- শতাংশ হারে নেন কমিশন না দিলে হয়রানি-দুর্ব্যবহার
- ব্যবস্থা গ্রহণে ডিসি অফিসে চিঠি দেয়া হচ্ছে : ইউএনও
- লিখিত ব্যাখ্যা চাইবেন নির্বাহী প্রকৌশলী
অনিয়ম-দুর্নীতি আর স্বেচ্ছাচারিতায় মজেছেন নওগাঁর মান্দা উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী সুমন মাহমুদ ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী তারিকুল ইসলাম। বর্তমান পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটেও থেমে নেই তাদের দৌরাত্ম্য। সম্প্রতি সুনির্দিষ্ট ১০টি বিষয় উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, সচিব, এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী, নওগাঁর নির্বাহী প্রকৌশলী ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (ইউএনও) সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছেন উপজেলার ১০ নং নুরুল্লাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ সব সদস্যরা।
শুধু অনিয়ম-দুর্নীতিই নয়, মান্দা উপজেলায় যোগদানের অল্প সময়ের মধ্যেই দুর্ব্যবহার আর স্বেচ্ছাচারিতারও মাত্রা ছাড়িয়েছেন তারা। তাদের এহেন কর্মকাণ্ডে আর্থিক-মানসিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন উপজেলায় চলমান প্রকল্পের সভাপতিরাও।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নুরুল্লাবাদ ইউনিয়নের অনুন্নত ও উন্নত হাট-বাজারের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজসহ বার্ষিক উন্নয়ন খাতের (এডিপি) প্রকল্প কাজের জন্য পরিষদের নীতিমালা অনুযায়ী প্রাক্কলন কাজ বাস্তবায়ন করতে গেলে তাদের উভয়েরই দুর্ব্যবহারের শিকার হতে হয়। এতে পরিষদের উন্নয়নকাজ বাস্তবায়নে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। প্রতিনিয়তই হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে তাদের। শুধু তাই নয়, স্থানীয় সরকারের প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়েও বিপাকে পড়তে হচ্ছে তাদের। বিভিন্ন রকম ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রকল্পের সভাপতির কাছ থেকে দুই থেকে তিন হাজার টাকা করে আদায় করছেন তারা। প্রকল্পের চূড়ান্ত বিল প্রস্তুত ও প্রদানের সময়ও উপজেলা প্রকৌশলীর জন্য শতকরা ১৫ শতাংশ, উপ-সহকারী প্রকৌশলীর জন্য শতকরা ১০ শতাংশ হারে টাকা কর্তন করা হয়। এছাড়াও প্রকল্পের সভাপতিদের কারিগরি সহায়তা না করে উল্টো কাজের ভুল ধরে অতিরিক্ত কাজ করিয়ে নেয়া হয়।
সর্বশেষ চূড়ান্ত বিল প্রস্তুতের সময় ফাইলে সই করতে গেলে বিভিন্নভাবে হয়রানি করে নিট বিল থেকে অতিরিক্ত টাকা কর্তন করা হয়। প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষে কাজের ত্রুটি ধরার কথা বলে নির্মিত কাজ ভেঙে ফেলার হুমকি দিয়েও অতিরিক্ত টাকা আদায় করেন তারা। একইভাবে উপজেলাজুড়েই স্থানীয় সরকারের বাস্তবায়িত সব প্রকল্প কাজে ভুল ও অনিয়ম ধরেন।
অভিযোগকারীরা বলছেন, ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে উপজেলায় চলমান ও বাস্তবায়িত সব প্রকল্পের সভাপতিকেই বিভিন্নভাবে হয়রানির মাধ্যমে জিম্মি করছেন তারা। বাগবিতণ্ডায় জড়ালে বাড়িয়ে দেন হয়রানির মাত্রা। যেখানে হয়রানিমুক্ত হওয়ার অন্যতম মাধ্যম অতিরিক্ত টাকা। তাদের অনিয়ম-স্বেচ্ছাচারিতা ও বৈষম্যের শিকার হয়ে সব প্রকল্পের সভাপতিরা এখন জিম্মি ও অসহায়।
নুরুল্লাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জায়দুর রহমান বলেন, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়া হয়েছে। আমরা তাদের কারণে কাজগুলো সঠিকভাবে করতে পারছি না। নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে আমাদের। বিষয়টির সুরাহা চাই আমরা। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী সুমন মাহমুদ বলেন, তিনি এখানে এসেছেন মাত্র দুই মাস হলো। এরই মধ্যে অভিযোগের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানের সঙ্গেও কথা বলেছেন তিনি। চেয়ারম্যান তাকে বলেছেন, তিনি কোনো অভিযোগ করেননি। বরং দুর্ব্যবহারের কথা শুনে চেয়ারম্যান নিজেই আশ্চর্য হয়েছেন। চেয়ারম্যান বলেছেন তার সাথে কোনো বিরোধ নেই। প্রকৌশলী আরও বলেন, অভিযোগটি মিথ্যা। তিনি এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নন। এছাড়া মেম্বারদের সঙ্গে উপজেলা প্রকৌশলীদের কাজও থাকে না।
এ বিষয়ে মান্দা উপজেলার নির্বাহী কর্মকতা (ইউএনও) শাহ আলম মিয়া বলেন, দুর্ব্যবহার, কমিশন আদায়, হয়রানির একটি অভিযোগ আমরা পেয়েছি। যে অভিযোগের পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকের দপ্তরে একটি চিঠি দিয়েছি।
জানতে চাইলে নওগাঁ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদ বলেন, বিষয়টি আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রকৌশলীর কাছে এ বিষয়ে লিখিত ব্যাখ্যা চাইব। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথেও আলোচনা করে এ বিষয়ে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।