বেপরোয়া হয়ে উঠছে অপরাধীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: মার্চ ১৪, ২০২৫, ১২:৪৬ এএম
বেপরোয়া হয়ে উঠছে অপরাধীরা
  • আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বেড়েছে খরচ

  • কমানো যাচ্ছে না নানামুখী আতঙ্ক

আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিপুল অর্থ খরচ হলেও কমানো যাচ্ছে না নানামুখী আতঙ্ক। বরং দেশজুড়েই আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে চলেছে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতির মতো অপরাধ। আর রাজধানী ও নগর এলাকাগুলোয় সন্ধ্যার পর অত্যন্ত ভীতি নিয়ে নগরবাসীকে চলাচল করতে হচ্ছে। আসামি ধরতে গিয়ে অনেক জায়গায় পুলিশও আক্রমণের শিকার হচ্ছে। 

অথচ চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বরে সরকার জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা রক্ষায় মোট আট হাজার ৭২২ কোটি টাকা খরচ করেছে সরকার। তাতে প্রতি মাসে গড়ে এক হাজার ৭৪৪ কোটি টাকারও বেশি ব্যয় হয়েছে। কিন্তু তারপরও পরিস্থিতির উন্নতি না ঘটে বরং আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে অপরাধীরা। স্বরাষ্ট্র এবং অর্থ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাস জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সরকার জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা রক্ষায় মোট আট হাজার ৭২২ কোটি টাকা খরচ করেছে। তাতে প্রতি মাসে গড়ে এক হাজার ৭৪৪ কোটি টাকারও বেশি ব্যয় হয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত সাত মাসে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে ওই বিপুল পরিমাণ খরচের বিন্দুমাত্র প্রভাব পড়েনি। 

বিগত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা খাতে সরকারের মোট ব্যয় আট হাজার ৭১২ কোটি টাকা হলেও চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে ওই ব্যয় ১০ কোটি টাকা বেড়েছে। প্রতি মাসে গড়ে এক হাজার ৭৪৪ কোটি টাকারও বেশি ব্যয় হয়েছে। আর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ওই খাতে সব মিলিয়ে ২৫ হাজার ৮৮৭ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীগুলোর পেছনে ওই অর্থ ব্যয় করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, বিগত ২০২৩-২৪ অর্থবছরটি নির্বাচনি বছর ছিল। সেজন্য ওই বছরে আইনশৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তা খাতে বিপুল অংকের বরাদ্দ এবং খরচ করা হয়। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে আইনশৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তায় খরচ বাড়লেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।

 যদিও নির্বাচনি বছরে পুলিশের নিয়মিত দায়িত্বের বাইরে অতিরিক্ত কিছু দায়িত্ব পালন করতে হয়। কিন্তু গত ৫ আগস্ট দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর কার্যত তিনদিন দেশের কোথাও পুলিশের কোনো কার্যক্রম ছিল না। 

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর পুলিশ কর্মস্থলে ফিরে এলেও অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে টহল কার্যক্রম বা চেকপোস্ট কার্যক্রম সেভাবে দেখা যায়নি। আর গত কয়েক মাসে জনশৃঙ্খল ও নিরাপত্তায় ব্যয় বাড়লেও পরিস্থিতির অবনতি ঠেকানো যায়নি।

সূত্র আরও জানায়, দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পুলিশ ব্যাপক জনরোষের শিকার হয়। পুলিশের ৪৬০টি থানা ও স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।  তবে বিগত ছয় মাসেরও বেশি পেরিয়ে গেলেও এখনো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। বরং ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীর মতো এলাকাগুলোয় খুন, অপহরণ, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের মতো অপরাধের ঘটনা বেড়েছে। 

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ এখনো কার্যকর ভূমিকা নিতে পারেনি। গত বছরের আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে খুন, অপহরণ, চুরি, ছিনতাই ও পুলিশের ওপর মোট পাঁচ হাজার ৮৬২টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৩২৯টি অপহরণ ও এক হাজার ৫৪৫টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। তার সঙ্গে ৬২৩টি ছিনতাই ও তিন হাজার ১৫৩টি চুরির ঘটনা ঘটেছে। আর দায়িত্ব পালনকালে পুলিশের ওপর ১৯২টি হামলার ঘটনা ঘটেছে।

এদিকে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমাবনতি অর্থনীতিতেও চাপ তৈরি করছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি বাড়ছে। বিশেষ করে পণ্য পরিবহন খাতে এ চাঁদাবাজি মাত্রাতিরিক্ত। বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি ঢাকার কারওয়ান বাজার ও চট্টগ্রামের পতেঙ্গাসহ অন্যান্য স্থানে পুলিশ বাহিনীর ইউনিফর্মধারী সদস্যদের সঙ্গে কিছু উচ্ছৃঙ্খল, সমাজবিরোধী ও আইন অমান্যকারী ব্যক্তির সঙ্গে অনভিপ্রেত, অনাকাঙ্ক্ষিত ও অসৌজন্যমূলক ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এতে পুলিশ বাহিনী মর্মাহত, চরম উদ্বিগ্ন ও আশাহত। কিছু উচ্ছৃঙ্খল ও শান্তি বিঘ্নকারী ব্যক্তি অযাচিতভাবে পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। তাতে জনমনে অশান্তি, হতাশা সৃষ্টি ও জনশৃঙ্খলা ভঙ্গের মতো পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে। বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী জনগণ ও সরকারের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ইস্পাতসম মনোবল নিয়ে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করছে।

অন্যদিকে সার্বিক বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর জানান, পুলিশ পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিটি পুলিশ সদস্য কাজ করে যাচ্ছেন। রাজধানীসহ সারা দেশেই বাড়ানো হয়েছে টহল ও তল্লাশিচৌকির কার্যক্রম। পুলিশ বাহিনী ভবিষ্যতেও পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে জনআকাঙ্ক্ষা পূরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।