- ১১২ মামলায় ৩৬৬ বিশিষ্ট ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব জব্দ
- পাচারের অর্থ ফেরাতে সহায়তা চেয়ে দুইশ দেশে সরকারের চিঠি
- জব্দ টাকার ৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা সালমান এফ রহমানের
সরকার বদলের পর একে একে বেরিয়ে আসছে আর্থিক খাতের রাঘববোয়ালদের লুটপাটের ভয়াবহ তথ্য। এদের ধরতে রীতিমতো যুদ্ধও ঘোষণা করেছে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকসহ এ খাতের অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো। সমন্বিত কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের অর্থ লুটপাট ও বিদেশে পাচারকারীদের ধরতে কাজ করছে সবকটি সংস্থা। এদের সমন্বয় করছে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর তিন শতাধিক সাবেক মন্ত্রী-এমপি, গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার শীর্ষ পদে থাকা ব্যক্তিসহ দেড় সহস্রাধিক ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে সংস্থাটি। এখনও সন্দেহজনক লেনদেন ও অর্থপাচারের অভিযোগে দৈনিক শতাধিক ব্যাংক হিসাব জব্দ করছে বিএফআইইউ। ৫ আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বিএফআইইউ, এনবিআর এবং দুদকের যৌথ প্রচেষ্টায় ২২ হাজার কোটি নগদ টাকা ও শেয়ার জব্দ করেছে গোয়েন্দা সংস্থাটি।
বিএফআইইউ সূত্রে জানা গেছে, আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক হিসাব ও পুঁজিবাজারের শেয়ারসহ ২২ হাজার কোটি টাকা জব্দ করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। সবশেষ তথ্য অনুযায়ী ১১২টি মামলায় ৩৬৬ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে বিএফআইইউ। এই ব্যক্তিদের ব্যাংক হিসাবে রয়েছে সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকার বেশি।
এছাড়া পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সহযোগিতায় সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকার শেয়ার জব্দ করা হয়েছে। সূত্র জানায়, সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকার শেয়ারের মধ্যে দরবেশ বাবা নামে পরিচিত সালমান এফ রহমানের শেয়ারের দাম ছয় হাজার ৮০০ কোটি টাকার সমপরিমাণ। অনিয়মের ধরন অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপের প্রস্তুতিও চলছে বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাটি। সূত্র আরও জানায়, আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা জোট এগমন্টের সঙ্গে যুক্ত ১৭৭টি দেশ ছাড়াও একাধিক দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি রয়েছে বিএফআইইউর। বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া সম্ভাব্য সব দেশে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক সহায়তায় পাচার হওয়া অর্থ ফেরতে সব রকম প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে পাচারের অর্থ ফেরাতে সহায়তা চেয়ে ইতোমধ্যে প্রায় দুইশর মতো দেশে চিঠিও দিয়েছে সরকার। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাণিজ্যের নামে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আমলে দেশ থেকে প্রতিবছর ১২ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। এসব অর্থ ফেরত আনা সম্ভব।
এদিকে গত ২৯ সেপ্টেম্বর পাচার হওয়া সম্পদ দেশে ফেরত আনা এবং ব্যবস্থাপনার জন্য আন্তঃসংস্থা টাস্কফোর্স পুনর্গঠন করেছে সরকার। এই টাস্কফোর্সের সভাপতি করা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে। আর টাস্কফোর্সকে সাচিবিক সহায়তা দেবে বিএফআইইউ। পাচারের টাকা ফেরাতে প্রধান উপদেষ্টা ও অর্থ উপদেষ্টা কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। এ লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠকের সময় পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে সহায়তা চেয়েছেন তারা। এছাড়া বিএফআইইউ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে অর্থসম্পদ সম্পর্কে জানতে বিভিন্ন দেশে চিঠিও দেয়া শুরু করেছে। সিআইডি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), কাস্টমস, পরিবেশ অধিদপ্তর, বিএসইসি ও দুদক অর্থপাচার প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। বিএফআইইউয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, অর্থপাচার রোধ ও পাচারের অর্থ ফেরাতে আপসহীন নীতিতে হাঁটছে সরকার।
সংস্থাটির কর্মকর্তারা জানান, যেসব হিসাবে অনিয়ম পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধেই মামলা হবে। এরই মধ্যে বড় ধরনের আর্থিক অনিয়মে জড়িত থাকার অভিযোগে গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এসকে সুরকে বিমানবন্দর থেকে আটক করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।