- অব্যাহতিপ্রাপ্ত ৪০ ক্যাডেট এসআইয়ের আমরণ অনশন
- চূড়ান্ত সুপারিশের পরও নিয়োগবঞ্চিত ৪৮ কারারক্ষীর অবস্থান
- ক্যাডেট সিডিসি না দেয়ায় ১৭ নাবিকের মানববন্ধন
- তিন দাবিতে জবি শিক্ষার্থীদের সচিবালয় ঘেরাও
- সচিবালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীদের ভোগান্তি
গতকাল সোমবার দিনভর উত্তাল ছিল প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ সচিবালয়। দিনের শুরুতে সকাল ১০টায় সচিবালয়ের সামনের রাস্তায় অবস্থান নেন পুলিশের ৪০তম ব্যাচের অব্যাহতিপ্রাপ্ত উপ-পরিদর্শকরা (ক্যাডেট এসআই)। এর আগে সরকারের দেয়া আশ্বাসের বাস্তবায়ন না হওয়ায় চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে গতকাল ফের অবস্থান নেন তারা।
তারা জানান, তাদের অন্যায়ভাবে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলমান থাকবে বলে জানান তারা। এ সময় তাদের পাশেই অবস্থান নেন ৪৮ নারী ও পুরুষ কারারক্ষী।
তারা বলেন, তাদের কোনো কারণ ছাড়াই চূড়ান্ত সুপারিশের পরও নিয়োগ দেয়া হয়নি। একই সময় চীনের জিয়াংশু মেরিটাইম ইনস্টিটিউট থেকে নাবিক প্রশিক্ষণ শেষ করে আসার পরও প্রবাসী ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে ক্যাডেট সিডিসি না পাওয়ায় অবস্থান নেন ১৭ নাবিক।
সবশেষে সন্ধ্যার কিছু সময় আগে তিন দাবিতে ক্যাম্পাস থেকে সচিবালয় ঘেরাওয়ের উদ্দেশ্যে পদযাত্রা শুরু করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় পুলিশি ব্যারিকেড ভেঙে সচিবালয়ের ১ নম্বর গেটের সামনে অবস্থান নেন তারা। সেখানেই অনশন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। নানা স্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠে সচিবালয়ের পরিবেশ। ভোগান্তিতে পড়েন সচিবালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পেছনের গেট দিয়ে বের হতে হয়েছে তাদের।
সরেজমিন দেখা গেছে, দুপুরের দিকে সচিবালয়ের সামনের রাস্তায় এসে ৪০তম ক্যাডেট এসআইদের রাস্তা ছাড়ার জন্য বোঝাচ্ছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মাসুদ আলম। তিনি বলেন, দাবি আদায়ের
আরও অনেক মাধ্যম আছে। তোমরা রাস্তা ছেড়ে দাও। স্মারকলিপি দাও। যদিও তারা পুলিশের এমন কথা রাখেননি। তারা জানিয়েছেন, সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকরী কোনো সিন্ধান্ত না আসা পর্যন্ত এখানেই অবস্থান করব আমরা। কারণ এর আগেও আমাদের আশ্বাস দিয়ে বাস্তবায়ন করেনি সরকার। পরে বিকাল চারটা নাগাদ অপেক্ষা করেও সরকারের কোনো বার্তা না পেয়ে আমরণ অনশন কর্মসূচি ঘোষণা করেন তারা। সঙ্গে সঙ্গেই সেখানে বসে পড়েন এবং নারী ক্যাডেট এসআইয়ের অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন।
কান্নারত কণ্ঠে তারা বলেন, আমাদের কি অপরাধ? আমাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই। এটা অজুহাত মাত্র। তারা আরও বলেন, সরকারের এমন কোনো দপ্তর নেই যেখানে আমরা যাইনি। কেউই আমাদের রেসপন্স করেনি। যে কারণে এই কর্মসূচি ঘোষণা ছাড়া আমাদের সামনে আর কোনো বিকল্প নেই।
এরপর সন্ধ্যা ৬টার দিকে পুলিশের একজন কর্মকর্তা এসে তাদের তিন প্রতিনিধিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডাকার কথা জানান। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে তাদের মিটিংয়ের কথা বলা হয়েছে। ভেতরে যাওয়ার আগে তারা বলে গেছেন, সরকার হয় প্রজ্ঞাপন জারি করবে বা প্রেস ব্রিফিং ডেকে আমাদের চাকরিতে পুনর্বহালের কথা জানাবে, অন্যথায় অন্য কোনো প্রস্তাব আমরা মানব না। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত স্বরাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে তাদের মিটিংয়ের ফলাফল জানা যায়নি।
এর আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে পদযাত্রা নিয়ে এসে রাজধানীর জিপিও মোড়ে পুলিশি ব্যারিকেড ভেঙে ফেলে। পরে সচিবালয়ের এক নম্বর গেটে অনশন শুরু করে। নানা স্লোগান, প্ল্যাকার্ড ইত্যাদি হাতে নিয়ে স্লোগানে উত্তাল করে তোলে সচিবালয় এলাকা। এ সময় সচিবালয়ের সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হলেও কোনো রকম সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি সেখানে। অনশনরত অবস্থায় ৩৫ ঘণ্টা পর দুটি দাবির লিখিত অঙ্গীকার পাওয়ায় অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন জবি শিক্ষার্থীরা। তবে তৃতীয় দাবির সুরাহা না পাওয়া পর্যন্ত শাটডাউন কর্মসূচি চলবে বলেও জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। অনশন কর্মসূচির মুখপাত্র এ কে এম রাকিব এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
জবি শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- সেনাবাহিনীর কাছে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ হস্তান্তরের চুক্তি অনতিবিলম্বে স্বাক্ষর করতে হবে। পুরান ঢাকার বাণী ভবন ও ড. হাবিবুর রহমান হলের স্টিল বেইজড ভবনের কাজ দ্রুত শুরু এবং শেষ করতে হবে। যতদিন অবধি আবাসন ব্যবস্থা না হয়, ততদিন পর্যন্ত ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর আবাসন ভাতা নিশ্চিত করতে হবে।
এদিকে নিয়োগবঞ্চিত কারারক্ষীরা বলেন, আমাদের পরিবারের কোনো সদস্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ কিংবা এ ধরনের কোনো কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার নজির নেই। আমাদের শিক্ষাজীবনেও কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই। এমনকি পরিবারের সদস্য কিংবা আমাদের কারো বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধ সংক্রান্ত অভিযোগও নেই। তাহলে কী কারণে আমাদের ৪৮ জনকে নিয়োগবঞ্চিত করা হয়েছে? তারা আরও বলেন, আমরা কারা মহাপরিদর্শক স্যারের সাথেও দেখা করেছি। তিনি আবেদন দেয়ার কথা বলেছেন। আবেদন দিয়েছি। তাতেও কোনো সিদ্ধান্ত জানতে পারছি না। ফলে আজ আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সামনে এসে দাঁড়িয়েছি।’
সিডিসির দাবিতে অবস্থান নেয়া ১৭ নাবিক বলেন, যদি মন্ত্রণালয়ে আমাদের ক্যাডেট সিডিসি দিতে না পারে তাহলে তারা চীনে নাবিক হিসেবে পড়াশুনা করার জন্য কেন স্কলারশিপ দিচ্ছে। তাদের দেয়া স্কলারশিপেই আমরা চীন গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে আসি। এখন কেন আমাদের সিডিসি দেয়া হচ্ছে না। এটা বৈষম্য, আমরা বৈষম্যের শিকার। আমরা অতি দ্রুতই এর সমাধান চাই।