ঈদযাত্রায় বড় ধরনের ভোগান্তি নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: মার্চ ২৯, ২০২৫, ১২:৫৪ এএম
ঈদযাত্রায় বড় ধরনের ভোগান্তি নেই
  • সরকারি ছুটি শুরু হওয়ায় ঈদুল ফিতর উদযাপনে ঢাকা ছাড়ছেন মানুষ

নয় দিনের সরকারি ছুটি শুরু হওয়ায় ঈদুল ফিতর উদযাপন করতে রাজধানী ছাড়ছেন মানুষ। তবে ঈদযাত্রার প্রথম দিনে মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে বাড়তি চাপ দেখা যায়নি। দুই-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া স্বস্তিতেই বাড়ি ফিরছে ঘরমুখো যাত্রীরা।

গতকাল শুক্রবার সকালে মহাখালী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, যাত্রীরা নির্ধারিত সময়ে বাস পাচ্ছেন। অনেকে আগেই টিকিট কেটে রেখেছেন, আবার কেউ টার্মিনালে এসে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করছেন। কিছু সময় অপেক্ষা করলেও বড় ধরনের ভোগান্তি নেই। 

এ টার্মিনাল থেকে ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, জামালপুর, কিশোরগঞ্জ, রাজশাহী, নওগাঁ, সিলেট ও সুনামগঞ্জের বাস ছেড়ে যায়। ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে এবার নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে ইউনাইটেড ট্রান্সপোর্ট, যা এনা পরিবহনের আগের কাউন্টারে যাত্রীসেবা দিচ্ছে। যাত্রীরা তাৎক্ষণিক টিকিট কেটে বাসে উঠতে পারছেন এবং বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ নেই।

চাকরিজীবী রাকিবুল ইসলাম বলেন, পাঁচ মিনিট লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট পেয়েছি, বাড়তি ভাড়াও নেয়নি। একই অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন সরকারি কর্মকর্তা রহিম শেখ। তবে এসি বাসের সংখ্যা কম থাকায় কিছু যাত্রী ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। 

বেসরকারি চাকরিজীবী আক্তার হোসেন জানান, এসি বাসের টিকিট পেতে প্রায় আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে। ইউনাইটেড ট্রান্সপোর্টের ফোরম্যান হোসেন আলী জানান, বেলা ১১টা পর্যন্ত ৩৭টি বাস ছেড়ে গেছে, তবে এসি বাস মাত্র ১২টি থাকায় কিছু যাত্রী সমস্যায় পড়ছেন।

এনা পরিবহনের বুকিং মাস্টার অর্জুন জানান, তাদের বাস কম থাকায় অনেক যাত্রী টিকিট না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। কিশোরগঞ্জ রুটের অনন্যা ক্লাসিক পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার আমান জানান, সকাল থেকে ৩৫-৩৬টি বাস ছেড়েছে, তবে চাপ খুব বেশি নেই।

এদিকে, টাঙ্গাইলগামী বিনিময় ও সৌখিন পরিবহনের বিরুদ্ধে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ এসেছে। প্রতি টিকিটে ১০০ টাকা বেশি নেয়া হলেও যাত্রীদের অভিযোগের ভিত্তিতে বিআরটিএ একটি বাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে।

যাত্রীসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিআরটিএ, র্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা মহাখালী টার্মিনালে দায়িত্ব পালন করছেন।

এদিকে, দুপুরে মহাখালী বাস টার্মিনালে উপস্থিত হয়ে বিআরটিএর চেয়ারম্যান মো. ইয়াসিন জানিয়েছেন, ঈদে ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি হবে না এবং সড়কে পর্যাপ্ত যানবাহন রয়েছে।

তিনি বলেন, সড়কে যানবাহনের বিশৃঙ্খলা কঠোরভাবে বন্ধ করা হচ্ছে। যানবাহনের কোনো ঘাটতি হবে না। ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগ কমাতে সার্বক্ষণিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেস্ট নিযুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে শৃঙ্খলার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। যানবাহন ও মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে প্রশিক্ষিত কুকুর দিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে। বাসস্ট্যান্ডে যাতে কোনো কাউন্টার অতিরিক্ত ভাড়া নিতে না পারে সে বিষয়ে নজরদারি করা হচ্ছে? শৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনী মহড়া দিয়েছে। যত্রতত্র পার্কিংও নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সেনাবাহিনী। 

