ডিসেম্বরেই সংসদ নির্বাচন

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৫, ১২:০৩ এএম
ডিসেম্বরেই সংসদ নির্বাচন
  • দ্রুত সময়ে নির্বাচন বাস্তবায়নে সরকারের আশ্বাস

  • চলমান ঘটনাগুলোর দায় সরকার এড়াতে পারে না

  • নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে কাজ করছে সরকার

সরকারকে দ্রুত নির্বাচন দেয়ার কথা বলেছি—মির্জা ফখরুল

ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে—নির্বাচন কমিশনার

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী সরকার পতন-উত্তর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ওপর জোর দিচ্ছে বিএনপিসহ মিত্ররা। অতি প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচনের বিষয়ে এখন একাট্টা দলগুলো। 

এরই ধারাবাহিকতায় জুলাই-আগস্টের মধ্যে নির্বাচনের তাগিদ দিয়েছে বিএনপি। বিএনপি নেতাদের মতে, জাতীয় নির্বাচনের জন্য যে সংস্কার প্রয়োজন, তা দুই থেকে তিন মাসেই শেষ করা সম্ভব। প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে এ বছরের মাঝামাঝিতেই নির্বাচন দেয়া উচিত। 

তারা মনে করেন, সরকার দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণার লক্ষ্যে আয়োজন করতে পারে একটি জাতীয় সংলাপের। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত সব রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে দ্রুত সংলাপে বসে নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা যেতে পারে। অন্যথায় সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দূরত্ব বাড়বে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ নানা অস্থিরতাও নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হবে। 

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা আগে থেকেই বলছি এটা অন্তর্বর্তী সরকার। দ্রুত নির্বাচনের জন্য আমরা আবারও তাদের তাগাদা দিয়েছি। গতকাল সোমবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, এই যে ঘটনাগুলো ঘটেছে এর দায় সরকার এড়াতে পারে না। সরকারি বিভিন্ন বাহিনীগুলোর সামনেই এই ঘটনা একটার পর একটা ঘটছে। আমরা মনে করি, এই কারণে দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিপন্ন হয়েছে এবং ফ্যাসিবাদকে সুযোগ করে দিয়েছে এসব বিষয়ে কথা বলার।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বারবার বলে আসছি এটা অন্তর্বর্তী সরকার। দ্রুত নির্বাচনের জন্য আমরা আবারও তাদের তাগাদা দিয়েছি। ন্যূনতম যেসব সংস্কার করা দরকার সেটুকু করে আমরা নির্বাচন দেয়ার কথা বলেছি। 

তিনি বলেন, আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি, এখনো প্রশাসনে যেসব ফ্যাসিবাদের দোসরা রয়েছে, যারা লুটপাটে সহযোগিতা করেছে, যারা হত্যায় সহযোগিতা করেছে তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছি। 

তিনি বলেন, গত ১৫ থেকে ১৬ বছরে যেসব মিথ্যা মামলা দিয়ে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হয়েছে সেসব মামলা প্রত্যাহারের কথা আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি। এ বিষয়ে তারা নীতিগত সিদ্ধান্তে একমত হয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, আমরা সরকারকে অত্যন্ত জোরালভাবে বলেছি তারা দ্রব্যমূল্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না। তারা এ বিষয়ে বলেছে, দ্রব্যমূল্য কমাতে সরকার চেষ্টা করে যাচ্ছে। 

এর আগে, গতকাল সন্ধ্যা ৬টা ৫ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল। মহাসচিব ছাড়াও দলটিতে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ ও মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।

বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম কাজ হচ্ছে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ সৃষ্টি করে তা সম্পন্ন করা এবং যথাসম্ভব দ্রুতই তা করা। অন্যথায় রাজনৈতিক সংকট ভিন্নমাত্রা পাওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। আবার এটাও সত্য, তড়িঘড়ি নির্বাচন করতে গেলে আশানুরূপ ফল না-ও মিলতে পারে। কাজেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে প্রশ্ন ও তাগিদ দেখা যাচ্ছে, তা নিরসনে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনি রোডম্যাপ দেয়াই হবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ। এজন্য জাতীয় ঐক্য ও সংহতির বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে পুনরায় সব রাজনৈতিক দল এবং অভ্যুত্থানে যেসব শক্তি সংশ্লিষ্ট ছিল, তাদের সমন্বয়ে একটি সংলাপের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। এর ফলে নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ দেশের উন্নয়নের স্বার্থে যে কোনো বিষয়ে সরকারের প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা ধরে রাখতে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে— এটাই প্রত্যাশা।

এদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভব্য প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে যাতে জাতীয় নির্বাচন হয় সেই লক্ষ্য নিয়েই প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। কমিশনের কাছে ভালো নির্বাচন না করার কোনো বিকল্প নেই।  

গতকাল সন্ধ্যায় ভোটার তালিকা হালনাগাদ-২০২৫ উপলক্ষে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কক্ষে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 

দেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক নেতাদের বিভিন্ন মহলের সহায়তা কামনা করে তিনি আরও বলেন, অতীতের গ্লানি মুছে ফেলতে কী কী করা প্রয়োজন তা আমরা এক্সারসাইজ করে রেখেছি। সংস্কার প্রতিবেদন অনুযায়ী আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব এবং তা অনুযায়ী কাজ করব। 

আনোয়ারুল ইসলাম আরও বলেন, সবার চাহিদা অনুযায়ী সুষ্ঠু নির্বাচন করতেই হবে, পেছনে ফেরার সুযোগ নেই। 

তিনি বলেন, মানিকগঞ্জে একটি সংসদীয় নির্বাচনি আসন কমানো হয়েছে। আসন পুনরুদ্ধারে অনেক আবেদন নির্বাচন কমিশনের কাছে এসেছে। এ বিষয়টি দেখা হবে। বর্তমানে নির্বাচনি আসনের সীমানা নির্ধারণের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট একটি আইন রয়েছে। এ আইনের বিষয়ে যদি অর্ডিন্যান্স জারি হয়, তখন এ বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশন বসে সিদ্ধান্ত নেবে।

সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের বিষয়ে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে যে বিষয়গুলো আসবে সেগুলোই বাস্তবায়ন হবে। নির্বাচন কমিশনার বলেন, বাড়ি বাড়ি গিয়ে হালনাগাদ ভোটার তালিকা করার সুবাদে এবার প্রথমবারের মতো ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ছেন প্রায় ১৬ লাখ মৃত ভোটার। এতে কারো কারচুপি করার সুযোগ থাকবে না।