- চার বছর ধরেই চলছে আন্দোলন, প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত চলবে কর্মবিরতি
- বিআরটিসি বাসের মাধ্যমে যাত্রী পরিবহন বিভিন্ন স্টেশনে ভাঙচুর
আশা করছি তারা আলোচনায় বসবেন— রেল সচিব
সারা দেশে রেলওয়ের রানিং স্টাফদের কর্মবিরতিতে বন্ধ রয়েছে রেল যোগাযোগ। গত সোমবার মধ্যরাত থেকে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ট্রেন যাত্রীরা। সমস্যা সমাধানে গতকাল মঙ্গলবার সকালে কমলাপুরে যান রেল উপদেষ্টা। সেখানে কর্মবিরতিতে থাকা রেলের রানিং স্টাফদের সাথে কথাও বলেন তিনি। যদিও কাজ হয়নি। স্টাফরা বলছেন, আলোচনার পথ খোলা আছে।
তবে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি প্রত্যাহার হবে না। এমতাবস্থায় কমলাপুর রেলস্টেশনের ভিআইপি কক্ষে বৈঠকে বসেন রেলসচিব, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস, রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা। সেখানে রানিং স্টাফদের রেজিস্টার্ড সংগঠনের নেতারাও যান। তবে তারা তাদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে শিমুল বিশ্বাসকে জানিয়ে ফের বেরিয়ে যান। এরপর দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বৈঠক করে সমাধানে আসতে না পেরে রেল উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করতে রেলভবনে যান। গতকাল রাত ৯টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত রেলভবন থেকেও আসেনি কোনো সিদ্ধান্ত।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের ঢাকা মহানগরীর সভাপতি শরীফুল ইসলাম আমার সংবাদকে বলেন, কোনো কথাবার্তা ছাড়াই ১৬২ বছরের পুরনো ভাতা গত চার বছর আগে প্রজ্ঞাপন করে বাতিল করে অর্থ মন্ত্রণালয়। চার বছর ধরে রেল ও অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে এই ভাতা পুনরায় চালুর দাবি জানিয়ে আসছি। গত এক মাস আগেও আমাদের বলা হয়েছিল, এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধান করা হবে। আমরা এক মাস সময়ও দিয়েছি। কিন্তু এক মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও সমাধান না পেয়ে গত সোমবার আমরা আবারও অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি পালনের সিদ্ধান্ত নিই। তিনি আরও বলেন, আমাদের দাবি-দাওয়া বৈঠকে উপস্থিত শিমুল বিশ্বাসসহ অন্যদের জানিয়েছি। তবে আমরা বৈঠকে অংশ নিইনি। সেখানে রেলসচিব, অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরাও ছিলেন। পরে রেলভবনে বৈঠকে বসেছেন বলে শুনেছি। তবে রাত ৯টা পর্যন্ত তারাও কোনো সিদ্ধান্তের খবর পাননি।
এদিকে সাব-লোকো মাস্টার মজিবুর রহমান আমার সংবাদকে বলেন, রেল চলে ব্রিটিশ আইনে। এর বাইরে এক চুলও যাওয়ার সুযোগ নেই। যদি একটি দুর্ঘটনাও ঘটে সেটিও আইনের আওতায় থাকবে। ব্রিটিশ আইন মেনেই যেখানে রেল পরিচালিত হচ্ছে, আমাদের দাবিগুলো তো ওই আইনের মধ্যেই আছে। সবকিছুই ওই আইনেই চলে। শুধু আমাদের সুযোগ-সুবিধা দিতে গেলেই অর্থ মন্ত্রণালয় ওই আইনের কথা ভুলে যায়। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ২০২১ সালে অর্থ মন্ত্রণালয় কেন হঠাৎ প্রজ্ঞাপন দিয়ে এসব বন্ধ করল। এর বিরুদ্ধেই আমাদের কর্মসূচি। এসব সুযোগ-সুবিধা ফের প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে নিশ্চিত না করলে আমরাও কর্মসূচি প্রত্যাহার করব না।
