৮৬ শতাংশ মানুষ নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৫, ০১:০১ এএম
৮৬ শতাংশ মানুষ নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়

দেশের ৮৬ শতাংশ মানুষ চাচ্ছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীনে হোক। তবে আনুপাতিক পদ্ধতিতে ভোটের পক্ষে মত নেই বললেই চলে। এ ছাড়া সরাসরি ভোটাভুটির মাধ্যমে সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন রাখার পক্ষে বেশির ভাগ মানুষ।

সম্প্রতি সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত জাতীয় জনমত জরিপ-২০২৪-এ মানুষের এসব তথ্য উঠে এসেছে। জরিপে গত ৫ ডিসেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সংবিধান সংস্কার কমিশন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মাধ্যমে এ জরিপ করে। কমিশনের প্রতিবেদনের সঙ্গে জরিপটি প্রকাশ করা হয়েছে।

কমিশন জানায়, তারা বিভিন্নভাবে অংশীজনদের মতামত সংগ্রহ করেছে। তবে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মতামতের প্রতিফলনের জন্য তারা জরিপ করার সিদ্ধান্ত নেয়।

ওই প্রতিবেদনে কমিশন জানিয়েছে, দেশের ৬৪ জেলা থেকে সরাসরি সাক্ষাৎকার পদ্ধতিতে ৪৫ হাজার ৯২৫টি খানার (পরিবার) ১৮ থেকে ৭৫ বছর বয়সী মানুষের কাছ থেকে জনসংখ্যা অনুপাতে মতামত নেওয়া হয়েছে।

নির্বাচনকালীন সরকার বিষয়ে ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়েছেন মাত্র ৬ শতাংশ মানুষ। আরও ৬ শতাংশের বেশি এ বিষয়ে জানেন না মন্তব্য করেছেন। আর প্রায় ২ শতাংশ মানুষ কোনো মতামত দেননি। বাকি প্রায় ৮৬ শতাংশ নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীনে হওয়া উচিত বলে জানান।

জরিপে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য বিষয়ে রাষ্ট্রপতির হাতে আরও ক্ষমতা দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন প্রায় ৩৭ শতাংশ উত্তরদাতা। আর ৪৫ শতাংশ মনে করেন, ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে থাকা উচিত।

এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সর্বোচ্চ দুবারের পক্ষে প্রায় ৬৪ শতাংশ মানুষ। তবে ১০ শতাংশ জানান, পরপর দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ হওয়ার পক্ষে নন তারা। অন্যদিকে, ১৫ শতাংশ মনে করেন, মেয়াদ নির্দিষ্ট করে দেওয়ার প্রয়োজন নেই।

একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দলের প্রধান পদে থাকা উচিত নয় বলে মনে করেন ৪৯ শতাংশ মানুষ। ৩৭ শতাংশের মত হলো, দুই পদে এক ব্যক্তি থাকতে পারেন। তবে জাতীয় সংসদের মেয়াদ চার বছর করার পক্ষে নন সাধারণ মানুষ। পাঁচ বছর মেয়াদের পক্ষে ৭৮ শতাংশ, চার বছরের পক্ষে ১৬ শতাংশের কিছু বেশি মানুষ।

এদিকে, সংসদ গঠনের ক্ষেত্রে নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে ৭৮ শতাংশ মানুষ প্রার্থীর প্রাপ্ত সর্বোচ্চ ভোটের পক্ষে মত দিয়েছেন। রাজনৈতিক দলের প্রাপ্ত আনুপাতিক ভোটের ভিত্তিতে সংসদ গঠনের পক্ষে ৯ শতাংশের কম মানুষ।

এ ছাড়া, সংসদকে দুই ভাগে (উচ্চ ও নিম্নকক্ষ) বিভক্ত করার পক্ষে প্রায় ৩৫ শতাংশ মানুষ। আর ৩৯ শতাংশ এর বিপক্ষে। ২৩ শতাংশের বেশি মানুষ এর উত্তর দিতে নারাজ।

অন্যদিকে, বর্তমান পদ্ধতিতে সংসদ সদস্যরা সংসদে নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দিতে পারেন না। ৮৩ শতাংশ মানুষ মনে করেন, এ ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ থাকা উচিত নয়। তবে সংবিধান সংশোধনসহ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গণভোটের পক্ষে মত দিয়েছেন প্রায় ৮২ শতাংশ মানুষ।

এদিকে, জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন ৭৫ শতাংশ মানুষ। বিপক্ষে মত দিয়েছেন ১৯ শতাংশের কিছু কম উত্তরদাতা। নারী প্রার্থীদের মধ্যে সরাসরি নির্বাচনের পক্ষে ৮৩ শতাংশ মানুষ।

অন্যদিকে, সংবিধানে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের অধিকার, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সুরক্ষিত করার সুস্পষ্ট বিধানের পক্ষে ৯১ শতাংশের কিছু বেশি মানুষ। তবে নাগরিকদের মতপ্রকাশ ও কথা বলার স্বাধীনতায় কোনো ধরনের বিধিনিষেধ সংবিধানে থাকা উচিত নয় বলে জানান ৫৩ শতাংশ উত্তরদাতা। আর ৪৩ শতাংশের কিছু বেশি মানুষ সাংবিধানিক বিধিনিষেধের পক্ষে মতা দিয়েছেন।

এ ছাড়া, সভা-সমাবেশ ও মিছিলে যোগ দেওয়ার স্বাধীনতা সীমিত করার ক্ষমতা সংবিধানে থাকার পক্ষে মতামত দিয়েছেন ৬১ শতাংশের বেশি মানুষ। ২৯ শতাংশ জানান, এ ক্ষমতা সংবিধানে থাকা উচিতই নয়।

ইএইচ