চাহিদার সঙ্গে বেড়েছে দেশি পোশাকের দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: মার্চ ২৬, ২০২৫, ১২:২৫ এএম
চাহিদার সঙ্গে বেড়েছে দেশি পোশাকের দাম

ঈদুল ফিতরের বাকি আর মাত্র কয়েক দিন। শেষ সময়ে রাজধানীর মার্কেটগুলোতে জমে উঠেছে কেনাকাটা। ঈদের কেনাকাটায় ছোট-বড়, ধনী-গরিব কেউ পিছিয়ে নেই। নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী ক্রেতারা ছুটছেন ফুটপাত থেকে শুরু করে ছোট-বড় মার্কেট ও বিপণি-বিতানগুলোতে। ক্রেতাদের এই ভিড়ে দোকানিদেরও ব্যস্ততার শেষ নেই।

রাজধানীর মৌচাকের সেন্টার পয়েন্ট। এই মার্কেটটির প্রতিটি দোকানে বাচ্চাদের প্রায় সবধরনের পণ্যই পাওয়া যাচ্ছে।

ক্রেতারা বলছেন, দাম এবং মান দুটোতে সেরা এই মার্কেটটি। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার দেশি পোশাকের চাহিদা অনেক বেড়েছে। তাই কিছুটা বাড়তি দাম দিয়েই কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। এই মার্কেটে বাচ্চাদের পোশাক কিনতে মেয়েরাই বেশি আসছেন। ক্রেতাদের মধ্যে ৮০ শতাংশই নারী। মায়েরা তাদের সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে এসে পছন্দের পোশাক কিনছেন। গতবারের তুলনায় এবার বিক্রি ভালো। এজন্য সন্তোষ প্রকাশ করছেন ব্যবসায়ীরা।

মার্কেটের বেশ কয়েকজন পোশাক বিক্রেতা জানান, দুপুর থেকে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত প্রচুর লোকের সমাগম হচ্ছে এই মার্কেটে। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর থেকে ক্রেতাদের সমাগম বাড়তে থাকে। এই মার্কেটে বাচ্চাদের পর্যাপ্ত কালেকশন রয়েছে। ক্রেতারা নিজের পছন্দ অনুযায়ী পোশাক কিনছেন। বেশ কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাধ ও সাধ্যের মধ্য থেকে ঈদ কেনাকাটা সারছেন তারা। শুধু কাপড়ের দোকানে নয়, ভিড় রয়েছে জুতা, কসমেটিক্স, প্রসাধনীসহ অন্যান্য দোকানগুলোতেও।

ঈদের কেনাকাটায় মার্কেটগুলোতে প্রায় সবধরনের পণ্যই পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে শার্ট-প্যান্ট, টি-শার্ট, পাঞ্জাবি-পায়জামা, ট্রাউজার, বাচ্চাদের পোশাক, শাড়ি, শার্ট পিস, প্যান্ট পিস, থ্রি-পিস, বেল্ট, জুতা, গেঞ্জি, লুঙ্গি ইত্যাদি। তবে এই মুহূর্তে ক্রেতাদের আকর্ষণ এবং আগ্রহ বেশি বাচ্চাদের পোশাকের দিকে। রঙ-বেরঙের পোশাকে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে সেন্টার পয়েন্টের দোকানগুলো। ঈদকে রঙিন করে তুলতে দোকানগুলোতে শিশুদের জন্য বাহারি পোশাক তোলা হয়েছে। ঈদ সামনে রেখে এবার শিশুদের পোশাকেও এসেছে বৈচিত্র্য।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন মাসুদ রানা। তিনি রাজধানীর মৌচাকের সেন্টার পয়েন্টে এসেছেন বাচ্চাদের জন্য পোশাক কিনতে। তিনি বলেন, সব সময় এই মার্কেট থেকেই বাচ্চাদের পোশাক কিনি। এখানে ভালো পোশাক পাওয়া যায় এবং মানেও ভালো। দামটাও সাধ্যের মধ্যেই থাকে।

খিলগাঁও তালতলা মার্কেটে গিয়েছিলাম। তবে ওখানে মনমতো পোশাক পাওয়া যাচ্ছে না। তাই এই মার্কেটে চলে এসেছি। এখানে এসে বাচ্চাদের জন্য পোশাক কিনেছি। বিভিন্ন দোকানে অনেক কালেকশন রয়েছে।

সেন্টার পয়েন্টে আসা ক্রেতা কুনসুমা রুমি নিজের জন্য কী কিনেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিজের জন্য এখনো কিছু কেনা হয়নি। বাচ্চাদের জন্য আগে কিনছি। নিজের জন্য ওভাবে কখনো ভাবা হয় না। বাচ্চাদের আনন্দেই আমাদের আনন্দ।

রাজধানীর নন্দিপাড়া থেকে বাচ্চাদের পোশাক কিনতে মৌচাক সেন্টার পয়েন্টে এসেছেন বিপাশা আক্তার। তিনি বলেন, সেন্টার পয়েন্টে বাচ্চাদের সুন্দর সুন্দর পোশাক পাওয়া যায়। দামও বেশি নয়। এই মার্কেট যেহেতু বাচ্চাদের পোশাকের জন্য সেরা, তাই এখানে এলে ঘুরে ঘুরে পছন্দেও পোশাকটি পাওয়া যায়।

সোয়াদ ফ্যাশনের মো. সোহেল বলেন, দুপুরের পর থেকে এই মার্কেটে বিক্রি শুরু হয়ে চলে মধ্যরাত পর্যন্ত। কিন্তু সন্ধ্যার পর থেকে ক্রেতা বাড়তে থাকে। মোটামুটি ভালো বিক্রি হচ্ছে। এই মার্কেটে নারীরাই বেশি আসে।

সেন্টার পয়েন্টের কটন প্লাসের মোহাম্মদ সাজু বলেন, ঈদ উপলক্ষে মোটামুটি ভালো বেচাবিক্রি হচ্ছে। কারণ ইন্ডিয়ান পণ্য আসতে না পারলেও সেই গ্যাপটা পূরণ করেছে বাংলাদেশে তৈরি পোশাকের মাধ্যমে। আমাদের এই মার্কেট মূলত বাচ্চাদের পোশাকের জন্যই সেরা। আর বাচ্চাদের সেই পোশাকগুলো কিনতে মায়েরা আসছেন। বাবারা খুব কম আসছেন। দুপুরের পর থেকে বেচাবিক্রি শুরু হয় এবং ইফতারের পর বাড়তে থাকে। এরপর মধ্যরাত পর্যন্ত চলতে থাকে বিক্রি। গতবারের তুলনায় এবার পোশাকের দাম কিছুটা বাড়তি।

সেন্টার পয়েন্টের মদিনাজের নুর মোহাম্মদ বলেন, দশম রোজা থেকে শুরু হয়ে শেষ রোজা পর্যন্ত ঈদের বেচাকেনা হয়। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ক্রেতা বেশি থাকে। গতবারের তুলনায় এবার বেচাবিক্রি ভালো হচ্ছে।

এই বিক্রেতা বলেন, এ মার্কেটটি মূলত বাচ্চাদের পোশাকের জন্য ভালো। সবধরনের ক্রেতাই এখানে আসে। তবে মিড লেভেলের ক্রেতা বেশি আসে। এবার দেশি কাপড়ে চাহিদা বেশি হওয়ায় দামটা একটু বেশি।