দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে খাদের কিনারায় রয়েছে দেশের ১০টি ব্যাংক। অনিয়মের কারণে ব্যাংকগুলো এতটাই নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে যে, নিরাপত্তা সঞ্চিতিও (প্রভিশন) রাখতে পারছে না। এ তালিকায় নাম লিখিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ব পাঁচটি ও বেসরকারি পাঁচটিসহ ১০ ব্যাংক। এরমধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচ ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ৪২ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা এবং বেসরকারি ব্যাংকে রয়েছে ১৭ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা।
প্রভিশন ঘাটতির পাশাপাশি ব্যাংকগুলোতে বাড়ছে খেলাপি ঋণের অঙ্ক। এই ঋণ কম দেখাতে বিদ্যমান পরিমাণের বাইরে বিরাট অঙ্কের ঋণ রাইট অফ (অবলোপন) করা হচ্ছে, যেটা ব্যালান্স শিটে অন্তর্ভুক্ত থাকছে না। সরকারি ব্যাংকগুলো মধ্যে অগ্রণী ব্যাংকের ৭ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংকের ২৫ হাজার ৪১ কোটি টাকা, বেসিক ব্যাংকের ৫ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংকে ঘাটতি ৪ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের ঘাটতি রয়েছে ১২ কোটি টাকা।
বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংকের সবচেয়ে বেশি ঘাটতি ১৬ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ঘাটতি ৪৪১ কোটি টাকা, ঢাকা ব্যাংকের ২৫৯ কোটি টাকা, আইএফআইসি ব্যাংক ৫৭৪ কোটি টাকা এবং স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ৫৮৮ কোটি টাকা।
প্রভিশন ঘাটতি বলতে বুঝায়, যখন হাতে থাকা নগদ অর্থের চেয়ে কোনো ব্যাংকের আর্থিক দায়বদ্ধতার পরিমাণ বেশি থাকে। এ বিষয়টি সাময়িক, কিছু অন্যান্য পরিস্থিতির সমন্বয়ে তৈরি অথবা ধারাবাহিক হতে পারে, যা প্রতিষ্ঠানটির দুর্বল আর্থিক ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের চিত্র ফুটে উঠে।
ব্যাংক আইন অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোকে পরিচালন মুনাফার শূন্য দশমিক ৫ থেকে ৫ শতাংশ সাধারণ ক্যাটাগরির ঋণের বিপরীতে প্রভিশন হিসেবে রাখতে হয়। আর নিম্নমানের খেলাপি ঋণের বিপরীতে ২০ শতাংশ এবং সন্দেহজনক খেলাপি ঋণের বিপরীতে রাখতে হয় ৫০ শতাংশ। তবে প্রতিটি ব্যাংকের জন্য মন্দ বা লোকসান ক্যাটাগরির খেলাপি ঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ বা শতভাগ প্রভিশন আলাদা করে রাখার বিধান রয়েছে।
প্রভিশন ঘাটতি পূরণে আপনার পর্ষদ কী উদ্যোগ নিয়েছে জানতে চাইলে রাষ্ট্রমালিকানাধীন অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ বলেন, গত ১৫ বছরে ব্যাংকগুলোকে সঠিকভাবে তদারকি করেননি। যার ফলে খেলাপি ঋণ অনেক বেড়েছে। আন ক্লাসিফাইড করার জন্য আমি সেপ্টেম্বরের ৮ তারিখে দায়িত্ব নেয়ার পর একটি ম্যাসেজ দিয়েছিলাম। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম নীতি অনুযায়ী মিনিমাম ডাউন প্রেমেন্ট নিয়ে লোনগুলোকে যতটা পারা যায় আনক্লাসিফাইড করতে হবে, রিশিডিউল করতে হবে। ক্যাশ ফ্লো ঠিক রাখতে হবে। আমাদের অনেক কাস্টমার এরই মধ্যে ৫০০ কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়েছেন। এগুলো ক্লাসিফাইড করা হয়েছে। ২০১০ সালে ক্যাপিটাল ছিল ১২ এর কাছাকাছি সেটা এখন ৫ এর নিচে নেমেছে। এটা ডেফারেলের মাধ্যমে করা হয়েছে। তবে এটা আসল চিত্র নয়। প্রভিশন ঘাটতি পূরণে করতে হলে আমাদের রিশিডিউল করতেই হবে।
খেলাপিদের বিষয়ে কী ব্যবস্থা নিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঋণ খেলাপিদের বিষয়ে আমরা আগামী মার্চ মাস নাগদ অ্যাকশনে যাবে। কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।