দুর্নীতির অনুসন্ধানকে ভুয়া বললেন অভিযুক্ত মোল্যা

মামুনুর রশিদ, চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৫, ১২:৩২ এএম
দুর্নীতির অনুসন্ধানকে ভুয়া বললেন অভিযুক্ত মোল্যা
  • দুর্নীতির হাট চট্টগ্রাম বনবিভাগে দুদকের থাবা

দেশের পটপরিবর্তনে অনিয়ম-দুর্নীতির মাত্রা প্রায় ক্ষেত্রে কমে আসলেও চট্টগ্রাম বনবিভাগে তার বিন্দু পরিমাণ পরিবর্তন হয়নি। উল্টো বনবিভাগের দেয়াল থেকে চেয়ার-টেবিল পর্যন্ত দুর্নীতিতে আক্রান্ত। এ জন্য দুর্নীতির হাট হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে চট্টগ্রাম বনবিভাগ। 

গত সোমবার দুর্নীতির হাটের মহারাজা চট্টগ্রাম অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মোল্যা রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে বদলি বাণিজ্যে ১০ কোটি টাকা লেনদেনের অভিযোগ অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনুসন্ধানে বেশকিছু নথিপত্র জব্দ করা হয়েছে।

চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি একযোগে ৭৭ জন বন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে তাদের পছন্দমতো জায়গায় বদলি করা হয়। প্রত্যেক বদলির জন্য লেনদেন হয় মোটা অঙ্কের টাকা। সব মিলিয়ে প্রায় ১০ কোটি টাকা এ বদলি বাণিজ্যে লেনদেন করা হয়েছে বলে অভিযোগ আছে।

এছাড়া মোল্লা রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে ফেনীতে বিভাগীয় বন কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকার সময় একটি প্রকল্পে প্রায় আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আছে। নানা অনিয়ম-দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও বদলি বাণিজ্যের মাধ্যমে বিগত সরকারের আমলে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। জুলাই বিপ্লবের পর ভোল পাল্টে বনে যান সংস্কারপন্থী। চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রতিটি বিভাগ ও চেক স্টেশন থেকে চাঁদাবাজি করতে তার অনুগত বন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দিয়ে গড়ে তুলেছেন ‘মোল্যা বাহিনী’। এই বাহিনীর অলিখিত ‘ক্যাশিয়ার’ ফরেস্টার আব্দুল হামিদ।

জানা যায়, পদ্মা সেতু নির্মাণের পর মোল্যা রেজাউল তার ব্যক্তিগত ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘জেদি মেয়ে আমার শাসন করেছে প্রমত্তা পদ্মা বহমান, জান্নাত হতে চেয়ে দেখে পিতা, শেখ মুজিবুর রহমান।’ জুলাই বিপ্লবের পর তিনি ফেসবুকে লেখেন, সারাটি দিন কাটিয়ে দিলাম চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত এই চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে। তার বিরুদ্ধে শতকরা ৫ টাকা হারে বিভাগীয় বন কর্মকর্তাদের মাধ্যমে চাঁদা আদায় করার অভিযোগ রয়েছে। 

বিগত দিনে চট্টগ্রাম ফরেস্ট একাডেমির পরিচালকের পদে থেকে ৫ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের নামে নিজস্ব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়ে কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ করা,  নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ফরেস্ট একাডেমির ডরমেটরি ভেঙে নিজের জন্য বাসস্থান তৈরি করা, সৌন্দর্যবর্ধনের নামে অপ্রয়োজনীয় ঝুলন্ত ব্রিজ নির্মাণ করেন। অথচ নিজের নামে বরাদ্দ পাওয়া সরকারি বাড়ি সাবেক এক প্রধান বন সংরক্ষকের কাছে মাসিক ৩০ হাজার টাকায় ভাড়া দেন। 

তার রোষানলে পড়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিভিন্ন ডিভিশনে কর্মরত ফরেস্টার ও ফরেস্টগার্ডরা জানান, মোল্যা রেজাউল চট্টগ্রাম অঞ্চলে যোগদানের পরপরই একটি বাহিনী গড়ে তোলেন। তার অনুসারী নন এবং প্রতিবাদী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিহ্নিত করে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। বদলি নীতিমালা লঙ্ঘন করে যোগ্য ও কর্মঠ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শাস্তিমূলক বদলি করেন। বিভাগীয় বন কর্মকর্তাদের দাপ্তরিক কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করে সরকারি কাজে বাধা সৃষ্টি করছেন।

গত সোমবার অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া দুদক সমন্বিত চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-১ এর সহকারী পরিচালক সাঈদ মাহমুদ ইমরান সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধান বন সংরক্ষকের বিরুদ্ধে আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধান চলছে। তাকে দীর্ঘ তিন ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বলে জানায় দুদক। 

তবে অভিযুক্ত চট্টগ্রাম অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মোল্যা রেজাউল করিম দৈনিক আমার সংবাদকে বলেন, দুদকের কোনো অনুসন্ধান চলছে না। সব ভুয়া কথা। দুদক কিছু তথ্য চাইতে এসেছে মাত্র। আমি উপদেষ্টা মহোদয়ের সাথে আছি।