আজ বিশ্বের নজর যুক্তরাষ্ট্রে

আমার সংবাদ ডেস্ক প্রকাশিত: নভেম্বর ৫, ২০২৪, ১২:১৫ এএম
আজ বিশ্বের নজর যুক্তরাষ্ট্রে

ট্রাম্পের ঘাঁটিতে জরিপে এগিয়ে কমলা হ্যারিস

  • সুইং স্টেটগুলোয় কমলার চেয়ে এগিয়ে ট্রাম্প
  • চূড়ান্ত ফলাফল নির্ধারণ করবে সাত ‘সুইং স্টেট’

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণা শেষে আজ মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে ভোটগ্রহণ। এ নির্বাচনের ফলাফলের দিকে শুধু ভোটাররাই নন বরং তাকিয়ে আছে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষও। বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন, নাকি সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পই আবার নির্বাচিত হবেন— সেটিই দেখার অপেক্ষায় বিশ্ব। সর্বশেষ ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গা বাধিয়েছিলেন ট্রাম্প। এবারও তেমন কিছু হয় কী না, সেদিকেও নজর রয়েছে অনেকের। ইতোমধ্যে বেশিরভাগ অঙ্গরাজ্যে সাত কোটি ৭০ লাখেরও বেশি ভোটার আগাম ভোট দিয়েছেন। তবে আজ মঙ্গলবার ভোটগ্রহণ হলেও ওইদিনই চূড়ান্ত ফলাফল জানা যাবে না। 

বেশিরভাগ ভোটকেন্দ্র রাজ্য ও কাউন্টির ওপর নির্ভর করে সন্ধ্যা ৬টা থেকে মধ্যরাতের মধ্যে বন্ধ হয়ে যাবে। সাধারণ নিয়ম হলো আপনি যত পশ্চিমে যাবেন, অঞ্চলের পার্থক্যের কারণে দেরিতে ভোট বন্ধ হবে। সময়ের ব্যবধানের কারণে এমনও হতে দেখা যায়, পূর্বাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্যে ভোট গণনা শুরু হয়ে যায়; কিন্তু আলাস্কা ও হাওয়াইয়ের মতো অঙ্গরাজ্যের ভোটাররা তখনও ভোট দিতে থাকেন। ভোট শেষ হওয়ার পর স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা থেকে গণনা শুরু হবে। নির্বাচনের সম্ভাব্য বিজয়ী কে, তা জানতে হয়তো কদিন অপেক্ষায় থাকতে হতে পারে। ২০২০ সালের ৩ নভেম্বর ভোটগ্রহণের চার দিন পর জো বাইডেনকে বিজয়ী বলা সম্ভব হয়েছিল।

 প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল নির্ধারণী সাত রাজ্য অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, মিশিগান, নেভাদা, উত্তর ক্যারোলাইনা, পেনসিলভানিয়া এবং উইসকনসিনের ফলাফলের জন্য পরদিন সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল। করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে ভোট গণনায় অতিরিক্ত সময়ের দরকার হয়েছিল ওই সময়। এ ছাড়া ডাকযোগে দেয়া ভোট গণনার জন্য নির্বাচনের ফল জানতে আরও তিন দিন অপেক্ষা করতে হয়েছিল। তবে ২০১৬ সালে অবশ্য ভোটের পরদিন সকালেই ট্রাম্পকে বিজয়ী হিসেবে স্বীকার করে নেন হিলারি ক্লিনটন।

এদিকে দেশটির এবারের নির্বাচনে অধিকাংশ জনমত জরিপের ফলাফলে দুই প্রার্থীর জনসমর্থন খুব কাছাকাছিই দেখা যাচ্ছে। এতে নির্বাচনে তাদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে মনে করা হচ্ছে। 

ট্রাম্পের ঘাঁটিতে জরিপে এগিয়ে কমলা : আইওয়ায় ২০১৬ ও ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সহজ জয় পেয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু এই অঙ্গরাজ্যে নতুন এক জনমত জরিপে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ট্রাম্পকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গেছেন কমলা হ্যারিস। আইওয়ার ডেজ মইনেস রেজিস্টার/মিডিয়াকম আইওয়ার পোলের প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। গত ২৮ থেকে ৩১ অক্টোবর এই জরিপ পরিচালিত হয়। মোট ৮০৮ ভোটার জরিপে অংশ নেন। শনিবার জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। জরিপে কমলা ৪৭ শতাংশ ও ট্রাম্প ৪৪ শতাংশ সমর্থন পেয়েছেন। অথচ সেপ্টেম্বরের জরিপে ট্রাম্প ৪ পয়েন্ট ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন। 

জরিপ পরিচালনাকারী পত্রিকা দ্য রেজিস্টার বলেছে, জনমত জরিপে দেখা গেছে নারীরা, বিশেষ করে বয়স্ক ও রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ নারীদের ভোট কমলার দিকে গেছে। ট্রাম্প ২০১৬ সালে আইওয়ায় ৯ শতাংশের বেশি পয়েন্ট ব্যবধানে এবং ২০২০ সালে ৮ পয়েন্ট ব্যবধানে জিতেছিলেন। 

