বিপুলসংখ্যক কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: মার্চ ১৫, ২০২৫, ০১:০০ এএম
বিপুলসংখ্যক কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ

দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিপুলসংখ্যক কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। বিগত সাত মাসে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়েছে গাজীপুর, সাভার, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীর ৯৫টি কারখানা। তার বাইরেও কয়েকটি কারখানা অস্থায়ীভাবে বন্ধ হয়েছে। কারখানাগুলো বন্ধ হওয়ায় কাজ হারিয়েছে প্রায় ৬২ হাজার কর্মচারী-শ্রমিক। কিন্তু অধিকাংশ শ্রমিক এখনো তাদের বকেয়া মজুরি এবং সার্ভিস বেনিফিট (চাকরির অবসায়নের পর প্রাপ্ত আর্থিক সুবিধা) বুঝে পায়নি।

মূলত বেশির ভাগ মালিক আর্থিক সংকট ও ক্রয়াদেশ না থাকায় কারখানা বন্ধ করেছে। তাছাড়া বিগত সরকারের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত মালিকদের কয়েকটি কারখানায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করায় সেগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। পাশাপাশি ক্ষমতাচ্যুত বিগত সরকারের ঘনিষ্ঠ কিছু ব্যবসায়ী আত্মগোপনে থাকায় রুগ্ন হয়ে পড়েছে তাদের কারখানা। শিল্প পুলিশ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ইতোমধ্যে বন্ধ হওয়া কারখানার মধ্যে গাজীপুরে ৫৪টি, নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদীতে ২৩টি ও সাভার-আশুলিয়ায় ১৮টি রয়েছে। ওসব কারখানায় কাজ করত ৬১ হাজার ৮৮১ জন শ্রমিক-কর্মচারী। বেকার শ্রমিকরা প্রায়ই কারখানা খুলে দেয়া ও বকেয়া পাওনার দাবিতে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করছে। তাতে বাড়ছে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি।

সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী ও মুন্সিগঞ্জ জেলায় প্রায় দুই হাজার শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। তার মধ্যে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে ২৩ প্রতিষ্ঠান। ওসব শিল্পকারখানার প্রায় ছয় হাজার শ্রমিক-কর্মচারী চাকরি হারিয়েছে। গত সাত মাসে গ্রিন বাংলা হোম টেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, এশিয়ান ফ্যালকন গার্মেন্টস, জিএল ফ্যাশন, মাস্টার টেক্সটাইল, ওয়েস্ট বেস্ট অ্যাটায়ার্স, স্টার কাটিং অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংসহ ২১টি কারখানা বন্ধ হয়। সব কারখানাই ছোট ও মাঝারি। আর্থিক সংকট ও পর্যাপ্ত ক্রয়াদেশের অভাবে কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যায়। তার বাইরে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীর মালিকানাধীন গাজী গ্রুপের দুই কারখানার কয়েকটি ইউনিট বন্ধ রয়েছে।

নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত কারাখানা দুটিতে চার হাজার শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করতো। দুষ্কৃতকারীদের লুটপাট ও অগ্নিসংযোগে গাজী গ্রুপের কারখানা দুটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। আর গাজীপুরে ছোট-বড় মিলিয়ে মোট নিবন্ধিত কারখানা দুই হাজার ১৭৬টি। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি তৈরি পোশাক কারখানার সংখ্যা এক হাজার ১৫৪টি। গত আগস্টের পর জেলার ৫৪টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। বন্ধ হওয়া কারখানার প্রায় সব কটিই তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের। গাজীপুরে বন্ধ হওয়া কারখানার মধ্যে উল্লেখযোগ্য টিএমএস অ্যাপারেলস, নায়াগ্রা টেক্সটাইল, মাহমুদ জিন্স, হার্ডি টু এক্সেল, পলিকন লিমিটেড, অ্যাপারেল প্লাস, মাহমুদ জিন্স অ্যাপারেলস, টিআরজেড ও দি ডেল্টা নিট।

সূত্র আরও জানায়, গাজীপুরে বন্ধ হওয়া ৫৪ কারখানার ৪৫ হাজার ৭৩২ শ্রমিক-কর্মচারী চাকরি হারিয়েছে। এর মধ্যে বেক্সিমকোর ৩৩ হাজার ২৪৪ জন শ্রমিক রয়েছে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের সারাবো ও কাশিমপুরে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ১৪ কারখানা বন্ধ করে দেয়া হয়। তাছাড়া ঢাকার নিকটবর্তী সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাইয়ে এক হাজার ৮৬৩টি শিল্প-কারখানা রয়েছে। তার মধ্যে ৭৪৫টি তৈরি পোশাক কারখানা। সেখানে গত সাত মাসে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়েছে ১৮টি তৈরি পোশাক কারখানা। তাতে বেকার হয়েছেন ১০ হাজার ১২৭ জন শ্রমিক-কর্মচারী।

গত সাত মাসে সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাই অঞ্চলের জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন, বেস্ট ওয়ান সোয়েটার, এমএস সোয়েটার, সাভার স্পোর্টসওয়্যার, বার্ডা গ্রুপ, র‌্যামস ফ্যাশন অ্যান্ড এমব্রয়ডারি, প্রিয়াঙ্কা ফ্যাশন, জাভান টেক্স নিটওয়্যার ইত্যাদি কারখানা বন্ধ হয়। আর আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়নের ধনাইদ এলাকার জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন গত আগস্টে বন্ধ হয়। কারখানাটিতে কাজ করতো সাড়ে চার হাজার শ্রমিক-কর্মচারী। বর্তমানে কারখানার তালাবদ্ধ ফটকে নোটিশ ঝুলছে। গত সাত মাসে বন্ধ হওয়া অধিকাংশ কারখানা শ্রমিকরা ক্ষতিপূরণ পাননি। তবে কিছু শ্রমিক ক্ষতিপূরণ পেলেও তা খুবই যৎসামান্য।

এদিকে এ প্রসঙ্গে নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানান, হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানার শ্রমিকদের বকেয়া বেতন-ভাতা জোগাড় করতে মালিকদের অনেক কাঠখড় পোড়াতে হচ্ছে। প্রায় সব কটির কারখানার শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ বাকি আছে। ফলে বর্তমানে বেকার হওয়া শ্রমিকদের কেউ কেউ চাকরি পাচ্ছে। কেউ কেউ গ্রামে চলে যাচ্ছে। আবার অনেকে বেকার থাকছে।