চাল নিয়ে সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। বিষয়টি নজরে আসায় এবার উপজেলা পর্যায়ে ওএমএসের চাল পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। গত ২০ অক্টোবর চালের ওপর বিদ্যমান আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ, রেগুলেটরি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ এবং আগাম কর ৫ শতাংশ সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করেছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এতেও দাম না কমায় গত ৩১ অক্টোবর চাল আমদানিতে শুল্ক পুরোপুরি তুলে নেয় সরকার।
তবে এর কোনো প্রভাবই নেই বাজারে। আমনের ভরা মৌসুমে চালের ভরপুর সরবরাহ রাজধানীর পাইকারি কিংবা খুচরা মুদিখানায়।
তারপরও বিক্রেতারা বলছেন, সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া মিনিকেট ও নাজিরশাইল চালের দাম গত সপ্তাহে কেজিতে বেড়েছে দুই থেকে চার টাকা। গত তিন সপ্তাহের হিসাবে যা ঠেকছে ৮ থেকে ১০ টাকায় এমনটাই জানালেন ক্রেতা নজরুল ইসলাম। গত ১৫-২০ দিন ধরে হু হু করে বাড়ছে চালের দাম। অযৌক্তিক দামের কবল থেকে আমাদের মতো সাধারণ মানুষকে বাঁচাতে সরকারের অবশ্যই করপোরেট গ্রুপ ও মিলারের গুদাম হিসাব খতিয়ে দেখতে হবে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের বরিশাল রাইস এজেন্সির বিক্রেতা জানান, বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট ৮০ টাকা, আটাইশ ৫৮-৬০ টাকা, মোটা স্বর্ণা ৫২-৫৬ টাকা, নাজিরশাইল ৭৬-৮২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি কেজি পোলাও চাল বিক্রি হচ্ছে ১১৬-১১৮ টাকায়। বাজারে এই নাজেহাল অবস্থার কথা শিকার করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারাও।
গত ৯ জানুয়ারি বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশিরউদ্দীন বলেন, রমজান সামনে রেখে সরকার বাজার স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করছে। তবে সরকারের হাতে কোনো আলাদিনের চেরাগ নেই, যার মাধ্যমে রাতারাতি বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। চালের বাজার নিয়ে কিছুটা শঙ্কা রয়েছে। বাজারে অন্য কোনো পণ্যে অসঙ্গতি নেই। চাল মজুতেও ঘাটতি নেই। এর পরেও চাল আমদানিতে ব্যবসায়ীদের উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। আমদানি শুল্ক ৬৩ শতাংশ থেকে তিন শতাংশে নামানো হয়েছে। এছাড়া এপ্রিল মাসে বোরো ধান উঠলে চালের বাজার স্বাভাবিক হবে। এ অবস্থায় বাজার নিয়ন্ত্রণে লোক দেখানো তদারকি ছেড়ে মজুত আইনের কঠোন প্রয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।
অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবির বলেছেন, চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে মজুত আইনের কঠোর প্রয়োগ বর্তমানে সবচেয়ে ভালো উপায়। তা না করে খোঁজ বা ব্যবস্থা নিচ্ছি বলে বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। দুই-একজন অসাধু মিলারকে শাস্তি দেয়া হলে বাকিরা ভয় পাবে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেট ও টাউন হল ঘুরে দেখা যায়, খুচরায় মানভেদে নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। গত সপ্তাহেও এই চালের দাম ছিল ৭৮ থেকে ৮৫ টাকার মধ্যে। অন্যান্য চালের মধ্যে স্বর্ণাট্ট ৫৪ থেকে ৫৫ টাকা, শম্পাট্ট ৭৩ থেকে ৭৪ টাকা এবং মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা দরে। গেল সপ্তাহে এসব চালের দাম ছিল ৩ থেকে ৫ টাকা কম। কারওয়ান বাজারে চাল কিনতে আসা নুরজাহান বেগম বলেন, চালের দাম কেজিতে ৫ টাকার ওপর বেড়েছে। কারণ গত সপ্তাহে আমি প্রতি কেজি নাজিরশাইল কিনেছিলাম ৭৮ টাকায়। আর আজকে সেটা ৮০ টাকা চাচ্ছে।
গতকাল সোমবার খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেছেন, চালের দাম নিয়ন্ত্রণে উপজেলাগুলোতে প্রতি কার্যদিবসে দুই মেট্রিক টন ওএমএসে চাল দেয়া হচ্ছে। প্রয়োজন হলে এটা আরও বাড়ানো হবে। আস্তে আস্তে বাজারে চাপ কমলে বাজারও স্থিতিশীল হয়ে আসবে। ফলে সাধারণ মানুষের জন্য সুবিধা হবে। বরিশাল সার্কিট হাউজে প্রশাসন ও খাদ্য নিয়ন্ত্রকদের সঙ্গে চলতি মৌসুমে আমন সংগ্রহের লক্ষমাত্রা ও অর্জন নিয়ে এক আলোচনা সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
খাদ্য উপদেষ্টা বলেন, আমন বরিশাল অঞ্চলে দেরিতে হয়। তবে আমরা আশা করছি আমনের জন্য যে সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে সে সময়সীমা অনুসারে আমন সংগ্রহ করা সম্ভব হবে। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন দেশ থেকে চাল আমদানি করা হচ্ছে। দেশে চাল আমদানি করা হচ্ছে গুদামে ধরে রাখার জন্য না। লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানোর জন্য যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে সরকারি গুদামে লক্ষমাত্রা বাড়ানোর উদ্যোগ আমরা এখনই নেব না। কারণ সরকারি গুদামে নেয়ার পর আমরা মার্কেটে ছাড়ি। তবে কৃষকরা যদি আমাদের কাছে বিক্রি করতে চায় আমরা অবশ্যই নেব। নিজেদের তরফ থেকে বাড়িয়ে দিব না।