এদিকে, সারা দেশে রেল চলাচল বন্ধ থাকায় বড় ধরনের ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। অনেকেই বিভিন্ন স্টেশনে আসেন। কিন্তু নির্ধারিত গন্তব্যে ট্রেন না চলায় ব্যাপক সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে তাদের। রেল চলাচল বন্ধ থাকায় দেশের বিভিন্ন স্টেশনেও ভাঙচুর চালান বিক্ষুব্ধ যাত্রীরা। অনেকেই আবার বাসে করে গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে। এতে করে বেশ ভোগান্তিতে পড়েছেন নারী, শিশু, রোগী ও বয়স্ক যাত্রীরা।
কমলাপুর স্টেশন থেকে বিআরটিসি বাসের মাধ্যমে টিকিট কাটা যাত্রীদের বিভিন্ন গন্তব্যে পাঠানো হয়। সারা দেশেই একইভাবে রেলের যাত্রীদের পরিবহন করা হয় গতকাল। তবে এক্ষেত্রে যাত্রীরা অভিযোগ করে বলেন, টিকিট রিফান্ড করতে গেলে ৭৫ শতাংশ মূল্য কেটে রাখছে রেল কর্তৃপক্ষ।
এদিকে রেলসচিব ফাহিমুল ইসলাম বলেছেন, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সরাসরি কোনো যোগাযোগ না হলেও ইনডিরেক্টলি যোগাযোগ হচ্ছে। আমরা অপেক্ষা করছি, আশা করছি তারা আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন। তিনি বলেন, আমাদের আলোচনার দ্বার খোলা আছে। তারা এলে তাদের সঙ্গে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে যেকোনো সময় ট্রেন চলাচল শুরু হতে পারে।
কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে অচলাবস্থার বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, অর্থ বিভাগের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। এরকম একটা মোমেন্টে তারা তো কিছু বলতে পারছে না। এ বিষয়ে আলোচনার সুযোগ আছে। উপদেষ্টা স্যার বলেছেন আলোচনা করবেন, আমরা অর্থ বিভাগে যাব।
রানিং স্টাফদের বিষয়ে শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না জানতে চাইলে সচিব বলেন, শাস্তিমূলক ব্যবস্থার বিষয়ে আমি এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। আমরা বলেছি আলোচনার দ্বার খুলে রেখেছি। সরকার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কী করবে সেটা বলতে পারি না। তারা যদি না আসে তাহলে তো আমাদের হাতে নাই ব্যাপারটা। সবসময় সব ব্যাপার কিন্তু রেল মন্ত্রণালয়ের হাতে থাকে না।
রানিং স্টাফদের দাবি যৌক্তিক কি না এ বিষয়ে ফাহিমুল ইসলাম বলেন, তাদের দাবি যৌক্তিক মনে করেই আলোচনা করেছি। এটার জন্য আমরা কিছুটা অর্জন করেছি। ওরা চার বছর ধরে আন্দোলন করছে। আমরা একটা অর্জন নিয়ে এসেছি যৌক্তিক মনে করেই।
উল্লেখ্য, মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন এবং আনুতোষিক সুবিধা দেয়ার বিষয়ে জটিলতা নিরসন না হওয়ায় কর্মবিরতিতে গেছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের রানিং স্টাফরা। কর্মবিরতির অংশ হিসেবে সোমবার দিবাগত রাত ১২টার পর শিডিউলে থাকা ট্রেনগুলোতে ওঠেননি রানিং স্টাফরা। ফলে প্রারম্ভিক স্টেশন থেকে কোনো ট্রেন ছেড়ে যায়নি। যে কারণে সারা দেশে বন্ধ রয়েছে ট্রেন চলাচল। কর্মবিরতিতে যাওয়া রানিং স্টাফের মধ্যে রয়েছেন ট্রেন চালক, গার্ড ও টিকিট চেকার পদধারীরা।