ঐক্য চান রাজনীতিকরা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৫, ১২:০৩ এএম
ঐক্য চান রাজনীতিকরা

‘সবাইকে সতর্ক করলেন সেনাপ্রধান’

ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর বেশ কিছু দিন ফ্যাসিবাদ বিরোধী সব রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য বিদ্যমান ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্য দেখা দেয়। স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে না জাতীয় নির্বাচন আগে এ নিয়ে রাজনৈতিক ওপেন বিতর্ক দৃশ্যমান হয়। টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি ও দখলবাজি নিয়ে একে অপরকে দোষারোপ করতে থাকে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্যের সুযোগে চোর, ডাকাত ও ছিনতাইকারীদের উৎপাত বৃদ্ধি পায়। রাষ্ট্র নিয়েও নানা ষড়যন্ত্রের আভাস পান দেশের শীর্ষ রাজনীতিকরা। ফলে তারা ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। দেশের সার্বিক পরিস্থিতির মধ্যে গতকাল সেনাবাহিনী প্রধান দেশবাসীকে সতর্ক করে বক্তৃতা করেন এবং সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান। 

হানাহানি বন্ধ না করলে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে : ‘যদি নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ ভুলে একসাথে কাজ না করতে পারেন, নিজেরা যদি কাদা ছোড়াছুড়ি করেন, মারামারি-কাটাকাটি করেন এই দেশ এবং জাতির স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে,’ বলে মন্তব্য করেছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। গতকাল জাতীয় শহীদ সেনা দিবসে রাজধানীর রাওয়া ক্লাবে পিলখানা হত্যাকাণ্ড নিয়ে এক বিশেষ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমি আজকে বলে দিলাম নইলে আপনারা বলবেন যে, আমি আপনাদের সতর্ক করিনি। আমি সতর্ক করে দিচ্ছি আপনাদের। আমার অন্য কোনো আকাঙ্ক্ষা নাই। আই হ্যাড এনাফ লাস্ট সেভেন এইট মান্থস। আই হ্যাড এনাফ।’ 

তিনি বলেন, ‘আমি চাই দেশ ও জাতিকে একটা সুন্দর জায়গায় রেখে আমরা সেনানিবাসে ফেরত আসব। আরেকটা জরুরি বিষয় যেটা ভাবলাম যে আপনাদের সাথে আমি শেয়ার করি, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপের পেছনে কিছু কারণ আছে। প্রথম কারণটা হচ্ছে আমরা নিজেরা হানাহানির মধ্যে ব্যস্ত। একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে বিষোদগারে ব্যস্ত। এটা একটা চমৎকার সুযোগ অপরাধীদের জন্য। যেহেতু আমরা একটা অরাজক পরিস্থিতির মধ্যে বিরাজ করছি। তারা খুব ভালোভাবেই জানে যে এই সময়ে যদি এই সমস্ত অপরাধ করা যায় তাহলে এখান থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। সেই কারণে এই অপরাধগুলো হচ্ছে। আমরা যদি সংগঠিত থাকি একত্রিত থাকি তাহলে অবশ্যই এটা সম্মিলিতভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ডিজিএফআই, এনএসআই এগুলো দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছে অতীতে। খারাপ কাজের সাথে অসংখ্য ভালো কাজও করেছে। আজকে যে দেশের স্থিতিশীলতা, দেশটাকে যে এত বছর স্থিতিশীল রাখা হয়েছে এটার কারণ হচ্ছে এই সশস্ত্রবাহিনীর বহু সেনা সদস্য, সিভিলিয়ান সবাই মিলে এই অর্গানাইজেশনগুলোকে অসামরিক-সামরিক সবাই মিলে এই অর্গানাইজেশনগুলোকে এফেক্টিভ রেখেছে। সেই জন্য আজকে এতদিন ধরে আমরা একটা সুন্দর পরিবেশ পেয়েছি। এর মধ্যে যারা কাজ করেছে যদি অপরাধ করে থাকে সেটার শাস্তি হবে। অবশ্যই শাস্তি হতে হবে। না হলে এই জিনিস আবার ঘটবে। আমরা সেটাকে বন্ধ করতে চাই চিরতরে। কিন্তু তার আগে মনে রাখতে হবে আমরা এমনভাবে কাজটা করব এই সমস্ত অর্গানাইজেশনগুলো যেন আন্ডারমাইন্ড না হয়।’