সুইং স্টেটগুলোয় কমলার চেয়ে এগিয়ে ট্রাম্প : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আজ মঙ্গলবার। এরই মধ্যে সব সুইং স্টেটে জনমত জরিপে ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিসের চেয়ে এগিয়ে আছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। জরিপে প্রায় ৪৯ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভোট দেবেন তারা। সবশেষ জরিপ অনুযায়ী, সুইং স্টেটগুলোয় কমলা হ্যারিসের চেয়ে এক দশমিক ৮ শতাংশ ভোটে এগিয়ে রয়েছেন ট্রাম্প। অ্যাটলাস ইন্টেল পরিচালিত সবশেষ জরিপে এ তথ্য জানানো হয়। নভেম্বরের প্রথম দুদিনে পরিচালিত এ জরিপে অংশ নেন যুক্তরাষ্ট্রের আড়াই হাজার ভোটার। অংশগ্রহণকারীর অধিকাংশই ছিলেন নারী। সুইং স্টেটগুলোয় চালানো আরেকটি জরিপে দেখা গেছে, অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, মিশিগান, নেভাদা, নর্থ ক্যারোলাইনা, পেনসিলভানিয়া ও উইসকনসিনে জয় পাবে রিপাবলিকান। অ্যারিজোনায় ট্রাম্পের পক্ষে ভোট পড়েছে ৫১ দশমিক ৯ শতাংশ। আর হ্যারিসের পক্ষে ৪৫ দশমিক এক শতাংশ। নেভাদায় জনগণ কাকে ভোট দেবে জানতে চাইলে ৫১ দশমিক ৪ শতাংশ ভোটার ট্রাম্পকে পছন্দ করেছেন এবং ৪৫ দশমিক ৯ শতাংশ ভোটার হ্যারিসকে ভোট দিয়েছেন। নর্থ ক্যারোলাইনায় ট্রাম্প ৫০ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট পেয়েছেন এবং হ্যারিস পেয়েছেন ৪৬ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণে সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে সুইং স্টেটগুলো। এসব রাজ্যে প্রার্থীদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয় এবং সেগুলোর ফলাফল আগে থেকে অনুমান করা অনেক কঠিন। দেশটির ৫০ অঙ্গরাজ্যের মধ্যে সাতটিকে সুইং স্টেট হিসেবে ধরা হয়, যেগুলো ব্যাটলগ্রাউন্ড নামেও পরিচিত। 

ভোটগ্রহণ কখন শুরু, কখন শেষ : নির্বাচনের দিন অধিকাংশ অঙ্গরাজ্যে ভোটকেন্দ্রগুলো খুলবে স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে সকাল ৯টার মধ্যে। যুক্তরাষ্ট্র একাধিক ‘টাইম জোন’-এ বিভক্ত হওয়ায় দেখা যাবে সময়ের এমন পার্থক্য। একইভাবে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার সময় হবে পৃথক। কখনও তা কাউন্টিভেদেও হবে ভিন্ন। এদিকে ভোটগ্রহণ বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গণনার কাজ শুরু হবে। এর কয়েক ঘণ্টা পর থেকে ফলাফল আসতে শুরু করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

ভোট সমান হলে কী হবে : নির্বাচনে কোনো প্রার্থী যদি স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পান, অর্থাৎ প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থী ২৬৯-২৬৯ ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পান কিংবা তৃতীয় কোনো প্রার্থী ইলেকটোরাল ভোট জেতেন, সেক্ষেত্রে মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ ‘প্রতিনিধি পরিষদ’ ভোট দিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবে। এটি ‘কন্টিনজেন্ট ইলেকশন’ নামে পরিচিত। 

ইলেকটোরাল কলেজ ভোট কত : নির্বাচনে জিততে একজন প্রার্থীকে মোট ৫৩৮ ইলেকটোরাল ভোটের মধ্যে অন্তত ২৭০টি পেতে হবে। যেসব অঙ্গরাজ্য থেকে ভোটের প্রথম ফলাফল আসতে পারে, সেগুলোর একটি দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য জর্জিয়া। এরপর রয়েছে নর্থ ক্যারোলাইনা। সাতটি সুইং স্টেট বা দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল নির্ধারণ করবে বলে মনে করা হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ এসব অঙ্গরাজ্য হলো পেনসিলভানিয়া (১৯ ইলেকটোরাল ভোট), নর্থ ক্যারোলাইনা (১৬), জর্জিয়া (১৬), মিশিগান (১৫), অ্যারিজোনা (১১), উইসকনসিন (১০) ও নেভাদা (৬)। দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোতে মোট ইলেকটোরাল কলেজ ভোট ৯৩টি।