- মিথ্যা মামলায় মিলছে খালাস উজ্জীবিত নেতাকর্মীরা
- গাজীপুরের তিন মামলায়ও খালাস পেলেন
দীর্ঘ ১৭ বছর নির্বাসিত জীবন কাটানোর পর দেশে ফেরার অমিয় সম্ভাবনা কিংবা সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের। যিনি ১/১১-এর তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং পরবর্তী স্বৈরাচার শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী সরকারের মিথ্যা ও প্রহসনের মামলায় নির্বাসিত জীবনে যেতে বাধ্য হন। এরই মধ্যে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে শিশুসহ সাধারণ মানুষের তাজা রক্তে নিজেদের হাত রঞ্জিত করে দেশত্যাগে বাধ্য হন ফ্যাসিস্ট সরকারপ্রধান স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ও তার দল। যার দেশ ছেড়ে পলায়নের পরই দেশ-বিদেশে তুমুল জনপ্রিয় নোবেল লরিয়েট ড. মুহাম্মদ ইউনূস ধরেন বেসামাল বাংলাদেশের স্টিয়ারিং। এরপর থেকেই কার্যত আইনের যথাযথ ব্যবহারে দেশ থেকে মিথ্যা ও প্রহসনমূলক মামলাগুলোর অবসান ঘটতে শুরু করে। আর এর সুফলও এখন রাষ্ট্রের সবস্তরের নাগরিক ছাড়াও ফ্যাসিস্ট হাসিনার পরিকল্পিত নষ্ট রাজনীতির শিকার দেশের রাজনৈতিক দলগুলোও ভোগ করতে যাচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দলটির চেয়ারপারসন থেকে শুরু করে তৃণমূলকর্মী পর্যন্ত প্রত্যেকের জীবনকেই গত ১৫ বছরে দুর্বিষহ করে তুলেছিলেন পলাতক শেখ হাসিনা।
অন্যসব রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষও বাদ পড়েনি হাসিনা এবং তার দলের অব্যাহত অত্যাচার থেকে। তবে স্বস্তির বিষয় হলো— রাজনৈতিক সেই মেচাকার অবস্থার উত্তরণ ঘটতে শুরু করেছে এখন। ইতোমধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কথায় কথায় করা মামলায় খালাস কিংবা অব্যাহতির মধ্য দিয়ে মিথ্যা মামলার ঝুড়িও খালি হতে শুরু করেছে। বিএনপির আইনজীবীরা বলছেন, রাজনৈতিকভাবে পরিকল্পিত মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে তাকে। তার বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেই ১৭টি মামলা করা হয়। পরবর্তীতে শেখ হাসিনা সরকারের সময় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা, অর্থপাচার এবং দেশব্যাপী মানহানির মামলাসহ অন্তত ২০টিরও বেশি মামলা করা হয়। পরিকল্পিত মিথ্যা মামলার সংখ্যা এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে যে, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ঠিক কতসংখ্যক মামলা হয়েছে, তার সঠিক সংখ্যা বলাও মুশকিল। মানহানির অভিযোগে দেশের প্রত্যেক জেলায় মামলা হয়েছিল সে সময়। যেগুলো সম্পর্কে এখনো সেভাবে জানাও সম্ভব যায়নি। এতসব মামলার ভিড়ে এটাও জানা কঠিন যে, তার বিরুদ্ধে হওয়া এসব মামলার মধ্যে প্রকৃত মামলাইবা কতটি। সে সংখ্যাও আদৌ জানে না দলটি।
বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন, দেশে ফেরার পরিকল্পনা করছেন তারেক রহমান। এমন খবর এখন রাজনৈতিক অঙ্গনেও রয়েছে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামালও সম্প্রতি জানিয়েছেন, তারেক রহমানের দেশে ফেরার পথে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দায়ের করা মামলাগুলো কোনো বাধা সৃষ্টি করবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা দায়ের করা হয়েছিল, যার মধ্যে দুর্নীতি, মানিলন্ডারিং এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। তবে তিনি দাবি করেছেন, এসব মামলার অনেকগুলোই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং সেগুলোর আইনগত ভিত্তিও অনেক দুর্বল। কায়সার কামাল বলেন, আইনি পথ ছাড়া তিনি দেশে ফিরবেন না। তার আইনজীবীরাও আপ্রাণ চেষ্টা করছেন তার মামলা নিষ্পত্তি করার বিষয়ে। এখন দেখার বিষয় কবে সবকিছু ঠিক হয় এবং কবে তিনি (তারেক রহমান) সঠিক মনে করেন দেশে ফেরত আসাকে। যদিও তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে রাজনৈতিক ও আইনগত অঙ্গনে মতবিরোধ রয়েছে। অন্যদিকে বিএনপি মনে করছে, এটি তাদের জন্য একটি নতুন রাজনৈতিক সুযোগ এনে দেবে। যদিও তারেক রহমান কবেনাগাদ দেশে ফিরবেন, সেটি নিয়ে একধরনের ধোঁয়াশা রয়েছে। দলটির নেতাকর্মীরাও বিষয়টি জানতে চাইছেন। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, মামলা চলমান থাকায় তিনি কী দেশে ফিরতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন; নাকি মামলা প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত তিনি অপেক্ষা করবেন।
এরইমধ্যে একের পর এক মিথ্যা মামলা থেকে অব্যাহতি পাচ্ছেন তিনি। গতকালও গাজীপুরের জয়দেবপুরে ১০ বছর আগে হওয়া বিস্ফোরক আইনের একটি মামলা থেকে খালাস পান তিনি। শুধু গাজীপুরেই এ নিয়ে বিভিন্ন থানায় হওয়া তিনটি মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেন তিনি। গত বুধবারও পৃথক দুই মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন তারেক রহমান। দুই মামলার একটি ২০০৮ সালে ২৬ লাখ টাকার কর ফাঁকির অভিযোগে দুদকের করা; অন্যটি ২০০৭ সালে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোনেমের করা চাঁদাবাজির মামলা। এর আগে ৩০ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে নাশকতা ও রাষ্ট্রদ্রোহের ১১টি মামলার কার্যক্রম বাতিল হয় হাইকোর্টে। শুধু তা-ই নয়, সারাদেশেই একইভাবে মিথ্যা সব মামলায় শিগগিরই খালাস পাবেন তিনি— এমনটাই আশা দলের নেতাকর্মীদের। তারা বলছেন, খুব শিগগিরই বীরের বেশে দেশে ফিরবেন তিনি। কারণ, আওয়ামী লীগ তার বিরুদ্ধে যেসব মামলা করেছে, তার একটিও প্রমাণ করতে পারেনি দলটি।