সেনাপ্রধান বলেন, ‘আজকে পুলিশ সদস্য কাজ করছে না একটা বিশাল বড় কারণ হচ্ছে অনেকের বিরুদ্ধে মামলা, অনেকে জেলে। র‌্যাব, বিজিবি, ডিজিএফআই, এনএসআই প্যানিকড। বিভিন্ন দোষারোপ, গুম, খুন ইত্যাদির তদন্ত চলছে। অবশ্যই তদন্ত হবে। দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। এমনভাবে কাজটা করতে হবে যেন এই অর্গানাইজেশনগুলো আন্ডারমাইন্ড না হয়। এই অর্গানাইজেশনগুলোকে যদি আন্ডারমাইন্ড করে আপনারা মনে করেন যে, দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বিরাজ করবে, সবাই শান্তিতে থাকবেন, এটা হবে না, সেটা সম্ভব না। আমি আপনাদের পরিষ্কার করে বলে দিচ্ছি।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘এই দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব খালি সেনাবাহিনীর না। দুই লাখ পুলিশ আছে, বিজিবি আছে, র‌্যাব আছে, আনসার ভিডিপি আছে। আমার আছে ৩০ হাজার সৈন্য। এদেরকে আমি এই ৩০ হাজার সৈন্য দিয়ে কীভাবে এটা পূরণ করব। ৩০ হাজার থাকে আবার ৩০ হাজার চলে যায় ক্যান্টনমেন্টে আবার ৩০ হাজার আসে। এটা দিয়ে আমরা দিনরাত চেষ্টা করে যাচ্ছি। এখানে যে সমস্ত উশৃঙ্খল কাজ হয়েছে সেটা আমাদের নিজস্ব তৈরি। এটা আমাদের নিজস্ব ম্যানুফ্যাকচার। আমরা নিজস্ব এইগুলো তৈরি করেছি। এই বিপরীতমুখী কাজ করলে দেশে কখনো শান্তি-শৃঙ্খলা আসবে না। এই জিনিসটা আপনাদের মনে রাখতে হবে।’

সেনাপ্রধান বলেন, ‘তদন্ত কমিশন হচ্ছে আবার আরেকটা আমাদের। সর্বদা আমরা চেষ্টা করব তদন্ত কমিশনকে সহায়তা করতে। যে ধরনের সাহায্য সহযোগিতার প্রয়োজন হয় আমরা করব। আমরা দেশে একটা ফ্রি ফেয়ার অ্যান্ড ইনক্লুসিভ ইলেকশনের দিকে ধাবিত হচ্ছি এবং তার আগে যে সমস্ত সংস্কার করা প্রয়োজন অবশ্যই সরকার সেদিকে খেয়াল করবেন। আমি যতবারই ড. ইউনূসের সাথে কথা বলেছি হি কমপ্লিটলি এগ্রিস উইদ মি। দেয়ার শুড বি ফ্রি ফেয়ার এন্ড ইনক্লুসিভ ইলেকশন এন্ড দ্যাট ইলেকশন শুড বি উইদিন ডিসেম্বর অর ক্লোজ টু দ্যাট। যেটা আমি প্রথমেই বলেছিলাম যে ১৮ মাসের মধ্যেই একটা ইলেকশন। আমার মনে হয় যে, সরকার সেদিকেই ধাবিত হচ্ছে। ড. ইউনূস যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন এই দেশটাকে ইউনাইটেড রাখতে, কাজ করে যাচ্ছেন উনি। ওনাকে আমাদের সাহায্য করতে হবে উনি যেন সফল হতে পারেন। সেদিকে আমরা সবাই চেষ্টা করব। আমরা একসাথে ইনশাআল্লাহ কাজ করে যাব।’

