বিশ্ব ইজতেমার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে

গাজীপুর প্রতিনিধি প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৬, ২০২৫, ১১:৫৯ পিএম
বিশ্ব ইজতেমার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে

আগামী ৩১ জানুয়ারি থেকে টঙ্গীতে অনুষ্ঠিতব্য দুই পর্বের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হবে। আর এ বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে বিশাল ময়দানে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। 

ইতোমধ্যে ইজতেমা ময়দানের যাবতীয় প্রস্তুতি কাজ সম্পন্ন করতে চটের ছাউনি দেয়া ও প্যান্ডেল নির্মাণ ছাড়াও বিদেশি মেহমানদের আবাসস্থলে টিনের ছাউনিযুক্ত পৃথক কামরা তৈরিসহ আনুষাঙ্গিক কাজ চলছে পুরোদমে। সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বাঁশের খুঁটি স্থাপন এবং তাতে ত্রিপল টানানোসহ নানা কার্যক্রম চালাচ্ছেন বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ছাড়াও তাবলীগ জামাতের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। 

জানা গেছে, তাবলীগ জামাতের বিবদমান দুপক্ষের বিরোধের কারণে এবারও বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে পৃথকভাবে। প্রথম পর্বে ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা ইজতেমায় অংশগ্রহণ করবেন। চারদিন বিরতির পর ৭ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইজতেমা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা মাওলানা সাদ কান্ধলভী অনুসারীদের। তবে গত ১৭ ডিসেম্বর মধ্যরাতে ইজতেমা মাঠে জোড় ইজতেমা পালনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সংঘর্ষ ও নিহতের ঘটনায় দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমার সময়সূচিতে পরিবর্তন আসতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সে হিসেবে এখন যারা ই্জতেমার মাঠে কাজ করছেন, তারা সবাই মাওলানা জুবায়েরের অনুসারি। 

প্রথম পর্বের ইজতেমার আয়োজকরা জানান, ৩১ জানুয়ারি ইজতেমা উপলক্ষে প্রায় ২০-২৫ দিন আগ থেকেই পুরোদমে শুরু হয় ইজতেমার মাঠ প্রস্তুতির কাজ। প্রতিদিন রাজধানী ঢাকা, উত্তরা মডেল টাউন, গাজীপুর ও আশপাশের জেলার তাবলীগ জামাতের সাথীরা স্বেচ্ছাশ্রমে মাঠ প্রস্তুত করছেন। ইতোমধ্যে মাঠ প্রস্তুতির কাজ প্রায় ৯০ ভাগ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ আগামী  দু-তিন দিনের মধ্যে সম্পন্ন হবে। প্রথম পর্বের গণমাধ্যম সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান বলেন, ইজতেমা মাঠের কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। এখন বৈদ্যুতিক বাতি, মাইক স্থাপনসহ কিছু কাজ বাকি রয়েছে। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের আগেই যাবতীয় কাজ শেষ হবে। এবার অনুকূল আবহাওয়া বিদ্যমান থাকলে দেশ-বিদেশের ধর্মপ্রাণ মুসল্লির সংখ্যা বেশি হবে বলে ধারণা করছেন ইজতেমা আয়োজক সংশ্লিষ্টরা। বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে গাজীপুর জেলা প্রশাসন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। 

এছাড়া গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে প্রতিদিন বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হবে। প্রায় আট হাজার অস্থায়ী টয়লেটের ব্যবস্থা রয়েছে। ময়দানের চাহিদা মোতাবেক ব্লিচিং পাউডার সরবরাহ ও ফগার মেশিনের মশক নিধনেরও ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে।

ইজতেমা ময়দানের বিদেশি নিবাসের পূর্ব পাশে তৈরি করা হচ্ছে বয়ানের মূল মঞ্চ। শুক্রবার মঞ্চের কাছে গিয়ে দেখা গেছে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বেশ কিছু মুসল্লি ওই মঞ্চটি তৈরিতে ব্যস্ত রয়েছেন। সুউচ্চ এ মঞ্চটিতে দেশ-বিদেশের বরেণ্য আলেমরা বয়ান করবেন। আর এ বয়ান বিভিন্ন ভাষায় তরজমা করে প্রচার করা হবে এ মঞ্চ থেকেই। মঞ্চের চার পাশে লাগানো হচ্ছে সিসি ক্যামেরা।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান বলেন, এবারের বিশ্ব ইজতেমার সার্বিক নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন থাকবে। সিসি টিভি ক্যামেরা, ওয়াচ টাওয়ার ও রুফটপ থেকে পুরো ইজতেমা ময়দানের নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করা হবে। এছাড়া স্পেশালাইডজ টিমসহ প্রতিটি খিত্তায় সাদা পোশাকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করবেন। অগ্নি নির্বাপনের জন্য প্রতি খিত্তায় অগ্নিনির্বাপন যন্ত্র রাখা হবে। তুরাগে নৌ-টহলও থাকবে। 

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফিন জানান, ইজতেমা সফল করতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে।