সামর্থ্যের চেয়ে বেশি প্রকল্প নেয়ার কারণেই নির্ধারিত সময়ে শেষ হচ্ছে না প্রকল্পের কাজ
আর প্রকল্পের মেয়াদ বাড়া মানেই ব্যয় বাড়া
বিভিন্ন সময় এ বিষয়ে সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে ক্ষোভ প্রকাশ করা হলেও পরিস্থিতির কোনো বদল ঘটছে না
গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৩৪৫টি প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হিড়িক পড়েছে। মূলত সামর্থ্যের চেয়ে বেশি প্রকল্প নেয়ার কারণেই নির্ধারিত সময়ে শেষ হচ্ছে না প্রকল্পের কাজ। আর প্রকল্পের মেয়াদ বাড়া মানেই ব্যয় বাড়া। বিভিন্ন সময় এ বিষয়ে সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে ক্ষোভ প্রকাশ করা হলেও পরিস্থিতির কোনো বদল ঘটছে না।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ১৪২টি প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব পেয়েছে, তার ১৩৬টি প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে বাস্তবায়ন তদারকি ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। তাছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং বিভাগ গত মাসে পরিকল্পনা কমিশন এবং আইএমইডির কাছে ৫০টিরও বেশি নতুন প্রস্তাব জমা দিয়েছে, যার মধ্যে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে ছয়টি। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৩৪৫টি প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। আর আগের অর্থবছরে ৪২৯ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, মেয়াদ বাড়ানোয় শেষ করতে বছরের পর বছর লেগে যায়। তাতে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ার পাশাপাশি জনসাধারণও উন্নয়ন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যদিও বলা হয়, প্রকল্পের ব্যয় না বাড়িয়েই প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। তাতে প্রকল্পের সময় বাড়ানোর কারণে আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে না। এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নে অদক্ষতাকে বৈধতা দেয়।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ বৃহত্তর ঢাকা টেকসই নগর পরিবহন প্রকল্পের মেয়াদ ডিসেম্বর পর্যন্ত আরও এক বছরের জন্য বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠিয়েছে। ২০১২ সালে শুরু ওই প্রকল্পটি ২০১৫ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিল। প্রকল্পের কিছু অংশ বাদ দেয়া এবং কয়েক ধাপে মেয়াদ বাড়ানোতে ১০৯ শতাংশ ব্যয় বেড়েছে।
সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই ছয়টি অবকাঠামো প্রকল্পের সম্প্রসারণের অনুমোদন দিয়েছে। তাছাড়া বাস্তবায়নকারী সংস্থা, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা কমিশন এবং একনেক পর্যায়ক্রমে অনুমোদন প্রক্রিয়ার অধীনে ওই প্রকল্পগুলো এর মধ্যে কমপক্ষে চারটি ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, এক গবেষণায় দেখা গেছে নির্ধারিত সময়ে শেষ হয় না দেশের ৯৫ শতাংশ প্রকল্পের কাজ। ওসব প্রকল্পের মেয়াদ বারবার বাড়িয়ে শেষ করতে হয়। নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে না পারায় ওসব প্রকল্প বাস্তবায়নে গড়ে প্রায় ২৬ শতাংশ ব্যয় বাড়ে। সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের ৮০ শতাংশ প্রকল্পই নির্ধারিত সময়ে শেষ হয় না। বারবার মেয়াদ বাড়ানোর কারণে অধিদপ্তরের প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় প্রায় ৫৬ শতাংশ বাড়ে। আর জমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে প্রায় ২৭ শতাংশ প্রকল্পের ব্যয় বাড়ে। কাজের পরিধি পরিবর্তনের কারণে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ে ৪৯ শতাংশ।
মূলত প্রকল্প তৈরিতে দুর্বলতা, দক্ষতার অভাবে অন্য প্রকল্পের ছক অনুসরণ করে নতুন প্রকল্প তৈরি, প্রকল্প গ্রহণে সুবিধাভোগীদের মতামত না নেয়া, প্রকল্প নেয়ার আগে সম্ভাব্য ভূমি চিহ্নিত না করা, এমটিবিএফের আর্থিক সীমা অনুসরণ না করা, বৈদেশিক অর্থায়ন নিশ্চিত না করেই প্রকল্প অনুমোদনসহ আরও কিছু কারণ প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি চলে।
এদিকে এ বিষয়ে পরিকল্পনা বিভাগ সংশ্লিষ্টদের মতে, পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করায় অভ্যস্ততার অভাবে প্রকল্প নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হয় না। আর যারা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রকল্প পরিচালকদের প্রশিক্ষণের এবং অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে। তাছাড়া প্রকল্পে কেনাকাটার ক্ষেত্রেও তাদের কারিগরি জ্ঞান খুব সীমিত।