তিনি বলেন, ‘আসেন আমরা নিজেদের মধ্যে মারামারি-কাটাকাটি না করে আমরা  ইউনাইট আওয়ারসেলভস। দেশ জাতি যেন একসাথে থাকতে পারি, সেদিকে আমাদের কাজ করতে হবে। আমাদের মধ্যে মতের বিরোধ থাকতে পারে, চিন্তা-চেতনার বিরোধ থাকতে পারে কিন্তু দিনশেষে যেন আমরা সবাই দেশ এবং জাতির দিকে খেয়াল করে আমরা যেন এক থাকতে পারি। তাহলেই এই দেশটা উন্নত হবে। এই দেশটা সঠিক পথে পরিচালিত হবে। না হলে আমরা আরও সমস্যার মধ্যে পড়ে যাব। বিশ্বাস করেন। উই ডোন্ট ওয়ান্ট টু হেড, ওইদিকে আমরা যেতে চাই না।’

সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমি আপনাদের সতর্ক করে দিচ্ছি। পরে বলবেন যে আমি সতর্ক করিনি আমি আপনাদের সতর্ক করে দিচ্ছি। আপনারা যদি নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ ভুলে একসাথে কাজ না করতে পারেন, নিজেরা যদি কাদা ছোড়াছুড়ি করেন, মারামারি-কাটাকাটি করেন এই দেশ এবং জাতির স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে। আমি আজকে বলে দিলাম। নাইলে আপনারা বলবেন যে আমি আপনাদের সতর্ক করিনি। আমি সতর্ক করে দিচ্ছি আপনাদের।’

তিনি বলেন, ‘এই দেশে সুখে-শান্তিতে থাকতে চাই। আমরা চাই না হানাহানি-কাটাকাটি-মারামারি। সেই উদ্দেশ্যে আমি কাজ করে যাচ্ছি, আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের সেনাবাহিনীর প্রতি আক্রমণ করবেন না। একটা কমন জিনিস আমি দেখতে পাচ্ছি, সেনাবাহিনী এবং সেনাপ্রধানের প্রতি বিদ্বেষ কারো কারো, কী কারণে আজ পর্যন্ত আমি এটা খুঁজে পাইনি। আমরা হচ্ছি একমাত্র ফোর্স যেটা আপনাদের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। দাঁড়িয়ে আছি প্ল্যাটফর্মে, অফকোর্স নেভি অ্যান্ড এয়ারফোর্স অল। উই অল। আমাদেরকে সাহায্য করেন। আমাদেরকে আক্রমণ করবেন না। আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করেন। আমাদেরকে উপদেশ দেন।’

তিনি বলেন, ‘আমি সবার কাছে শরণাপন্ন হই। আমাদের আক্রমণ করবেন না। উপদেশ দেন আমরা অবশ্যই ভালো উপদেশ গ্রহণ করব। আমরা একসাথে থাকতে চাই এবং দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।’ সেনাপ্রধান বলেন, ‘আজ একটা বেদনাবিধুর দিবস। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি আমরা ৫৭ জন চৌকস সেনা ও তাদের পরিবার হারিয়েছি। এখানে আসার সময় আমি ছবিগুলো দেখছিলাম। আমি একটা চাক্ষুস সাক্ষী এই বর্বরতার। একটা জিনিস আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে, এই বর্বরতা কোনো সেনাসদস্য করেনি। সম্পূর্ণটাই তদানীন্তন বিজিবির সদস্য দ্বারা সংঘটিত। ফুল স্টপ। এখানে কোনো ‘ইফ’ ও ‘বাট’ নেই। এখানে যদি ইফ এবং বাট আনেন, এই যে বিচারিক কার্যক্রম এতদিন ধরে হয়েছে, ১৬ বছর ধরে যারা জেলে আছে, যারা কনভিক্টেড, সেই বিচারিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে।’ 

তিনি বলেন, ‘এই জিনিসটা আমাদের খুব পরিষ্কার করে মনে রাখা প্রয়োজন। এই বিচারিক প্রক্রিয়াকে নষ্ট করবেন না। যেসব সদস্য শাস্তি পেয়েছে, তারা শাস্তি পাওয়ার যোগ্য। এখানে কোনো রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন কিনা, ইনভলভড ছিলেন কিনা, বাইরের কোনো শক্তি এর মধ্যে ইনভলভড ছিল কিনা, সেটার জন্য কমিশন করা হয়েছে। কমিশনের চেয়ারম্যান এখানে আছেন। উনি এটা বের করবেন এবং আপনাদের এটা জানাবেন। বটম লাইন হচ্ছে, আমাদের চৌকস সেনাসদস্য যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তারা প্রাণ হারিয়েছেন তদানীন্তন বিডিআর সদস্যদের গুলিতে।’ ‘আমরা নিজেরাই এসব নিয়ে অনেক ভিন্নমত পোষণ করছি, কেউ কেউ ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছি। সেটা আমাদের জন্য মঙ্গলজনক হবে না। আজকে আমি কিছু উপদেশ আপনাদের দিয়ে যাব, সেটা যদি গ্রহণ করেন আপনারা লাভবান হবেন। আমি এটা আপনাদের নিশ্চিত করছি,’ বলেন তিনি।

সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমরা নিজেরা ভেদাভেদ সৃষ্টি না করি। আমরা নিজেরা ইউনাইটেড থাকি। আমাদের মধ্যে যদি কোনো সমস্যা থেকে থাকে, কোনো ব্যত্যয় থেকে থাকে, কোনো গ্রিভেন্স থেকে থাকে, সেটা আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করব। এটার জন্য ডানে-বাঁয়ে দৌড়িয়ে কোনো লাভ হবে না। নিজের ক্ষতি ছাড়া কোনো লাভ হবে না। আমি আপনাদের এই জিনিসটা নিশ্চিত করে দিচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু সদস্যের দাবি যে তারা ২০০৯ সাল থেকে আজ পর্যন্ত বিভিন্ন শাস্তি পেয়েছেন। কেউ কেউ দাবি করছেন, তারা অযাচিতভাবে শাস্তি পেয়েছেন। এটার জন্য আমি একটা বোর্ড গঠন করেছি, একজন লেফটেন্যান্ট জেনারেল সেই বোর্ডের সদস্য। প্রথম ফেইজে ৫১ জন সদস্যের ব্যাপারে আমার কাছে সুপারিশ এসেছে। এসব সুপারিশের অধিকাংশই আমি গ্রহণ করেছি এবং আরও বেশি আমি দিয়েছি।’

‘নেভি, এয়ারফোর্সও তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আমার স্ট্যান্ড পয়েন্ট হচ্ছে, যদি কেউ অপরাধ করে থাকে, সেটার জন্য কোনো ছাড় হবে না, বিন্দুমাত্র ছাড় নেই। আমি আপনাদের পরিষ্কার করে দিচ্ছি। ইট ইজ আ ডিসিপ্লিন ফোর্স। ডিসিপ্লিন ফোর্সকে ডিসিপ্লিনড থাকতে দেন। আজকে দেশের ক্রান্তিলগ্নে সমস্ত বাহিনী, সমস্ত অর্গানাইজেশন ভেঙে পড়েছে। খালি সেনাবাহিনী টিকে আছে, বিমান বাহিনী টিকে আছে। কেন? বিকজ অব ডিসিপ্লিন। তারপর আমার অফিসারকে আদেশ দিয়েছি, যদি সামান্যতম সন্দেহের অবকাশ থাকে কারো বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেয়া হয়েছে, সামান্যতম যদি কোনো অবকাশ থাকে, সেটা তাদের ফেভারে যাবে। এটা হচ্ছে, আমার ঢালাও নির্দেশ। সে হিসেবে আমার কাছে প্রস্তাব এসেছে। কোনো কোনো প্রস্তাবে আমি আরও বেশি করে দিয়েছি। এভাবে পর্যায়ক্রমে অফিসাররা এপিয়ার করবে, আসবে। তাদের জিনিসগুলো আমরা দেখব। দেখে যদি মনে হয়, অবকাশ আছে, আমরা করব। এটা ন্যায়-নীতিতে আমরা প্রতিষ্ঠিত থাকব,’ বলেন সেনাপ্রধান।