তিনি বলেন, সড়কে যানবাহনের বিশৃঙ্খলা কঠোরভাবে বন্ধ করা হচ্ছে এবং কোনো ঘাটতি হবে না। ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগ কমাতে সার্বক্ষণিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া, মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে শৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। যানবাহন ও বাসস্ট্যান্ডে প্রশিক্ষিত কুকুর দিয়ে নিরাপত্তা পরীক্ষা করা হচ্ছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় নিয়ন্ত্রণে নজরদারি চলছে, এবং যত্রতত্র পার্কিংও সীমিত করা হয়েছে।

ঈদের চাপ নেই গাবতলীতে

অন্যান্য বছর ঈদের ছুটি শুরুর পরপরই যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় থাকত বাস টার্মিনাল ও ট্রেন স্টেশনগুলোতে। যাত্রীদের ভিড়ে পা ফেলার জায়গা থাকতো না। কিন্তু এবার সেই চিত্র নেই।

ঈদের ছুটির প্রথম দিন রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালে যাত্রী নেই বললেই চলে। হাঁকডাকেও মিলছে না যাত্রী। কাউন্টারগুলো যাত্রীর জন্য খাঁ খাঁ করছে। শতাধিক কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা কর্মীরা অলস সময় পার করছেন।

ঈদের ছুটি লম্বা হওয়ায় এমনটা হয়েছে বলে ধারণা করছেন কাউন্টারে থাকা কর্মীরা। তবে রাত থেকে যাত্রীর সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশাবাদী তারা।

গতকাল শুক্রবার দুপুরে গাবতলী টার্মিনাল ঘুরে বাস কাউন্টার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

রুবেল মিয়া ঈগল পরিবহনের কাউন্টারে টিকিট বিক্রি করেন। তিনি    বলেন, সকাল ১০টায় সব বাস ছেড়ে গেছে। এখন যেগুলো যাওয়ার জন্য প্রস্তুত সেগুলোতে যাত্রী নেই। প্রতি বাসে পাঁচ থেকে ছয়জন যাত্রী মিলছে। এতে তো বাস ছাড়া যায় না।

জননী পরিবহনের সুমন টার্মিনালের মুখে পুলিশ কন্ট্রোল রুমের সামনে টিকিট নিয়ে হাঁকডাক করছেন। তিনি বলেন, ‘যাত্রী নেই। ডাকতেছি যদি দুই একজন পাই। আর রাতে কী হবে তাতো জানি না।’

ঈদের আগ মুহূর্তে যাত্রীদের এমন পরিস্থিতি দেখে হতাশা ব্যক্ত করেছেন কাউন্টারের কর্মীরা। তারা বলছেন, ‘এমন অবস্থা আগে কখনও হয়নি। যারা ঢাকা ছাড়ছেন তাদের অনেকে ইতোমধ্যে চলে গেছেন। রাতে বাকিরা রাজধানী ছাড়বেন। অথচ যাত্রী নেই।’

পরিবহন শ্রমিকরা বলছেন, টিকিট এখনও অনেক আছে কিন্তু যাত্রী নাই। ফলে তারা সকাল ১০টার পর বিশ্রাম, গল্প গুজব করে সময় কাটাচ্ছেন।

মাঝেমধ্যে দু-একজন যাত্রী এলে বিভিন্ন কাউন্টারের লোকজন তাদের ঘিরে ধরছেন। অনেকে হ্যান্ড মাইকেও যাত্রী ডেকে বেড়াচ্ছেন।

বাস সংশ্লিষ্টরা হতাশ হলেও যাত্রীরা আছেন স্বস্তিতে। যারাই গ্রামে যাওয়ার জন্য কাউন্টারে আসছেন ভোগান্তি ছাড়া সহজেই টিকিট কিনছেন তারা। যাত্রী কম দেখে অনেকে দরদাম করছেন।

ইসলাম পরিবহনের লিটন বলেন, ‘আজ আমরা সকালে যাত্রী পেয়েছি। এখন একটু খরা। তবে দুপুরে কিছু গার্মেন্টস ছুটি হলে বিকেল থেকে যাত্রী বাড়বে।’

কুষ্টিয়া রুটে চলাচলকারী সনি পরিবহনের কাউন্টারের কর্মী রিপন বলেন, ‘যাত্রীর চাপ নেই খুব একটা। তবে স্বাভাবিকভাবে গাড়িগুলো ছেড়ে যাচ্ছে। গত দুই-তিন দিনের তুলনায় আজকে কিছুটা যাত্রীর চাপ আছে। কিন্তু ঈদের বাজার অনুযায়ী চাপ নেই।’

সকাল থেকে কতগুলো গাড়ি ছেড়ে গেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের সকাল থেকে ২-৩টা গাড়ি ছেড়ে গেছে। 

এদিকে ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে কড়া নজরদারি রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তাদের টহল টিম বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখছে।