমাবেশ শুরু হয়।
কর্মসূচির সমাপনী বক্তব্যে সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকার ও ছাত্রলীগ ২৪-পরবর্তী বাংলাদেশে প্রাসঙ্গিক হবে কি না, সে সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে ১৭ জুলাই। যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসী-জঙ্গিরা নগ্নভাবে নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়েছে। সারা দেশে তারা শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে। তখনই সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে, এই জঙ্গি সংগঠন ও এই সংগঠনের ‘মাদার’ শেখ হাসিনার ঠাঁই এই বাংলায় হবে না।’
সমন্বয়ক হাসনাত আরও বলেন, ‘আমরা জীবন বাজি রেখে রাস্তায় রক্ত দিয়ে সেটি নিশ্চিত করেছি। এ সপ্তাহের মধ্যে আমরা নিশ্চিত করতে চাই ছাত্রলীগ-যুবলীগ, আওয়ামী লীগ ও মুজিববাদী চেতনার সব সাংস্কৃতিক সংগঠন, মিডিয়া সংগঠন, মুজিববাদী মিডিয়া ও সংস্কৃতি, মুজিববাদী সংবিধান, মুজিববাদী জীবনাচার এই বাংলার মাটি থেকে স্থায়ীভাবে উৎখাত হয়ে যাবে।’
আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে পুনর্বাসিত করার স্বপ্ন ভুলে গিয়ে নিজেরা অবিলম্বে বিচারের আওতায় চলে আসুন। তাকে (শেখ হাসিনা) আমরা বাংলাদেশে নিয়ে আসব। তবে সেটা ফাঁসির কাষ্ঠে ঝোলানোর জন্য।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের বিপ্লব শেষ হয়ে যায়নি। ৫ আগস্ট আমরা শেখ হাসিনাকে উৎখাত করেছি। কিন্তু এখনও আমরা নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরি করতে পারিনি। অনেক রাজনৈতিক দল গত ১৬ বছর ধরে নির্যাতিত-নিগৃহীত ও নিপীড়িত হয়েছে। আমরা বিএনপি-জামায়াতকে নিগৃহীত-নির্যাতিত হতে দেখেছি। ছাত্রদলের ভাইয়েরা ক্যাম্পাসে আসতে পারেননি। তাদের পশুর মতো রাস্তায় ফেলে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা পেটাত আর শিবিরকে হত্যা করা জায়েজ করে ফেলা হয়েছিল।’
হাসনাত আরও বলেন, ‘সারা দেশে ও ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল গণতান্ত্রিক ধারার রাজনৈতিক দলগুলো আছে। বিএনপি, জামায়াত, ডানপন্থি, বামপন্থি, উভয় পন্থি যে মতাদর্শেরই হোক না কেন, যারা বাংলাদেশের প্রশ্নে আপসহীন, ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য যারা রাজনীতি করেন, যতদিন না তাদের সুস্থ ও গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে পারছি, ততদিন পর্যন্ত আমাদের বিপ্লব শেষ হয়ে হবে না।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আরও বলেন, মুজিববাদী আওয়ামী শক্তিকে বাংলাদেশ থেকে স্থায়ীভাবে উৎখাত করার জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। নিজেদের দলীয় স্বার্থে আমরা পৃথক হয়ে গেলে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শক্তি আমাদের ওপর আবার জেঁকে বসবে। সে জন্য গণতন্ত্রকামী ও বাংলাদেশ প্রশ্নে আপসহীন রাজনৈতিক দলগুলোকে আমরা আহ্বান জানাব, মুজিববাদীদের বিরুদ্ধে, বাংলাদেশের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আমাদের একটাই অবস্থান— আমরা মজলুম, তারা জালেম। জালেমের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম চলবে।
হাসনাত বলেন, ‘এ সপ্তাহের মধ্যে পাঁচ দফা বাস্তবায়ন না হলে আমরা রাস্তায় নেমে আসব। অন্তর্বর্তী সরকারকে বলতে চাই, আপনারা সরকার হয়েছেন; কিন্তু পেছনে মুজিবের ছবি না লাগিয়ে ৫ আগস্টের গণভবন, বঙ্গভবন ও সংসদের ছবিটি প্রত্যেকের কক্ষের সামনে লাগিয়ে রাখবেন। মনে রাখবেন, যখনই সরকার জনমুখী না হয়ে ক্ষমতামুখী হয়, তাদের অবস্থা ঠিক ওই সংসদের মতোই হবে।’
পাঁচ দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আল্টিমেটাম
