এনআরবিসি ব্যাংকের বিরুদ্ধে এবার অ্যাকশনে বিএসইসি

আনোয়ার হোসাইন সোহেল প্রকাশিত: জানুয়ারি ৯, ২০২৫, ১২:০৬ এএম
এনআরবিসি ব্যাংকের বিরুদ্ধে এবার অ্যাকশনে বিএসইসি

এনআরবিসি ব্যাংকে চেয়ারম্যান পারভেজ তমালসহ পরিচালকদের শেয়ার জালিয়াতির তদন্তের নির্দেশনা দিয়েছে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

গতকাল বুধবার বিএসইসির এই নির্দেশনা দিয়েছে।

এর আগে ব্যাংকটি চেয়ারম্যান ও নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যানের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজের নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

বিএসইসির নির্দেশনা বলা হয়েছে, পুঁজিবাজার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন বিএসইসি এই মর্মে অভিমত দেয় যে, যেহেতু এনআরবিসি ব্যাংক পিএলসি-এর উদ্যোক্তারা, উদ্যোক্তা পরিচালকরা ও সাবেক পরিচালক ও চেয়ারমান কর্তৃক কমিশনে অভিযোগ দাখিল করা হয় এবং যেহেতু অভিযোগের ভাষ্যমতে বাংলাদেশ ব্যাংকের এফআইসিএসডি কর্তৃক ২০১৬ সালের নভেম্বরে মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধে বাজেয়াপ্ত ঘোষিত এবিএম আব্দুল মান্নানের ৪,৭০,০১,৮৮৬টি শেয়ারের (পরিশোধিত মূলধনের ৫.৬৭%) মধ্যে ৪,৪৯,৯৯,৫১১টি স্পন্সর শেয়ার গত ৩১ অক্টোবর তারিখে এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান পারভেজ তমালের ব্যবসায়িক পার্টনার ও আত্মীয় শফিকুল আলম মিথুনের নামে ১,৬৫,৭২,৯৯২টি শেয়ার, এনআরবিসি ব্যাংকের এক্সিকিউটিব কমিটির চেয়ারম্যান আদনান ইমামের স্ত্রী নাদিয়া মোমিন ইমামের নামে ১,৩৮,৪৫,৯০৪টি শেয়ার ও মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শহীদুল আহসানের মেয়ে রেহনুমা আহসানের নামে ১,৪৫,৮০,৬১৫টি শেয়ার অবৈধভাবে ব্লক মার্কেটে বিক্রয়সূত্রে হস্তান্তর করা হয় এবং যেহেতু, উক্ত শেয়ারগুলোতে বিনিয়োগকৃত অর্থ মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে যোগান দেয়া ও স্পন্সর শেয়ার কেনাবেচা বা হস্তান্তরের জন্য বোর্ডের অনুমোদন লাগলেও এ বিষয়ে বোর্ড মিটিংয়ে কোনোরূপ আলোচনা না করেই পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার বিষয়টিও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়; সেহেতু উল্লিখিত বিষয়ে এনআরবিসি ব্যাংক পিএলসি, চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল, এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান আদনান ইমাম, অভিযোগে বর্ণিত অন্যান্য ব্যক্তি ও প্রাসঙ্গিক অন্যান্য বিষয়ে অনুসন্ধান করা প্রয়োজন। সেজন্য সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ  অর্ডিনেন্স ১৯৬৯-এর সেকশন ২১, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩ এর ধারা ১৭ক এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ (সংশোধিত ২০১৫)-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে নিম্নলিখিত তিনজন শীর্ষ কর্মকর্তার সমন্বয়ে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠনে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তারা হলেন- বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের অতিরিক্ত পরিচলক মুহাম্মদ জিয়াউর রহমান, বিএসইসির সহকারী পরিচালক মো. মেহেদী হাসান রনি এবং

বিএসইসির সহকারী পরিচালক মো. হাছান। তাদের আগামী ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করে কমিশনে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়।

এর আগে, বিভিন্ন অনিয়ম-জালিয়াতিতে আলোচিত এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান এসএম পারভেজ তমাল এবং ব্যাংকটির নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যানের পদ হারানো মোহাম্মদ আদনান ইমামের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। ব্যাংকটির সিএফও মো. জাফর ইকবাল হাওলাদারের অ্যাকাউন্টও ফ্রিজ করা হয়েছে।

তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও একক নামে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টও ফ্রিজ করতে বলা হয়েছে। সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য পাওয়ায় সব ব্যাংকে এ সংক্রান্ত চিঠি দেয়া হয়।

বিএফআইইউর চিঠিতে তাদের বিস্তারিত পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। এসএএম পারভেজ তমালের বাবা সৈয়দ শাহজাহান ও মা উম্মে বিলকিস। আর আদনান ইমামের বাবা চৌধুরী ফজলে ইমাম, মা নিলুফার ইমাম। জাফর ইকবাল হাওলাদার বাবা জালাল আহমেদ হাওলাদার, মা সুফিয়া বেগম।

এসব ব্যক্তির নিজ, স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পাশাপাশি ব্যক্তি মালিকানায় কোনো প্রতিষ্ঠানের হিসাব থাকলে তা-ও ফ্রিজ করতে হবে। মানি লন্ডারিং আইনের ২৩(১)(গ) ধারায় এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অ্যাকাউন্ট ফ্রিজের পাশাপাশি অ্যাকাউন্ট খোলার ফরম, কেওয়াইসি, হালনাগাদ লেনদেন বিববরণীসহ যাবতীয় তথ্য আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে পাঠাতে হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডের অন্যতম আসামি এস এম পারভেজ তমাল। গত ৪ আগস্ট গুলিবিদ্ধ হয়ে পরবর্তীতে মারা যাওয়া মো. বেলাল হোসেন রাব্বির (২৬) মা জেসমিন আক্তার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সজীব ওয়াজেদ জয় এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে তাকে আসামি করে সম্প্রতি রাজধানীর শাহবাগ থানায় এ মামলা করেন। মামলায় মোট ২২ জনকে আসামি করা হয়েছে। 

আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৩ সালে অনুমোদন দেয়া নতুন ৯ ব্যাংকের একটি এনআরবিসি ব্যাংক।

ব্যাংকটিতে স্বেচ্ছাচারিতা, নিয়োগ বাণিজ্য, ঋণ জালিয়াতি, এনজিওর সঙ্গে মিলে ঋণ দেয়ার নামে অর্থ বের করে নেয়াসহ বিভিন্ন অনিয়মের কারণে বারবার সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন পারভেজ তমাল। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে তিনি আত্মগোপনে আছেন। শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত পারভেজ তমাল।

পারভেজ সমালের বিরুদ্ধে নামে-বেনামে ৮ হাজার কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে।

ইএইচ