শিমুলবাগানে রক্ত লালের নাচন

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৫, ১২:৩৬ এএম
শিমুলবাগানে রক্ত লালের নাচন

নীল দিগন্তে ওই ফুলের আগুন লাগল। চতুর্দিকে রক্তরাঙা ফুল। জাদুকাটার তীরে শুনি ক্ষণে ক্ষণে, কোকিলের কুহুতান, আজি বসন্তের দূত, গাহে আগমনী গান। কবির এ উচ্চারিত লাইনের মতো জাদুকাটার তীরে ১০০ বিঘা জমির ওপর তৈরি শিমুলবাগানে কোকিল না থাকলেও বসন্তের আগমনে তা ফুলে ফুলে ভরে গেছে। এমন সৌন্দর্যে নিজেকে ভাসিয়ে দিতে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা। সবুজের ডালে ডালে রক্ত লালের নাচন, শতকোটি শিমুল ফুলের রাজত্ব, এ যেন এক কল্পনার স্বর্গরাজ্য।

বসন্তের হাওয়া উত্তরে ভারতের মেঘালয়, খাসিয়া পাহাড় থেকে এসে দোলা দিচ্ছে বাগানের প্রতিটি শিমুল ফুলের গাছে। সেই হাওয়ায় ঝড়ে পড়ছে রক্তরাঙা শিমুল ফুল। পাহাড়ি নদী জাদুকাটার তীর জুড়ে এখন এমনই রাশি রাশি মুগ্ধতা। রক্তরাঙা শিমুল বাসন্তী অভিবাদন জানাচ্ছে সবাইকে। ফাগুনের প্রকৃতির এ আগুনের সূত্রপাত বুঝি তাহিরপুরের এ শিমুলবাগান থেকেই। রূপের সেই আগুন ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। কুড়িয়েছে হাজারো প্রেমিক-প্রেমিকা, প্রকৃতিপ্রেমী কিংবা ভালোবাসার মানুষের মন।

নেত্রকোনা থেকে আসা দর্শনার্থী বেলি তালুকদার বলেন, ‘বাগানে প্রতিটি সারিবদ্ধ গাছে ফুল ফুটেছে। অনেক মানুষ, অনেক ফুল একসঙ্গে দেখে অন্যরকম ভালো লাগছে।’ 

বিয়ানীবাজারের যুক্তরাজ্য প্রবাসী মিফতাউর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘বন্ধুদের নিয়ে শিমুলবাগান দেখতে এসেছি। প্রত্যাশার থেকেও অনেক ভালো দেখেছি। যারা প্রবাসী রয়েছেন তাদের বলব, আপনারা আসুন, দেখুন, বাংলাদেশের পর্যটনকে উপভোগ করুন। আমরা বিভিন্ন দেশে যাই, দেখি, কিন্তু আমাদের দেশের অনেক জায়গা রয়েছে আসি না। জয়নাল আবেদীন শিমুলবাগান দেখার মতো একটি জায়গা।’ 

দর্শনার্থী সৈয়দা শাহানারা বলেন, ‘পরিবারের সবাইকে নিয়ে আসলাম। ঘোড়ায় চড়লাম, পড়ে থাকা ফুলের মধ্যে বসে ছবি তুলেছি।’ দর্শনার্থী আয়েশা আক্তার বলেন, ‘গাছে গাছে রক্তরাঙা অনেক সুন্দর ফুল। পাশে মেঘালয় পাহাড় ও যাদুকাটা নদী। এমন পরিবেশে শিমুলবাগানে এলে মন ভালো হয় যায়।’ মাথার উপর ফুটে ওঠা ফুল ঝড়ে পড়ে লালগালিচা হয়ে। গাছ ভর্তি ফুলের কোনো সৌরভ না থাকলেও মায়ায় নেই কোনো কমতি। দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসা মানুষগুলো যেন সেই মায়ার জালেই বন্দি। তবে এ বছর কিছু অভিযোগও আছে দর্শনার্থীদের। 

নেত্রকোনা থেকে আসা দর্শনার্থী সুহেল আহমদ বলেন, ‘প্রতিটি টিকিটের মূল্য ৫০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। এটি অনেক বেশি, কম হলে আমাদের জন্য ভালো হয়। ডিএসএলআর ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুললেও ১০ টাকা করে নিচ্ছে। দেশের অন্যান্য পর্যটন এলাকা থেকে অনেক বেশি নিচ্ছে।’ সৌন্দর্যের স্বর্গরাজ্যের শুরুটা আজ থেকে বাইশ বছর আগে। ২০০৩ সালে উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান মৃত জয়নাল আবেদীন গড়ে তুলেন এ শিমুলবাগান। 

তিনি না থাকলেও তার স্মৃতি বহন করছে এ শিমুলবাগান। বাগানের প্রতিষ্ঠাতা জয়নাল আবেদীনের ছেলে রাখাব উদ্দিন বলেন, ‘আমার বাবা বাগানটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি মারা যাওয়ার পর আমি দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করছি। যখন ফুল ফোটা শুরু হয় তখন থেকেই মানুষের আসা শুরু হয়। এরপর দর্শনার্থীদের জন্য ওয়াশরুম, বসার ব্যবস্থা ও খাবার ক্যান্টিনের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। শুধু লাভের চিন্তা নয়, মানুষকে সেবা দেয়ার জন্য বাবার চিন্তা-চেতনাকে কাজে লাগাতে বাগানে কাজ করছি।

অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ফটোগ্রাফাররা বেশি টাকা নেয়ার সুযোগ নেই। তবে আগের থেকে এ বছর অনেক সুযোগ-সুবিধা বেড়েছে। এজন্য টিকিটের মূল্য কিছুটা বাড়ানো হয়েছে।’