নবযুগ সূচনার প্রতিশ্রুতি ট্রাম্পের

আমার সংবাদ ডেস্ক প্রকাশিত: জানুয়ারি ২১, ২০২৫, ১২:০৪ এএম
নবযুগ সূচনার প্রতিশ্রুতি ট্রাম্পের

ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘আমেরিকার পতন’ বন্ধ করার এবং দেশকে পুনর্নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এক উদ্দীপনাপূর্ণ সমাবেশে তিনি ওয়োক মতাদর্শ ও অভিবাসনের ওপর কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার অঙ্গীকার করেন। ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, ৭৮ বছর বয়সি এই রিপাবলিকান নেতা গত রোববার ওয়াশিংটনে একটি উচ্ছ্বসিত ক্যাম্পেইনধর্মী সমাবেশে সমর্থকদের বলেন, ‘আগামীকাল দুপুরে আমেরিকার দীর্ঘ চার বছরের পতনের  যবনিকাপাত হবে এবং আমরা আমেরিকার শক্তি ও সমৃদ্ধির এক নতুন যুগ শুরু করব।’ তিনি বলেন, ‘আমি ঐতিহাসিক গতিতে এবং শক্তি দিয়ে কাজ করব এবং আমাদের দেশের প্রতিটি সংকট সমাধান করব।’

ইলন মাস্কের উপস্থিতি : প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক এ সমাবেশে ট্রাম্পের সঙ্গে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। তিনি ট্রাম্প প্রশাসনের ব্যয় হ্রাস কর্মসূচির নেতৃত্ব দেবেন। মাস্ক বলেন, ‘আমরা আমেরিকাকে শতাব্দীর জন্য শক্তিশালী করে তুলব।’ ট্রাম্প তার বক্তব্য শেষে জনপ্রিয় গানের দল ভিলেজ পিপলের সঙ্গে নাচেন। তারা ১৯৭০-এর দশকের বিখ্যাত গান ‘ওয়াই.এম.সি.এ.’ পরিবেশন করেন, যা ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রচারণার অঘোষিত সংগীতে পরিণত হয়েছিল।

অভিবাসন এবং নিরাপত্তা নিয়ে বার্তা : ট্রাম্পের ঘণ্টাব্যাপী বক্তব্যে অভিবাসন ছিল কেন্দ্রীয় বিষয়। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের সীমান্তে অনুপ্রবেশ বন্ধ করব।’ তিনি দায়িত্ব গ্রহণের কয়েক দিনের মধ্যে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরুরও প্রতিশ্রুতি দেন।

প্রথম দিন থেকেই নির্বাহী আদেশ : ট্রাম্প তার দায়িত্বের প্রথম দিন থেকেই বেশ কয়েকটি নির্বাহী আদেশ জারির ঘোষণা দেন। এর মধ্যে রয়েছে স্কুল থেকে ট্রান্সজেন্ডার ইস্যু এবং সমালোচনামূলক

জাতিতত্ত্ব নিষিদ্ধ করা এবং নারীদের ক্রীড়ায় ট্রান্সজেন্ডার অ্যাথলেটদের অংশগ্রহণ বন্ধ করা।

এছাড়া ট্রাম্প জন এফ কেনেডি, ববি কেনেডি ও মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের হত্যা সংক্রান্ত নথি প্রকাশ করারও ঘোষণা দেন।

ইতিহাসের অংশ হওয়ার আকাঙ্ক্ষা : তুষারবর্ণ আবহাওয়া সত্ত্বেও সমর্থকরা দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করেন। কানেকটিকাটের ২১ বছর বয়সি ছাত্র অ্যালান ম্যাকনিলি বলেন, ‘আমি আমার চোখের সামনে ইতিহাসের উন্মেষ দেখতে চেয়েছিলাম।’ এর আগে, ট্রাম্প আরলিংটন ন্যাশনাল সিমেট্রি সফর করেন। সেখানে আমেরিকার যোদ্ধাদের কবরস্থান রয়েছে। তিনি অজ্ঞাতনামা সৈনিকের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট-নির্বাচিত জেডি. ভ্যান্স এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন।

উপস্থাপনা পরিবর্তন : তুষারপাত এবং হিমশীতল আবহাওয়ার কারণে সোমবার ক্যাপিটল ভবনের বাইরের অনুষ্ঠানের পরিবর্তে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের স্থান রোটুন্ডায় স্থানান্তর করা হয়েছে। শেষবার এই স্থানে শপথ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ৪০ বছর আগে, রোনাল্ড রিগ্যানের সময়।

সোনালি যুগের ঘোষণা : ট্রাম্পের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেন, ‘আপনি তার উদ্বোধনী ভাষণে শুনবেন যে আমরা আমেরিকার একটি সোনালী যুগে প্রবেশ করছি।’

বিদায়ী প্রেসিডেন্টের আহ্বান : বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত রোববার সাউথ ক্যারোলিনায় মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র দিবস উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। তিনি আমেরিকানদের প্রতি ‘ভবিষ্যতের প্রতি আস্থা’ রাখার আহ্বান জানান এবং বলেন, ‘আমি এখনও আছি।’

