চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্প (এডিপি) বাস্তবায়নে ধস নেমেছে। এখন পর্যন্ত অর্থ বছরের ৯ মাসে দেশের সবচেয়ে কম এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে। মাত্র ৩৭ শতাংশ। যা রেকর্ড। মূলত দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর কাজ ছেড়ে পালিয়েছে অনেক ঠিকাদার। তাতে অনেক সাইটেই কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। যদিও মার্চ মাসে আগের মাসগুলোর তুলনায় কাজের গতি কিছুটা বেড়েছে।
তবে বছর শেষে মূল এডিপির চেয়ে লাখ কোটি টাকা এবং সংশোধিত এডিপির চেয়ে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার কোটি টাকা খরচ কম হতে পারে। আর অর্থ বছরের শেষ সময়ে বড় খরচের লক্ষ্যমাত্রায় বেড়ে যেতে পারে অনিয়ম-দুর্নীতি। পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চলতি অর্থ বছরের ৯ মাসে এডিপি বাস্তবায়নে ৮২ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা অর্থছাড় হয়েছে। বিগত ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের পর এবার তা সর্বনিম্ন। এই সময়ে গত অর্থ বছরে এক লাখ সাত হাজার ৬১২ কোটি টাকা ছাড় হয়েছিল। গত মার্চ মাসে মাত্র ১৫ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা অর্থছাড় হয়েছে। আর আগের অর্থ বছরের মার্চ মাসে ২২ হাজার ৯ কোটি টাকা ছাড় হয়েছিল। অথচ চলতি অর্থ বছরের বাকি আছে আর মাত্র তিন মাস।
অথচ চলতি অর্থ বছরের সংশোধিত বাজেটে উন্নয়ন খাতে খরচের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে দুই লাখ ২৬ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা। মূল এডিপিতে এর পরিমাণ ছিল দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপি অনুযায়ী চলতি অর্থ বছরে আরও এক লাখ ৪৩ হাজার ২৭০ কোটি টাকা খরচ করতে হবে। কিন্তু স্বল্পসময়ে এত টাকা খরচ করা সম্ভব কি আদৌ সম্ভব? অর্থ বছরের ৯ মাসে মাত্র ৮২ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। আর বাকি তিন মাসে আর সর্বোচ্চ ৭০-৮০ হাজার টাকা খরচ হবে। বাকি টাকা পড়েই থাকবে।
সূত্র জানায়, উন্নয়নকাজ অনেক স্থানে শেষ হলেও এখনো বিলগুলো দেয়া হয়নি। আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে ওসব বিল যাচাই-বাছাই করে দেয়া হচ্ছে। যে কারণে ব্যয় কম হচ্ছে। আর কোনো বছরই বাজেটের পুরো অর্থ ব্যয় হয় না। সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সভায় মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর চাহিদা না থাকায় চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) থেকে ৪৯ হাজার কোটি টাকা কাটছাঁট করা হয়েছে। এডিপির আকার বেশি দেখাতে থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৬ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা। কিন্তু এবার এডিপি বাস্তবায়ন মূল এডিপির তুলনায় প্রায় এক লাখ কোটি টাকা কম হতে পারে। মূলত এডিপি বাস্তবায়ন গতি কম থাকায় অনেক কমেছে সরকারি তহবিলের চাহিদা।
সাধারণত অন্যান্য অর্থবছরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সরকারি তহবিল থেকে চাহিদা অনেক বেশি থাকে। কিন্তু চলতি অর্থবছরে এডিপিতে যে পরিমাণ সিলিং বেঁধে দেয়া হয়েছে, চাহিদা তার চেয়ে কম রয়েছে। তবে সরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে চলতি অর্থবছরে চাহিদার চেয়ে বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান থেকে ৭০ থেকে ৭৫ হাজার কোটি টাকা চাহিদা দিয়েছিল। কিন্তু সরকার বৈদেশিক অর্থায়ন ব্যবহারে গুরুত্ব দেয়ায় বরাদ্দ বাড়িয়ে ৮১ হাজার কোটি টাকার সিলিং দেয়া হয়।
সূত্র আরও জানায়, বিগত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এডিপির তুলনায় সংশোধিত এডিপির (আরএডিপি) আকার কমেছিল ১৮ হাজার কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এডিপি থেকে বরাদ্দ কমেছিল ১৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে কমেছিল ১৫ হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ এবার সর্বোচ্চ এডিপি কাটছাঁট হয়েছে। আর যে পরিমাণ সংশোধিত এডিপিতে থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে, আগে কখনো এত টাকা রাখা হয়নি। আগের বছর ১৮ হাজার কোটি টাকা রাখা হয়েছিল। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাখা হয়েছিল মাত্র তিন হাজার ৭০০ কোটি টাকা।
এদিকে এ প্রসঙ্গে বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন জানান, এডিপি বাস্তবায়ন হার কম হওয়ার পেছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো ঠিকমতো অর্থছাড় না হওয়া। কারণ বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থছাড় কমিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়নে জোর দেয়া হচ্ছে।