তর্ক-বিতর্ক করতে গিয়ে যেন স্বৈরাচার সুযোগ পেয়ে না যায় : তারেক

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, তর্ক-বিতর্ক করতে গিয়ে এমন কিছু যেন না হয়, যাতে স্বৈরাচার কিংবা দেশের ভালো যারা চায় না, তারা সুযোগ পেয়ে যায়। সংস্কার নিয়ে যদি আমরা অযাচিত আলোচনা করতে থাকি, তাহলে রাষ্ট্রের মূল সমস্যাগুলো আড়াল হয়ে যেতে পারে। তাই এসব না করে দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান তিনি। 

খুলনা সার্কিট হাউস মাঠে অনুষ্ঠিত খুলনা মহানগর বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তারেক রহমান। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে নারী উন্নয়ন, শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য খাতে কী কী করবেন তা উল্লেখ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। অন্তর্বর্তী সরকারকে এসব বিষয়ে নজর দেয়ারও পরামর্শ দেন তিনি। 

গণতন্ত্র যত প্রাক্টিস হবে তত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হবে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, এ কারণেই বিএনপি দলের মধ্যে গণতান্ত্রিক উপায়ে নেতা নির্বাচিত করছে। সম্মেলনে আগামী নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানান সম্মেলনের উদ্বোধক ও বিএনপি চেয়াপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান। এ সময় নেতাকর্মীরাও হাত উঠিয়ে ধানের শীষে ভোটের প্রতিশ্রুতি দেন। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় সম্মেলন শুরু হয়। এতে খণ্ড খণ্ড মিছিল সহকারে বিভিন্ন রঙের ক্যাপ, টি-শার্ট পরে ও প্ল্যাকার্ড হাতে আসেন নেতাকর্মীরা। দীর্ঘ ১৬ বছর পর এ সম্মেলনে উজ্জীবিত নেতাকর্মীরা।

সব দলকে পাঁচ বিষয়ে ঐক্যমত হওয়ার আহ্বান জামায়াতের

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ভারত সরাসরি জড়িত মন্তব্য করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করা হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশে ভারতীয় আধিপত্যবাদ প্রতিষ্ঠা করতে। ভারত আওয়ামী লীগকে ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতা রাখার স্বপ্ন দেখিয়ে আওয়ামী সরকারের মদতে পিলখানা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। ওই হত্যাকাণ্ড পরিচালিত করেছে ভারতীয় আজ্ঞাবহ বিডিআর জোয়ানরা। কিন্তু তাদের কোনো বিচার না করে নিরপরাধ বিডিআর সদস্যদের আটক করে বিচারের নামে অবিচার করে দণ্ড দিয়েছে, চাকরিচ্যুত করেছে। 

গতকাল বিকেলে ২০০৯ সালে পিলখানায় দেশপ্রেমিক সেনাকর্মকর্তাদের নৃশংস হত্যার প্রতিবাদে ও বিচারের দাবিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক গঠিত পিলখানা হত্যাকাণ্ডের তদন্ত কমিশনের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের ভিত্তিতে ঘটনার সাথে জড়িত সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

বিএনপিসহ সব দলকে পাঁচ বিষয়ে ঐকমত্য হয়ে জাতির সামনে শপথ করার আহ্বান জানিয়ে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নো কম্প্রোমাইজ (কোনো আপস নয়), দুর্নীতি-চাঁদাবাজি-সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, সুষুম নির্বাচনের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, জাতীয় স্বার্থে এক ও অভিন্ন, দেশের উন্নয়নের জন্য দলের চেয়ে দেশ বড় নীতি অবলম্বন এই পাঁচ বিষয়ে ঐক্যমত হয়ে জাতির সামনে শপথ গ্রহণ করতে না পারলে তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেয়ারও আহ্বান জানান। 

