বোরো মৌসুম

অরক্ষিত হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: মার্চ ৫, ২০২৫, ১২:১৯ এএম
অরক্ষিত হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ

চলতি বোরো মৌসুমে অরক্ষিত রয়েছে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ। কারণ নির্ধারিত সময়েও হাওর রক্ষা বাঁধের নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। ফলে আকস্মিক বন্যা বা ঢলে তলিয়ে যেতে পারে হাওরের বোরো ধান। দেশের মোট উৎপাদিত ফসলের প্রায় ৩০ শতাংশ হাওর এলাকাগুলো থেকে জোগান আসে। হাওরের বিস্তৃত জলরাশি সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে শুকিয়ে গেলে ভূমির বৈশিষ্ট্যভেদে নানা ধরনের ফসল চাষ করেন কৃষকরা। কিন্তু এ বছরও হাওর অধ্যুষিত অনেক স্থানেই ফসল রক্ষা বাঁধ অরক্ষিত রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এবং হাওর বাঁচাও আন্দোলন সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সিলেটের হাওরাঞ্চলে প্রবল বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে প্রায়ই অকালবন্যা দেখা দেয়। মার্চের দিকে শুরু হওয়া ওই বন্যার পানি হাওরের কৃষকদের বোরো ধান ভাসিয়ে নিয়ে যায়। ধান রক্ষা করতে প্রতি বছরই সুনামগঞ্জ জেলায় সরকারিভাবে হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়। আর হাওরের বাঁধ নির্মাণে সুনামগঞ্জই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পায়। সিলেট বিভাগের চারটির জেলার মধ্যে মৌলভীবাজার ছাড়া অন্যগুলোয় বোরো ফসল রক্ষায় ৭২৫টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠনের মাধ্যমে বাঁধ নির্মাণকাজ হচ্ছে। তার মধ্যে সুনামগঞ্জে ৬৮৭টি, সিলেটে ২২ ও হবিগঞ্জে ১৬টি পিআইসি রয়েছে। 

সূত্র জানায়, সুনামগঞ্জে ৮০ ভাগ, সিলেটে ৬০ ও হবিগঞ্জে ৬৯ ভাগ বাঁধ নির্মাণকাজ সরকারি হিসাবে শেষ হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সংশ্লিষ্টদের দাবি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাঁধ নির্মাণকাজ শেষ করা সম্ভব। কিন্তু হাওর বাঁচাও আন্দোলনের নেতাদের মতে এখনো শেষ হয়নি অর্ধেক কাজ। মাটি কাটার কাজ শেষ হলেও এখনো দুরমুজ, বস্তা বাঁধা, ঘাস লাগানোসহ অনেক কাজ বাকি। চলতি মৌসুমে সুনামগঞ্জের ১২টি উপজেলার ৫৩টি হাওরে বোরো ফসল সুরক্ষার জন্য ৬৮৭টি পিআইসি গঠন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে পুরো জেলায় ৫৮৮ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের কাজ করা হচ্ছে। বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য ১২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে শতভাগ কাজ শেষ হওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে। তাছাড়া বাঁধে মাটি ফেলার ক্ষেত্রে সঠিক নিয়মও মানা হচ্ছে না।

 সূত্র আরও জানায়, সুনামগঞ্জে এখন পর্যন্ত ফসল রক্ষা বাঁধের অর্ধেক কাজ শেষ হয়েছে। সঠিক সময়ে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ শেষ না হলে পাহাড়ি ঢলে বোরো ধানের ক্ষতির শঙ্কা রয়েছে। হাওরের গুরুত্বপূর্ণ অনেক বাঁধের কাজে গাফিলতি করা হচ্ছে। শুধু কাগজপত্রে ৭০-৮০ ভাগ কাজ শেষ হওয়ার কথা বললেও বাস্তবে চিত্র ভিন্ন। আর বাঁধের কাজ যেমন ঢিমেতালে হচ্ছে তাতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তা শেষ করা সম্ভব নয়। ফলে ঝুঁকিতে রয়েছে হাওরের বোরো ফসল। 

এদিকে হাওর বাঁচাও আন্দোলন সংশ্লিষ্টদের মতে, কৃষকের ধান রক্ষায় বাঁধের কাজ সময়মতো শুরু করা জরুরি। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের বেশ কিছুদিন পর কর্তৃপক্ষ অনেক বাঁধের কাজ শুরু করে। সরকারি হিসাবে ৭০-৮০ ভাগ কাজ হলেও প্রকৃত অর্থে এখনো অনেক বাঁধের কাজ বাকি। শুধু মাটি ফেলেই শেষ নয়, বাঁধের কম্পেকশন, দুরমুজ ও ঘাস লাগানো বাকি। হাতে মাত্র কয়েকদিন আছে। এর মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে। 

অন্যদিকে পাউবো সংশ্লিষ্টদের মতে, ফেব্রুয়ারির মধ্যেই সব ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ শেষ হবে। ইতোমধ্যে ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। তবে কোথাও কোথাও কিছুটা পিছিয়ে রয়েছ। তবে কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ হবে। সিলেটের তিন উপজেলার পাঁচটি হাওরে ২২টি পিআইসির মাধ্যমে বাঁধ নির্মাণের কাজ হচ্ছে। এ পর্যন্ত ৬০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। আর হবিগঞ্জ জেলায় ১৬টি হাওর রয়েছে। সেখানে ১৬টি পিআইসির মাধ্যমে কাজ হচ্ছে। ফেব্রুয়ারির মধ্যেই সব কাজ শেষ হবে।

সার্বিক বিষয়ে পাউবো সিলেটের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণে কোনো অনিয়ম সহ্য করা হবে না। এটি আগেই জানিয়ে দেয়া হয়েছে। কঠোর তদারকির মধ্যে কাজ চলছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাঁধ নির্মাণকাজ শেষ হবে।