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রভাব : ট্রাম্প তার প্রশাসনের আগে থেকেই আন্তর্জাতিক ইস্যুতে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছেন। টিকটকের ওপর নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করে তিনি একটি চুক্তি সম্পাদনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এছাড়া, গাজায় ইসরাইলি জিম্মি মুক্তি ও যুদ্ধবিরতিতে বিদায়ী বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে ট্রাম্প ও তার দল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

‘আমেরিকার পতন’ থামিয়ে নবযুগ সূচনার প্রতিশ্রুতি : এক উচ্ছ্বসিত উদ্বোধনী সমাবেশের আগে রোববার ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘আমেরিকার পতন’ থামাতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার একগুচ্ছ পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছেন, তিনি ‘উদারনীতি’ এবং ‘অভিবাসনের’ বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবেন। ওয়াশিংটন থেকে এএফপি এ খবর জানায়।

ওয়াশিংটনে এক তুমুল প্রচারণা-ধাঁচের সমাবেশে, হোয়াইট হাউসে তার প্রত্যাবর্তনের প্রথম দিন থেকেই ‘ঐতিহাসিক দ্রুত গতিতে’ কাজ করবেন বলে ৭৮ বছর বয়সি এই রিপাবলিকান সমর্থকদের কাছে তার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।

জনাকীর্ণ ক্রীড়াঙ্গনে ট্রাম্প বলেন, ‘আগামীকাল দুপুরে, আমেরিকার পতনের দীর্ঘ চার বছরের পর্দা ছিন্ন হবে এবং আমরা আমেরিকার শক্তি ও সমৃদ্ধির একটি নতুন দিন শুরু করব। আমি ঐতিহাসিক গতি ও শক্তির সাথে কাজ করব এবং আমাদের দেশের মুখোমুখি প্রতিটি সংকট সমাধান করব।’ প্রযুক্তি টাইকুন বিলিওনেয়ার ইলন মাস্ক ট্রাম্পের সাথে মঞ্চে যোগ দেন। মাস্ক তার প্রশাসনে একটি বড় খরচ কমানোর অভিযানের নেতৃত্ব দেবেন। আমেরিকাকে শতাব্দী ধরে শক্তিশালী করার অঙ্গীকার করেন তিনি। সমাবেশের শেষে ট্রাম্প ডিস্কো ব্যান্ড ভিলেজ পিপলের সাথে নাচেন। সেখানে ১৯৭০-এর দশকের হিট ‘ওয়াই.এম.সি.এ.’ পরিবেশিত হয়। যেটি তার নির্বাচনি প্রচারণার অনানুষ্ঠানিক সঙ্গীত হয়ে ওঠে।

ট্রাম্পের ঘণ্টাব্যাপী বক্তৃতার বেশিরভাগ অংশই অভিবাসনের ওপর কেন্দ্রীভূত ছিল। যা নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের বিরুদ্ধে তার অসাধারণ বিজয়কে উৎসাহিত করার এমন বার্তাকে তুলে ধরেন। দায়িত্ব গ্রহণের কয়েক দিনের মধ্যেই অ-নথিভুক্ত অভিবাসীদের লক্ষ্য করে অভিযান চালানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প। 

তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের সীমান্তে আক্রমণ বন্ধ করতে যাচ্ছি।’ তবে তিনি ওভাল অফিসে তার প্রথম দিন থেকেই ‘অনেক’ নির্বাহী আদেশের প্রতিশ্রুতি দেন, যার মধ্যে রয়েছে স্কুল থেকে ‘ট্রান্সজেন্ডার উন্মাদনা’ এবং সমালোচনামূলক জাতিতত্ত্ব নিষিদ্ধ করা এবং ট্রান্স অ্যাথলিট নারীদের খেলাধুলা থেকে দূরে রাখা। ট্রাম্প সাবেক প্রেসিডেন্ট জন এফ. কেনেডি, তার ভাই ববি কেনেডি এবং নাগরিক অধিকার নেতা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের হত্যাকাণ্ডের ফাইল প্রকাশের প্রতিশ্রুতিও পুনর্ব্যক্ত করেন। তুষারপাতের পরিস্থিতি সত্ত্বেও মাঠের বাইরে ট্রাম্প সমর্থকদের দীর্ঘ লাইন তৈরি হয়। ট্রাম্প অজ্ঞাত পরিচয় সৈনিক সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন, তারপর ভাইস প্রেসিডেন্ট-নির্বাচিত জে.ডি. ভ্যান্সও সেখানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। 

ট্রাম্প গতকাল মার্কিন ক্যাপিটলে তার শপথ গ্রহণ দেখার জন্য বিপুল সংখ্যক মানুষ সমবেত হবে বলে আশা করলেও আবহাওয়া বিভাগের তুষারপাতের পূর্বাভাসের কারণে আয়োজকরা অনুষ্ঠানটি হলরুমের ভিতরে সরিয়ে নিয়েছেন। ক্যাপিটলের সিঁড়িতে শপথ নেয়ার পরিবর্তে, ট্রাম্প এখন রোটুন্ডার বিশাল গম্বুজের নিচে শপথ নেবেন। ৪০ বছর আগে রোনাল্ড রিগ্যানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য স্থানটি ব্যবহূত হয়।