মুখোশধারী শ্রমিক কারা

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: অক্টোবর ৩১, ২০২৪, ১১:০২ পিএম
মুখোশধারী শ্রমিক কারা

সেনাবাহিনীর একটি গাড়ি ও পুলিশের লেগুনায় আগুন

  • উত্তপ্ত শ্রমিকদের অধিকাংশই ছিল মাস্ক ও বোরকা পরা
  • ঠাণ্ডা মাথায় উত্তপ্ত শ্রমিকদের শান্ত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
  • সেনা গাড়িতে আগুনের ঘটনাকে হালকাভাবে দেখছে না জামায়াত

রাজধানীর মিরপুর-১৪ নম্বরের কচুক্ষেত এলাকায় সেনাবাহিনীর একটি গাড়ি ও পুলিশের একটি লেগুনায় আগুন দিয়েছে মুখোশধারী পোশাকশ্রমিকরা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। মুহূর্তেই পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এতে বন্ধ হয়ে যায় সড়কে যান চলাচল। পোশাকশ্রমিকরা বিভিন্ন দাবিতে মিরপুর-১৪ নম্বর কচুক্ষেত এলাকায় উত্তপ্ত ছড়ান। এ সময় তারা সড়ক অবরোধের চেষ্টা করেন। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদের শান্ত করতে এলে প্রথমে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। আত্মরক্ষায় পুলিশ লাঠিচার্জ করে। একপর্যায়ে মুখোশধারী কয়েকজন পুরুষ ও বোরকা পরা কয়েকজন নারীশ্রমিক সেনাবাহিনীর গাড়ি ও পুলিশের গাড়িতে ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়।

জানা গেছে, মিরপুর-১৪ নম্বরের ক্রিয়েটিভ ডিজাইনার্স গার্মেন্টের কয়েকশ শ্রমিক সকাল ৮টায় কচুক্ষেতে রাস্তায় জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। এ সময় তারা সড়ক অবরোধের চেষ্টা করেন। শ্রমিকরা কাছাকাছি আরও আটটি গার্মেন্টে হামলা ও ভাঙচুরের চেষ্টা করলে সেনাবাহিনী তাদের সরে যেতে অনুরোধ করে। কিন্তু তারা সরে না গিয়ে সেনা-পুলিশের ওপর আক্রমণ চালায়। ঠাণ্ডা মাথায় উত্তপ্ত শ্রমিকদের শান্ত করতে ফাঁকা গুলি ছুড়েন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তবে শুরু থেকে শ্রমিকরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর আক্রমণ চালায়। তাদের অধিকাংশই ছিল মুখোশ পরা। বোরকা পরা নারীর সংখ্যা ছিল বেশি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুরু থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঠাণ্ডা মাথায় পরিস্থিতি মোকাবিলা করে। কিন্তু বোরকাপরা কিছু নারী  ও মাস্কপরা কিছু পুরুষ শুরু থেকেই মারমুখী ছিল। তারাই পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে লক্ষ্যে করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তাদের পরিচয় জানার চেষ্টা করছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছে। শ্রমিকদের ভেতরে ফ্যাসিবাদের দোসররা ঢুকে পড়েছে কিনা অনেকেই আশঙ্কা করছেন। সমপ্রতি অনেকগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটছে। অল্পতেই কিছু দুর্বৃত্ত রাস্তায় নেমে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে। বিনা উস্কানিতে সেনা-পুলিশকে টার্গেট করছে বলে খবর রয়েছে গোয়েন্দাদের কাছে। কারা এই মুখোশপরা ছিল তাদের খোঁজে মাঠে নেমেছে গোয়েন্দারা।

ভাষানটেক থানার ওসি শাহ মোহাম্মদ ফয়সাল গণমাধ্যমকে বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সকাল থেকেই আমরা রাস্তায় ছিলাম। তবে শ্রমিকরা হঠাৎ করে তাদের আন্দোলন থেকে পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে তারা সেনাবাহিনী ও পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে ঠাণ্ডা মাথায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার লিমা খানম আগুনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘কচুক্ষেত এলাকায় সেনাবাহিনীর একটি গাড়িতে এবং পুলিশের একটি লেগুনায় আগুনের ঘটনা ঘটেছে। তাদের দুটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেন।’

দেশ অস্থিতিশীলের ছক থাকলে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই— জামায়াত আমির : রাজধানীর কচুক্ষেতে পোশাকশ্রমিকদের বিক্ষোভে সেনাবাহিনী ও পুলিশের গাড়িতে আগুনের ঘটনাকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুল ইসলাম। সেনাবাহিনী ও পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেয়া এক স্ট্যাটাসে এ কথা বলেন তিনি।

জামায়াত আমির বলেন, রাজধানীর কচুক্ষেতে পোশাকশ্রমিকদের বিক্ষোভে সেনাবাহিনী ও পুলিশের গাড়িতে আগুন! খুব নিকট সময়ের ভেতরেই গোপালগঞ্জের পর ঢাকার কচুক্ষেতে এই ঘটনা ঘটল। শ্রমিকদের যদি কোনো ন্যায্য দাবি-দাওয়া থাকে তাহলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ন্যায্যতার ভিত্তিতে সমাধান করবেন এটাই তাদের কর্তব্য। কিন্তু বিক্ষোভকালে সেনাবাহিনী এবং পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ এটা যদি বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্যে হয়ে থাকে, দেশ এবং অর্থনীতিকে অস্থিতিশীল করার কোনো ছক থেকে থাকে তাহলে বিষয়টি হালকাভাবে দেখার কোনোই সুযোগ নেই।