গতকাল মঙ্গলবার বিকাল সোয়া ৫টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে পাঁচ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। একইসঙ্গে অবিলম্বে এসব দাবি মেনে নেয়া না হলে শিগগিরই রাজপথে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
দাবিগুলো হলো— ১. মুজিববাদী ৭২-এর সংবিধান অনতিবিলম্বে বাতিল করতে হবে। সে জায়গায় ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের পক্ষ থেকে নতুন করে সংবিধান লিখতে হবে। ২. এ সপ্তাহের মধ্যে ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে চিহ্নিত করে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। তাদের আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করতে হবে। ৩. বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে চলতি সপ্তাহের মধ্যে পদচ্যুত করতে হবে। ৪. এই সপ্তাহের মধ্যে জুলাই বিপ্লবের আলোকে ‘প্রোকলেমেশন অব রিপাবলিক’ ঘোষণা করতে হবে। বাংলাদেশের বিদ্যমান গণতন্ত্রকামী ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলের মতের ভিত্তিতে বাংলাদেশ চলবে। ৫. ২০১৪, ১৮ ও ২৪ সালের নির্বাচনকে অবৈধ ঘোষণা করতে হবে। এসব নির্বাচনে যারা নির্বাচিত হয়েছিলেন, তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে। একইসঙ্গে তারা যেন ২৪-পরবর্তী বাংলাদেশে কোনোভাবেই প্রাসঙ্গিক হতে না পারেন ও নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন, সেজন্য আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।
বঙ্গভবনের সামনে অবস্থান, রাষ্ট্রপতিকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম
বঙ্গভবন ঘেরাও কর্মসূচি থেকে রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগের জন্য ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছে শিক্ষার্থীদের কয়েকটি সংগঠন। এ সময়ের মধ্যে মো. সাহাবুদ্দিন রাষ্ট্রপতির পদ না ছাড়লে ‘দুর্বার আন্দোলন’ গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। রক্তিম জুলাই ২৪, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা কমিটি, ‘বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা, ইনকিলাব মঞ্চসহ বিভিন্ন ব্যানারে গতকাল মঙ্গলবার দুপুর থেকে শিক্ষার্থী ও জনতা খণ্ডখণ্ড মিছিল নিয়ে রাজউকের সামনের মোড়ে অবস্থান নেয়।
পরে বিকাল সাড়ে ৪টায় বঙ্গভবনের সামনে থেকে ছাত্র-জনতার পক্ষে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য দেন এমদাদ বাবু।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘দোসর’ আখ্যায়িত করে এমদাদ বাবু বলেন, ‘আমরা পরীক্ষিত সৈনিক, সম্মুখ যোদ্ধা। আমরা সংগ্রাম করতে গিয়ে হাত-পা-চোখ হারিয়েছি। যদি আরেকটা হাত-পা-চোখ দিতে হয়, আমরা তাও দিতে প্রস্তুত আছি।’ রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের পাশাপাশি সংবিধান বাতিল, বিপ্লবী জাতীয় সরকার গঠন, আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলকে নিষিদ্ধ করারও দাবি জানানো হয় সমাবেশ থেকে।
এ কর্মসূচির কারণে বঙ্গভবন এলাকাজুড়ে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও দেখা যায় সেখানে। বঙ্গভবনের সামনে যাওয়ার আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ঘণ্টাব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি পালন করে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা কমিটি (স্বারক)। সেখানে তারা রাষ্ট্রপতির অপসারণসহ চার দফা দাবি তুলে ধরেন।
দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে : অবৈধ রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করা; সংবিধান বাতিল করা; বিপ্লবী জাতীয় সরকার গঠন করা এবং আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও ১৪ দলকে নিষিদ্ধ করা। স্বারকের নাগরিক কমিটির সদস্য মোহাম্মদ রফিক খান বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ সময় রক্তক্ষরণের মাধ্যমে আমাদের এই স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এই স্বাধীনতা রক্ষা করতে আমরা এখনও রাজপথে আছি। স্বৈরাচার আমাদের এই স্বাধীনতাকে বিভিন্নভাবে কলুষিত করার জন্য পাঁয়তারা করে আমাদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিব্রত করছে। তারা একের পর এক অযৌক্তিক দাবি তুলে আমাদের এই রক্তে কেনা স্বাধীনতাকে কলঙ্কিত করছে। এসবের মূল ইন্ধনদাতা শেখ হাসিনার অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্ত বর্তমান রাষ্ট্রপতি; যে কি-না আমাদের রক্তের ওপর বসে এখনো হোলি খেলছে। আমরা এটা আর হতে দিতে পারি না।’
স্বারক সদস্য মনিরুজ্জামান বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের ছাত্র-জনতার রক্ত এখনও শুকায়নি। কিন্তু ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রধানমন্ত্রী হাসিনার অবৈধ রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এখনো বাহালতবিয়তে আছেন। তাকে পদত্যাগ করতে হবে এবং বিচারের আওতায় আনতে হবে।’ যেহেতু ১৯৭২ সালের লেখা সংবিধানকে দেখিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার স্বৈরাচারিতা দেখিয়েছে, সেই সংবিধানকে পরিবর্তন করতে হবে। তিনি বলেন, ‘যেহেতু একটি গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে এ সরকার গঠন করা হয়েছে, তাই এটি একটি বিপ্লবী সরকার, এটি কোনোভাবেই সাংবিধানিক সরকার নয়। বিপ্লবী সরকার হলে বিগত সবকিছুরই পরিবর্তন হবে। গত তিনটি নির্বাচন অবৈধ ঘোষণা হলে তখন রাষ্ট্রপতিকেও পদত্যাগ করে বিচারের আওতায় আনা যাবে।’
নাগরিক কমিটির আল্টিমেটাম : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণজমায়েত কর্মসূচিতে জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতাকর্মীরাও অংশ নেন। এতে নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারী বক্তব্য দেন।
নাসিরুদ্দীন বলেন, ‘আমরা জাতীয় নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে দাবি জানাচ্ছি— প্রথমত আমরা শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট রেজিমের কোনো অংশ এ দেশে দেখতে চাই না। বাংলাদেশে ক্ষমতার অংশীদার হয়ে যারা ছাত্র-জনতার ওপর গুণ্ডাগিরি চালিয়েছে, মো. সাহাবুদ্দিন সেই ক্ষমতার অংশ। আমরা অবিলম্বে শেখ হাসিনার এই দোসরের পদত্যাগ দাবি করছি। দ্বিতীয়ত, আমরা বাংলাদেশে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের দাবি জানাচ্ছি। গত ১৫ বছরে আমাদের যেসব ভাইকে গুম-খুন করা হয়েছে, তাদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে গত ৫৩ বছরে রাষ্ট্রের যেসব বাহিনী গুম-খুনের নেতৃত্ব দিয়েছে, আমরা তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর দাবি জানাচ্ছি। আমরা ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধেরও দাবি জানাচ্ছি।’ নাসিরুদ্দীন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘অবিলম্বে এসব দাবি মানা না হলে আমরা ছাত্র-নাগরিকদের অভ্যুত্থানকে চূড়ান্ত বিপ্লবের দিকে নিয়ে যাব। সেদিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য অবিলম্বে সব সমস্যার মূল কারিগর বাকশালী সংবিধান বাতিল করে জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসে একটি প্রক্লেমেশন অব ইন্ডিপেন্ডেন্স ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি। এসব দাবি চলতি মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন না হলে আমরা জাতীয় নাগরিক কমিটি দেশের সব দল, নাগরিক ও অংশীজনদের নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলব।’
জাতীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। পরে মিছিলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে গিয়ে শেষ হয়।