১৫ বছরেও মামলা নিষ্পত্তি করা যাচ্ছে না
৮০ শতাংশ মামলা ভূমিসংক্রান্ত
বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে দিন দিন মামলার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তবে অধিকাংশ মামলাই ভূমিসংক্রান্ত। তাছাড়া ক্যাটারিং ও নিয়োগ নিয়েও মামলা রয়েছে। ওই মামলার সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। গত ১৫ বছর ধরে মামলা চললেও নানা জটিলতায় নিষ্পত্তি করা যাচ্ছে না। আর কবে নাগাদ ওসব মামলা নিষ্পত্তি হবে তাও কেউ বলতে পারছে না। উল্টো দিন দিন মামলার সংখ্যা বাড়ছে। ওসব মামলা নিয়ে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে রেলের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি। রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ট্রেনে ক্যাটারিং সার্ভিস (খাবার সরবরাহ) রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পরিচালনার জন্য ২০২৩ সালে ঠিকাদার নিয়োগ ও নবায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়। তাতে ৪৫ প্রতিষ্ঠান আবেদন ফরম সংগ্রহ করেছিল। এর মধ্যে ৪২ প্রতিষ্ঠান আবেদন জমা দেয়। তারা প্রত্যেকে রেলওয়ের নিয়ম অনুযায়ী ৫০ হাজার টাকা অফেরতযোগ্য অর্থ দিয়েছিল। যাচাই-বাছাই শেষে ৩৭ প্রতিষ্ঠানকে ক্যাটারিং সার্ভিস পরিচালনার জন্য যোগ্য হিসেবে বিবেচিত করা হয়। তবে আবেদনকারীদের মধ্যে পাঁচ প্রতিষ্ঠান বাদ পড়ে। এর মধ্যে এক প্রতিষ্ঠান হাইকোর্টে মামলা করে। ওই মামলাটি এখনো চলমান। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় ক্যাটারিং সার্ভিস পরিচালনায় নতুন ঠিকাদার নিয়োগে টেন্ডার ডাকা যাচ্ছে না।
সূত্র জানায়, রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের আইন শাখা নানা কারণে দায়ের হওয়া এক হাজার ৪৩৩টি মামলায় লড়ছে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ মামলা ভূমিসংক্রান্ত। তার মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ৬০টি, হাইকোর্টে ৫৩২টি, জজ কোর্টে ৭৬৭টি এবং প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে ৭৪টি মামলা রয়েছে। তার মধ্যে ঢাকার জজ আদালতে ২৫৪টি, নরসিংদী জজ আদালতে পাঁচটি, নারায়ণগঞ্জ জজ আদালতে ৫১টি, গাজীপুর জজ আদালতে ছয়টি, চট্টগ্রাম জজ আদালতে ৯২টি, সাতকানিয়া জজ আদালতে ১৭টি, পটিয়া জজ আদালতে ২৭টি, নোয়াখালী জজ আদালতে ২৩টি, কুমিল্লা জজ আদালতে ৩০টি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জজ আদালতে ৫৯টি, ফেনী জজ আদালতে আটটি, চাঁদপুর জজ আদালতে ১৮টি, ময়মনসিংহ জজ আদালতে নয়টি, কিশোরগঞ্জ জজ আদালতে পাঁচটি, নেত্রকোনা জজ আদালতে চারটি, সিলেট জজ আদালতে ৫৮টি, বাজিতপুর জজ আদালতে সাতটি, জামালপুর জজ আদালতে নয়টি, টাঙ্গাইল জজ আদালতে একটি, সরিষাবাড়ি জজ আদালতে দুটি। পাশাপাশি মাসে ৮ থেকে ১০টি মামলা দায়ের হলেও মাত্র এক-দুটি নিষ্পতি হচ্ছে। তবে যে হারে মামলা হচ্ছে সে হারে নিষ্পত্তি হয় না। কোনো কোনো মাসে দেখা যায় একটিও নিষ্পত্তি হয় না। যে কারণে মামলা বেড়ে যাচ্ছে।
এদিকে মামলা নিষ্পত্তি বিলম্বের কারণ হিসেবে রেলের আইন শাখা সংশ্লিষ্টদের মতে, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের আইন শাখায় জনবল সংকটে ভুগছে। তাছাড়া মামলা পরিচালনায় অর্থ বরাদ্দও খুবই কম। যে কারণে মামলাগুলো দীর্ঘায়িত হচ্ছে। মামলা পরিচালনার জন্য চট্টগ্রামে তিনজন এবং অন্যান্য জেলায় একজন করে আইনজীবী রয়েছে। কিন্তু কিছুইতেই মামলার জট কমছে না। আর কেউ যদি উচ্চ আদালতে মামলা করে সেটির নোটিশ হাতে পেতে ছয় মাস থেকে এক বছর লেগে যায়। নোটিশ পাওয়ার পর ওই মামলার জবাব দেয়া হয়। আবার কোনো কোনো বাদী আদালত থেকে এক-দুবার সময় নিয়ে থাকে। রেলও সময় নিয়ে থাকে।
আবার দেখা যায় অনেক ধার্য তারিখে আদালত বসে না। ওসব কারণে মামলাগুলো দীর্ঘায়িত হচ্ছে। অন্যদিকে এ বিষয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মামুন মিয়া জানান, মামলার কারণে নতুন করে ক্যাটারিং সার্ভিস নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছে না। মামলা শেষ হলেই দরপত্র আহ্বান করা যাবে।