- ভোট কলঙ্কের অধ্যায় শুরু রকিবউদ্দীন, নুরুল হুদা ও আউয়াল যুগে
- হাসিনার অনুগত ইসিদের বিচার শুরু করতে সরকারে প্রস্তাবনা
- শীঘ্রই বিতর্কিত নায়কদের তালিকা যাচ্ছে প্রধান উপদেষ্টার কাছে
অবৈধ ও প্রতারণামূলক নির্বাচনের আয়োজনের সম্পৃক্ততায় আওয়ামী যুগের সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) বিচার শুরু হচ্ছে। সাবেক সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, কে এম নুরুল হুদা ও কাজী হাবিবুল আউয়ালের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ এনে মামলাও দায়ের করা হয়েছে। মামলায় ওই সময়ের ইসি কমিশনার ও সচিবদেরও আসামি করা হয়েছে। সমপ্রতি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট-৬ কাজী শরিফুল হকের আদালতে মামলাটি দায়ের করেন সাবেক বিএনপি নেতা একরামুল করিম। আদালত মামলা গ্রহণ করে পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এরই প্রেক্ষিতে দেশের নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকেও প্রস্তাব এসেছে হাসিনার অনুগত ইসিদের বিচার শুরু করার জন্য। যাদের কারণে বাংলাদেশের ভোট কলঙ্কের অধ্যায় শুরু হয়। সরকারের নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো বলছে, শীঘ্রই বিতর্কিত নায়কদের তালিকা যাচ্ছে প্রধান উপদেষ্টার কাছে।
এদিকে গতকাল নাগরিক সমাজ বিগত নির্বাচন কমিশনগুলোকে বিচারের আওতায় আনার জন্য সুপারিশ করেছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ও সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। নির্বাচন ভবনে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আয়োজিত বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের সামনে আসেন তিনি। গতকাল রোববারের এ বৈঠক সম্পর্কে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আজকের আলোচনাটা ভিন্ন ছিল। উনারা অনেক অভিজ্ঞ, উনারা শিক্ষক, উনারা গবেষক, উনাদের এসব বিষয়ে গভীর জ্ঞান আছে। উনাদের সঙ্গে আমরা সত্যিকার অর্থে একটা ডায়ালগ করেছি। আমরা তাদের কাছ থেকে জানার চেষ্টা করেছি। আজকের আলোচনা থেকে যেটা সুস্পষ্ট হলো, সবাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে একমত হয়েছেন। তিনি বলেন, বিগত কমিশনগুলো বিতর্কিত ও কলঙ্কিত নির্বাচন করে শপথ ভঙ্গ করেছে। তারা সংবিধান লঙ্ঘন করেছে। তাই সবাই তাদের বিচারের আওতায় আনার সুপারিশ করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসাতে ভূমিকা রাখা কর্মকর্তাদের তালিকা করছে ড. ইউনূস সরকার। এরই মধ্যে বিভাগীয় কমিশনার ও রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসকের (ডিসি) তালিকা প্রস্তুত হয়েছে। এখন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে থাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) তালিকা তৈরির কাজ চলছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের কয়েক মাসের মাথায় বিতর্কিত তিন নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে সহায়তা দেয়া কর্মকর্তাদের খোঁজে নেমেছে সরকার। প্রত্যাক্ষ ও পরোক্ষভাবে যেসব কর্মকর্তারা হাসিনা সরকারকে অবৈধভাবে ক্ষমতায় আনতে সহায়তা করেছে তাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, খুব শীঘ্রই বিতর্কিত নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের তালিকা প্রধান উপদেষ্টার কাছে পাঠানো হবে।
আওয়ামী যুগের কমিশনারদের মামলার বিষয়ে একরামুল করিমের আইনজীবী কফিল উদ্দিন বলেন, আদালত পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের সংসদ নির্বাচনে বিরোধী দলসহ অনেক জনপ্রিয় নেতার অংশগ্রহণ ছিল না। সাধারণ মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি। যারা কমিশনে ছিলেন, তাদের ব্যর্থতার কারণে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও নির্বাচনি মাঠে একপেশে আচরণ করেছে। বিপুল টাকা ব্যয়ে যে তিনটি নির্বাচন হয়েছে, তাতে সংবিধানের খেলাপ করেছেন নির্বাচন কমিশনারসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। তাই রাষ্ট্রদ্রোহ ও প্রতারণা মামলা করা হয়েছে। একই সঙ্গে এসব নির্বাচনে সংসদ সদস্য যারা নির্বাচিত হয়েছেন, অবৈধভাবে সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছে তাদেরও মামলায় আসামি করা হয়েছে। মামলার অন্য আসামিরা হলেন— সাবেক নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ, মো. জাবেদ আলী, আবদুল মোবারক, মো. শাহনেওয়াজ, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম, শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান, বেগম রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমান, নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ ও জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ ছাড়া তিনটি সংসদ নির্বাচনে জয়ী সব সংসদ সদস্য।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ও ইন্ধনে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে জনগণের সব গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ, দেশের সংবিধান ও আইনকে লঙ্ঘন করে একপেশে, জনগণের অংশগ্রহণবিহীন ভুয়া নির্বাচনের মাধ্যমে কিছু অনির্বাচিত লোককে সংসদ সদস্য ঘোষণা করেন। পরে তাদের মন্ত্রী ও স্পিকার ঘোষণা করা হয়। দেশের মানুষ ভোট দিতে না পারায় নির্বাচনবিমুখ হয়ে পড়েন। বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে গণতন্ত্র। দেশে স্বৈরচারী লুটেরা ব্যবস্থার আবির্ভাব হয়। দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করে দেশের অর্থনীতি পঙ্গু করে দেন সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীরা।