রাজধানীতে হঠাৎ নিষিদ্ধ হিজবুত তাহরীর

সংঘর্ষে রণক্ষেত্র পল্টন

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: মার্চ ৮, ২০২৫, ১২:১৩ এএম
সংঘর্ষে রণক্ষেত্র পল্টন

হিজবুত তাহরীরের সব কার্যক্রম শাস্তিযোগ্য অপরাধ—পুলিশ সদরদপ্তর

নিষিদ্ধ ঘোষিত উগ্রবাদী সংগঠন হিজবুত তাহরীর হঠাৎ করেই রাজধানীতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। গত ৫ আগস্টের পর থেকেই বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করলেও ‘মার্চ ফর খিলাফাহ’ কর্মসূচি ঘিরে সংগঠনটি মারমুখী অবস্থানে চলে আসে। নিষিদ্ধ সংগঠনের কার্যক্রম ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও কঠোর অবস্থানে থাকায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয় রাজধানীর পল্টন এলাকা। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা চলে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া।

গতকাল শুক্রবার বায়তুল মোকাররমে জুমার নামাজের পরপরই উত্তাল হয়ে ওঠে পল্টন এলাকা। হিজবুত তাহরীর পূর্ব নির্ধারিত বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। একপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বাধা দিলে সংঘর্ষ শুরু হয়। কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে পুলিশ সেনাবাহিনীকে নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। পরে তারা ১২টির মতো সাউন্ড গ্রেনেড মেরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১২ জনকে আটক করেছে পুলিশ। আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। আহতদের মধ্যে রয়েছেন সাংবাদিকও। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগে ভাগেই জুমার নামাজ আদায় করতে মুসল্লি ছদ্মবেশে বায়তুল মোকাররমে হাজির হন হিজবুত তাহরীর কর্মীরা। মসজিদের ভেতরে তারা অবস্থান না নিয়ে মুসল্লি ছদ্মবেশে উত্তর গেটের সামনের সড়কে নামাজ আদায় করেন। অন্যদিকে পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনীও প্রস্তুত ছিল। নামাজ শেষ হতেই সংগঠনটির কর্মীরা স্লোগান দিতে থাকেন- ‘মুক্তির এক পথ-খিলাফত-খিলাফত।’ এ সময় সবার হাতে সাদা ও কালো কালেমা খচিত পতাকা দেখা গেছে।

এরপর কয়েক হাজার কর্মী নিয়ে একটি মিছিল পল্টন মোড়ের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে। উত্তর গেটের সামনে থাকা ওভারব্রিজের সামনে তাদের বাধা দিয়ে আটকে দেয় পুলিশ। এরপর সেই বাধাকে উপেক্ষা করে তারা পল্টন মোড় হয়ে বিজয় নগরের দিকে চলে যায়। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী তাদের পিছু নেয়। মিছিলটি বিজয়নগর থেকে পল্টন মোড় আসার পথে পুলিশ তারা ধাওয়া দেয়। এ সময় হিজবুত তাহরীর কর্মীরাও ছিলেন মারমুখী। পুলিশ ও এপিবিএন সদস্যরা বিজয়নগরের ফার্ম হোটেলের সামনে অবস্থান নেন। একপর্যায়ে সংগঠনটির কর্মীরা পল্টন মোড় আসার চেষ্টা করলে সাউন্ড গ্রেনেড মারে পুলিশ। দফায় দফায় সাউন্ড গ্রেনেড মারার ফলে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় পুরো এলাকা।

এ সময় আশপাশে থাকা লোকজনের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে পালাতে গিয়ে আহত হন। পুলিশের লাঠিচার্জের কারণে হিজবুত তাহরীরের কর্মীরা তাদের হাতে থাকা লাঠি ও কালেমা খচিত সাদা-কালো পতাকা ফেলে পালিয়ে যান। এছাড়াও তাদের লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করা হয়। পুলিশের ধাওয়া খেয়ে হিজবুত তাহরীর কর্মীরা ছোটাছুটি করতে থাকেন। এরপরও তারা প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। এ সময় ১২ জনকে আটক করে পুলিশ। টানা প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা রণক্ষেত্রে পরিণত হয় পল্টন মোড় ও আশপাশের এলাকা। রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ ও সেনাবাহিনী।

তবে মাঠে র‌্যাব থাকলেও তাদের তেমন ভূমিকায় দেখা যায়নি। পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার পর রমনা বিভাগের পুলিশের ডিসি মাসুদ আলম সাংবাদিকদের বলেন, পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। আমরা এখন পর্যন্ত ১২ জনকে আটক করেছি। তার মধ্যে একজনকে সিটিটিসিতে নেওয়া হয়েছে। তাদের সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

পল্টন মোড়ে থাকা আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানিয়েছেন, বিকাল তিনটার পর অল্প কিছু যানবাহন চলা শুরু করে। পরে সাড়ে তিনটা নাগাদ সব স্বাভাবিক হয়ে গেছে। আশপাশের বন্ধ দোকানপাটও খুলেছে। এখন ওই এলাকায় স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। তবে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ।

জননিরাপত্তার প্রতি হুমকি বিবেচনায় ২০০৯ সালের ২২ অক্টোবর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার হিজবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এরপর থেকে সংগঠনটির তেমন কোনো প্রকাশ্য কার্যক্রম চোখে পড়েনি। তবে গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আবার মাথাচাড়া দিয়েছে হিজবুত তাহরীর। শুরুতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের ব্যাপারে কড়া অবস্থানে না গেলেও তাদের ঘোষিত ‘মার্চ ফর খিলাফাহ’কে কেন্দ্র করে পুলিশের পক্ষ থেকে কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের বার্তায় বলা হয়েছে, হিজবুত তাহরীর একটি নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন। আইন অনুযায়ী এদের সব কার্যক্রম শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

হিজবুত তাহরীরের সব কার্যক্রম শাস্তিযোগ্য অপরাধ : পুলিশ সদরদপ্তর

হিজবুত তাহরীরের সব কার্যক্রম শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে জানিয়েছে পুলিশ সদরদপ্তর। গতকাল শুক্রবার এক বার্তায় এ কথা জানানো হয়।

পুলিশ সদরদপ্তরের বার্তায় বলা হয়, হিজবুত তাহরীর একটি নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন। আইন অনুযায়ী এদের সব কার্যক্রম শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এদিকে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সন্ত্রাসবিরোধী আইন-২০০৯ অনুযায়ী নিষিদ্ধ ঘোষিত যেকোনো সংগঠনের কার্যক্রম দণ্ডনীয় অপরাধ। এর আওতায় হিজবুত তাহরীরের সভা, সমাবেশ, মিছিল, পোস্টার-লিফলেট বিতরণ বা প্রচারের যেকোনো প্রচেষ্টা আইন লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য হবে।

এর আগে, বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, জননিরাপত্তার প্রতি হুমকি বিবেচনায় সরকার ২০০৯ সালের ২২ অক্টোবর হিজবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এরপর থেকে সংগঠনটির যেকোনো কার্যক্রম বেআইনি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। নিষিদ্ধ সংগঠনগুলোর যেকোনো প্রচারণামূলক কার্যক্রম কঠোর নজরদারিতে রয়েছে এবং প্রয়োজন হলে তা দমনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।