ট্রাম্পের শুল্ক বিরতি

ভরসা পাচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা

আমার সংবাদ ডেস্ক প্রকাশিত: এপ্রিল ১৩, ২০২৫, ১২:২৯ এএম
ভরসা পাচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা

 যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্ব বাণিজ্যে নতুন মোড় নেয়ার আভাস দিলেও বিনিয়োগকারীরা তাতে স্বস্তি পাচ্ছেন না। সম্প্রতি ট্রাম্প তার কঠোর শুল্কনীতি আংশিকভাবে শিথিল করলেও চীনের জন্য তা আরও কঠোর করেছেন। এতে আবারও অস্থির হয়ে উঠেছে বৈশ্বিক অর্থনীতি ও পুঁজিবাজার। 

চীন চলতি বছর এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ১০টি সিনেমা আমদানি করেছে, যার মধ্যে রয়েছে জনপ্রিয় ভিডিও গেমভিত্তিক সিনেমা ‘এ মাইনক্রাফট মুভি’ও। কিন্তু ট্রাম্প যখন অধিকাংশ দেশের জন্য ‘পারস্পরিক’ শুল্ক ১০ শতাংশে নামিয়ে আনলেন এবং চীনের জন্য তা বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করলেন, তখন চীনের চলচ্চিত্র প্রশাসন পাল্টা ঘোষণা দেয়, দেশটির মূল ভূখণ্ডে হলিউড সিনেমা প্রদর্শন কমিয়ে আনা হবে। প্রশাসনের ভাষায়, এই শুল্ক চীনা দর্শকের মধ্যে মার্কিন সিনেমার প্রতি ইতিবাচক মনোভাব কমিয়ে দেবে।

এরপর ১১ এপ্রিল চীনের মন্ত্রিসভা ট্রাম্পের পদক্ষেপের সমপরিমাণ পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়। তারা জানায়, যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেউ এখন আর চীনে কিছু বিক্রি করতে পারবে না- এ অবস্থায় আরও পাল্টা ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজন নেই। এমনকি চীন সরকার স্পষ্ট বলে দেয়, যুক্তরাষ্ট্র আরও কিছু চাপালে চীন তাতে গুরুত্ব দেবে না। বিনিয়োগকারীরাও যেন ঠিক একই মনোভাব দেখাচ্ছেন।

৯ এপ্রিল ট্রাম্প ৯০ দিনের শুল্ক বিরতি ঘোষণার পর বাজারে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফিরেছিল। শেয়ারবাজার চাঙ্গা হয়ে ওঠে এবং সরকারি বন্ডের সুদের হার ওঠানামা থেমে যায়। কিন্তু সেই সুখ স্থায়ী হয়নি। পরদিনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান স্টক সূচক ৩ দশমিক ৫ শতাংশ পড়ে যায়, ডলার ফের দুর্বল হয় এবং বন্ডের মূল্য কমে সুদের হার বেড়ে যায়। বিশেষ করে ১০ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের ক্ষেত্রে সুদের হার মাত্র এক সপ্তাহে বেড়ে দাঁড়ায় ৪ দশমিক ৫ শতাংশে, যা অর্থনীতির ধীরগতির পূর্বাভাসের পরেও অস্বাভাবিক বৃদ্ধি।

জেপি মরগান চেজের অর্থনীতিবিদরা বলছেন, চীনা আমদানি হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়া, আত্মবিশ্বাসে ধাক্কা এবং নীতিগত বিশৃঙ্খলা- সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্র মন্দা এড়াতে পারবে কি না, তা এখন প্রশ্নবিদ্ধ।

স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে এমন মন্দা আশঙ্কা সুদের হার কমিয়ে দিতো আর বন্ডের দাম বাড়িয়ে তুলত। কিন্তু এবার সেই হিসাব মিলছে না।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান টিএস লম্বার্ডের ফ্রেয়া বিমিশ বলেন, যদি আপনার নিরাপদ আশ্রয় থাকে মার্কিন ট্রেজারি, তাহলে এখন নতুন আশ্রয় খুঁজুন। বিশ্লেষকদের মতে, কিছু হেজ ফান্ড বন্ড বিক্রি করে তহবিল গুছিয়ে নিচ্ছে। আবার অনেকে দীর্ঘমেয়াদি মার্কিন ঋণপত্র ঝুঁকিপূর্ণ মনে করায় ‘টার্ম প্রিমিয়াম’ বাড়িয়ে দিচ্ছেন। ফলে ডলারের মান পড়ছে এবং বিনিয়োগকারীদের মুখ ফিরছে সোনার দিকে, যার মূল্য নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। তবে এ অবস্থা কতদিন স্থায়ী হয় সেটাই এখন দেখার বিষয়।