এ সময় তিনি বলেন, ভিন্ন মত ও দল থাকবে, থাকতে পারে। কিন্তু দেশ ও জাতির স্বার্থে এই পাঁচ বিষয়ে ঐক্যমত হতে পারলে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ হবে একটি শক্তিশালী জাতি ও রাষ্ট্র। প্রসঙ্গে ক্রমে ডা. তাহের বলেন, সিঙ্গাপুরের একটি প্রতিনিধি দল জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় অফিসে নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করতে আসেন। সে সময় তিনি জিজ্ঞেস করেছেন, ১৯৬৭ সালে স্বাধীন হয়ে এতো অল্প সময়ে কিভাবে সিঙ্গাপুর এতো সমৃদ্ধ হলো? প্রতিনিধি দলের একজন মুহূর্তে জবাব দিলেন, আমরা একজন সৎ যোগ্য ও দেশপ্রেমিক আদর্শিক নেতা পেয়েছি। যিনি আমাদের দেশকে সমৃদ্ধ করতে পেরেছেন। 

ডা. তাহের বলেন, পক্ষান্তরে বাংলাদেশের জনগণ দেশ স্বাধীনের পর একজন চোর, দুর্নীতিবাজ নেতা পেয়েছে। সেজন্যই আমাদেরকে আজও সংগ্রাম করতে হয়। ১৯৪৭ সালে আমরা প্রথম স্বাধীন হয়েছি তারপর ১৯৭১ সালে। কিন্তু জনগণ পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা পায়নি বলেই ২০২৪ সালের ৩৬ জুলাই তথা ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতা ফ্যাসিবাদের হাত থেকে জাতিকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। আর কোনো সংগ্রাম, সংঘাত নয় উল্লেখ করে তিনি রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক ঘোষিত আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথমবারের মতো জাতীয় শহীদ সেনা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির জননেতা মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান। 

‘চলুন, দেশের স্বার্থে আবারও একতাবদ্ধ হই’

জাতীয় জীবনে ক্রান্তিকাল চলছে, তবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দলের সমর্থন এখনও বিদ্যমান। সমপ্রীতি ও মেলবন্ধন তৈরির নিমিত্তে দেশের স্বার্থে জাতিগত ঐক্য গড়া প্রয়োজন— এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেই সাথে জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত না করার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি। 

গতকাল ২৪ ফেব্রুয়ারি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড পেজে একটি পোস্ট দেন বিএনপি মহাসচিব। 

তিনি লেখেন, এখনও এক বছর পেরিয়ে যায়নি, আমরা বাংলাদেশে জীবনের সবচেয়ে বড় বিজয় অর্জন করেছি। সবচেয়ে খারাপ ডিকটেটর শেখ হাসিনা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। অনেক প্রাণ হারিয়েছে, মূল্যটা অনেক বেশি। পোস্টে আরও লেখা রয়েছে, আমরা আমাদের সম্মানিত ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি শতভাগ সমর্থন দিয়ে আসছি। হ্যাঁ, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের সংস্কার চাই। কিন্তু এই সংস্কারটি জনগণের প্রতিনিধি দ্বারা বাস্তবায়িত হতে হবে, যারা মানুষের পালস বোঝে। 

দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল লেখেন, আইনশৃঙ্খলা অবনতির দিকে যাচ্ছে। আমরা ইতোমধ্যে লক্ষ্য করেছি যে স্থানীয় সরকার সংস্কার সংস্থার সুপারিশগুলো জনগণের প্রতিনিধিত্বের মৌলিক ধারণার বিরুদ্ধে যাচ্ছে। বিএনপি মহাসচিব পোস্টের ইতি টানেন জাতিগত ঐক্য প্রতিষ্ঠার বার্তা দিয়ে। তিনি লেখেন, হ্যাঁ, আমরা একটি ট্রানজিশনাল (ক্রান্তিকাল) পর্যায় অতিক্রম করছি, তবে চলুন আমরা এই পরিবর্তনকে দীর্ঘায়িত না করি, দেশের স্বার্থে জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত না করি, আবার ইউনাইটেড (ঐক্যবদ্ধ) হই।

ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের রাজনৈতিক রেষারেষি কাম্য নয় : ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের রাজনৈতিক রেষারেষি কোনোভাবেই কাম্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। গত সোমবার পল্টনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী রিকশা, ভ্যান ও অটোচালক দলের মানববন্ধনে এ কথা বলেন তিনি।