৯ মন্ত্রণালয় ও বিভাগে সচিব নেই
স্থগিত রাখা হয়েছে সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) সভা
জেলা প্রশাসকের (ডিসি) নতুন ফিটলিস্ট তৈরির কাজও স্থগিত রয়েছে
প্রশাসনের বিভিন্ন ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্যে এসব বিষয় নিয়ে অসন্তোষ বিরাজ করছে
পদোন্নতি এবং মহার্ঘভাতা নিয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অসন্তোষ কাটছে না। বিরাজ করছে অসন্তোষ। কারণ ঝুলে রয়েছে অতিরিক্ত সচিব, যুগ্মসচিব এবং উপসচিব পদে পদোন্নতি। ৯ মন্ত্রণালয় ও বিভাগে সচিব নেই। স্থগিত রাখা হয়েছে সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) সভা। জেলা প্রশাসকের (ডিসি) নতুন ফিটলিস্ট তৈরির কাজও স্থগিত রয়েছে। প্রশাসনের বিভিন্ন ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্যে এসব বিষয় নিয়ে অসন্তোষ বিরাজ করছে। আর মহার্ঘভাতার কমিটি গঠন করে আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পর সরকার তা থেকে সরে আসায় কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে। সচিবালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোতে অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা সচিবের রুটিন দায়িত্ব পালন করছেন। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়, সেতু বিভাগ, পরিকল্পনা কমিশন, জাতীয় সংসদ সচিবালয়, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগে কোনো সচিব নেই। অথচ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রিন্সিপাল অ্যাকাউন্টিং অফিসার হচ্ছেন সচিব। সরকারের উপদেষ্টা, মন্ত্রী কিংবা প্রতিমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে সচিব মন্ত্রণালয়ের অভিভাবক। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরেই ওসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোতে সচিব পদে কোনো কর্মকর্তা নেই।
সূত্র জানায়, সরকার সচিব পদে পদোন্নতি দিতে গিয়ে বারবার হোঁচট খাচ্ছে। বর্তমান সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে এবং বিগত সরকারের সময়ে পদোন্নতিসহ নানাভাবে বঞ্চিত ও হয়রানির শিকার কর্মকর্তাদের বিষয়েও সিদ্ধান্ত নিতে নীতিনির্ধারকরা কালক্ষেপণ করছে। ফলে প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কর্মরত কর্মকর্তাদের দূরত্ব বাড়ছে। কারণ সরকারের উচ্চপর্যায়ের দায়িত্বশীলরা প্রশাসনে কর্মরতদের সন্দেহের চোখে দেখছে। যদিও বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বৈরাচার সরকারের সময়ে যারা অপেক্ষাকৃত দলনিরপেক্ষ ছিলো তাদের বিবেচনায় নেয়া যেতে পারে। কারণ রাতারাতি কর্মকর্তা তৈরি করা যাবে না। ফলে বেছে নিতে হবে যারা আছেন তাদের ভেতর থেকেই।
সূত্র আরও জানায়, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) প্রশাসন ক্যাডারের ২৪তম ব্যাচকে মূল ধরে ২০২৪ সালে যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতির জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তথ্য চেয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে পত্র দেয়। নোটিশ জারির পর থেকে প্রায় এক বছর হতে চলেছে। কিন্তু এখনো এসএসবি শেষ হয়নি। আর বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ৩০তম ব্যাচকে মূল বিবেচনায় নিয়ে গত বছর সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে উপসচিব পদে পদোন্নতির নোটিশ জারি হয়। কিন্তু এসএসবিতে পদোন্নতি ঝুলে আছে। ইতোমধ্যে গত বছর নভেম্বর মাসে প্রশাসন ক্যাডারের ২০তম ব্যাচকে মূল বিবেচনায় নিয়ে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির জন্য নোটিশ করা হলেও এসএসবি শেষ হয়নি। ওসব বিষয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের ভেতরে হতাশা বিরাজ করছে।
এদিকে ডিসির ফিটলিস্ট তৈরির কাজে শুরুর পর মাত্র এক দিন ভাইভা নিয়ে তা স্থগিত করা হয়েছে। আর স্থগিতের বিষয়ে দেয়া হয়নি কোনো ব্যাখ্যাও। বরং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নতুন করে ডিসির ফিটলিস্ট তৈরির কাজে হাত দেয়। এবারের ফিটলিস্টে ভাইভা দেয়ার জন্য ডাকা হয়েছে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২৫, ২৭ এবং ২৮ ব্যাচের কর্মকর্তাদের। তিন ব্যাচে প্রায় ছয় শতাধিক কর্মকর্তা আছেন। তাদের মধ্যে ৪০ জনের ভাইভা নেয়া হয়েছে। বাকিরা অপেক্ষায় রয়েছেন। তাছাড়া মহার্ঘভাতা হার নির্ধারণে অর্থ সচিবকে প্রধান করে সরকার কমিটি গঠন করে। কমিটিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়।
কমিটি গঠনের পরদিন জনপ্রশাসন সচিব সংবাদ সম্মেলন করে মহার্ঘভাতা প্রদানের ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে তিনি ঘোষণা করেন, এবার অবসরে যাওয়া কর্মচারীরাও মহার্ঘভাতা পাবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওই ঘোষণা থেকে সরে আসে সরকার। কারণ মহার্ঘভাতা দেয়ার মতো অর্থ সরকারের কাছে নেই। এমন আচরণে সরকারি কর্মচারীরা ক্ষুব্ধ।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে এপিডি (জনপ্রশাসন নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ) মো. ওবায়দুর রহমান জানান, সচিবের শূন্য পদ পূরণ করা না করা সরকারের সিদ্ধান্ত। আর সময়ের অভাবে এসএসবির সভা করা যাচ্ছে না। ডিসির ফিটলিস্ট তৈরির ক্ষেত্রেও কমিটির সদস্যদের ব্যস্ততা থাকায় এগোচ্ছে না। আশা করা যায় কাজগুলো দ্রুত শেষ করা যাবে। আর পদোন্নতি নিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ থাকা স্বাভাবিক।