রমজান ঘিরে সরকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে ভোজ্যতেল সিন্ডিকেট। ভোজ্যতেলের সরবরাহ বাজারে আমদানিকারকরা কার্যত বন্ধ করে দিয়েছেন। কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। যদিও ভোজ্যতেল সরবরাহকারী কোম্পানিগুলোর দাবি, আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বর্তমান পরিস্থিতিতে বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। কিন্তু রমজান ঘিরে সয়াবিন তেলের সংকটে ভুগছে মানুষ। বাজার থেকে গত নভেম্বর মাসেই বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বোতলজাত সয়াবিন তেল উধাও হয়ে যায়। তারপর ৯ ডিসেম্বর সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৮ টাকা বাড়ানোর পর কিছুটা স্বাভাবিক হয় পরিস্থিতি। আর আরেক দফা সয়াবিন তেলের দাম বাড়াতে গত জানুয়ারি মাসে ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রস্তাব দিয়েছে।
তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে নেয়া হয়নি দাম বাড়ানোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত। বাজার এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সয়াবিন তেল দেশে গত বছরের তুলনায় এবার বেশি পরিমাণে আমদানি হলেও রমজান শুরুর আগেই বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সংকট বিরাজ করছে। দোকানে দোকানে ঘুরেও সহজে মিলছে না সয়াবিন তেল। আবার কোথাও সয়াবিন তেল পাওয়া গেলেও অতিরিক্ত টাকা দিতে হচ্ছে।
বাজারে এখন ২১০ টাকায় ঠেকেছে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিনের দাম। সাধারণত খোলা সয়াবিন তেলের দাম বোতলজাত সয়াবিনের তুলনায় কম থাকে। কিন্তু এখন বোতলজাত সয়াবিনের তুলনায় খোলা সয়াবিনের দাম বেশি। এমন পরিস্থিতিতে ভোজ্যতেল পরিবেশক বা ডিলাররা উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে বোতলজাত সয়াবিন কম পাচ্ছে। আর বোতলজাত সয়াবিন তেলের তুলনায় খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১০ টাকা বেশি। বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৭৫ টাকায় বিক্রির জন্য সরকার দাম নির্ধারণ করে দিলেও ওই দামে তেল পাওয়া যাচ্ছে না। বোতলজাত সয়াবিন তেল এখন স্থানভেদে ১৯৫ থেকে ২০০ টাকা লিটার দরে বিক্রি হচ্ছে। আর খোলা সয়াবিন ২১০ টাকা বিক্রি হচ্ছে প্রতি লিটার।
সূত্র জানায়, চাহিদার তুলনায় দেশে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বেশি ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে। চলতি অর্থবছরে অপরিশোধিত ভোজ্যতেল ২৩ লাখ টন আমদানি হয়েছে। দেশে ভোজ্যতেল হিসেবে সরিষা, তিল, তিশিসহ বিভিন্ন ধরনের তেল উৎপাদন হয় দুই লাখ ৫০ হাজার টন। বাকিটা আমদানি করতে হয়। দেশে বছরে মোট ভোজ্যতেলের চাহিদা ২২-২৩ লাখ টন। অপরিশোধিত (ক্রুড) তেল মূলত আমদানিকারকরা আমদানি করে থাকে। সেখান থেকে কিছু লুজ (খোলা) ও কিছু বোতলজাত করে বিক্রি করা হয়। পরিশোধিত ওই তেলে শুধু বোতলে ভরার প্রক্রিয়াটি পার্থক্য।
চারটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে সয়াবিন তেল আমদানির বাজারে প্রধান ভূমিকা পালন করে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে আরও দুটি ভোজ্যতেল বাজারে কোম্পানি প্রবেশ করেছে। তবে বাজারে তাদের প্রভাব সীমিত।
সূত্র আরও জানায়, ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী গ্রুপগুলো বোতলজাত সয়াবিনের দাম বাড়াতে একজোট হয়ে সরকারের কাছে প্রস্তাব দিলেও রাজি হয়নি সরকার। এর জের ধরেই ব্যবসায়ীরা কৌশলে মার্কেটে সয়াবিন তেলের সংকট তৈরি করেছে বলে ভোক্তাদের অভিযোগ।
খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের মতে, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে না বোতলজাত সয়াবিন। যদিও সরকারের কাছে আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা বাজার থেকে ভোজ্যতেলের সংকট দূর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। টিসিবির তথ্যানুসারে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম খুচরা দাম এখন ১৭৫ থেকে ১৭৬ টাকা। যা গত মাসের তুলনায় প্রায় এক শতাংশ বেশি। আর গত বছরের তুলনায় সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ২ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
এদিকে ভোজ্যতেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ কমিয়ে দেয়ার অভিযোগ সঠিক নয়। সরবরাহ কমিয়ে দেয়ার কোনো সুযোগ নাই। তবে রমজান উপলক্ষে স্বাভাবিক নিয়মেই বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ বাড়বে। কারণ রমজানে বাজারে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায় সয়াবিন তেলের চাহিদা। রমজানকে কেন্দ্র করে বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তারপরও যদি সংকট সৃষ্টি হয়, সেক্ষেত্রে ওই সংকটের জন্য পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা দায়ী। বেশি মুনাফার আশায় অতীতেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের রুটিন দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত সচিব আব্দুর রহিম খান জানান, বাজারে ভোজ্যতেলের সংকট কেটে যাচ্ছে। মন্ত্রণালয় থেকে বিষয়টি মনিটর করা হচ্ছে। আর রমজানকে কেন্দ্র করে অনৈতিক মুনাফার আশায় দাম বাড়িয়ে বিক্রি করার সুযোগ নাই। মন্ত্রণালয়ের একাধিক মনিটরিং টিম বাজারে কাজ করছে।