মহিলা পরিষদ

মার্চে ধর্ষণের শিকার ১৬৩, নির্যাতিত ৪৪২ নারী

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: এপ্রিল ২৯, ২০২৫, ১২:১৭ এএম
মার্চে ধর্ষণের শিকার ১৬৩, নির্যাতিত ৪৪২ নারী

দেশে চলতি বছরের মার্চ মাসে নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৪৪২ জন নারী এবং ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১৬৩ জন। এ ছাড়াও ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়েছে ৭০ জন নারী।

গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন হলে সামপ্রতিক নারীর মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেমের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ‘আন্দোলন’ সম্পাদক রাবেয়া খাতুন শান্তি। তিনি জানান, দেশের শীর্ষস্থানীয় ১৫টি পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের তথ্য বিশ্লেষণ করে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

লিখিত বক্তব্যে রাবেয়া খাতুন বলেন, ২০২৫ সালের মার্চ মাসে মোট ৪৪২ জন নারী ও কন্যা নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১২৫ জন কন্যাসহ ১৬৩ জন। তার মধ্যে ১৮ জন কন্যাসহ ৩৬ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে, দুজন কন্যাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে, দুজন কন্যা ধর্ষণের কারণে আত্মহত্যা করেছে।

এ ছাড়াও ৫৫ কন্যাসহ ৭০ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি যে, নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতার মাত্রা পূর্বের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। মাত্রা ক্রমবর্ধমান হারে বেড়েই চলেছে।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে নারী কোটা বাতিল প্রসঙ্গে রাবেয়া খাতুন বলেন, নারীর জন্য ৬০ শতাংশ কোটা বহাল ছিল। কিন্তু আমরা উদ্বিগ্ন হয়ে লক্ষ্য করছি যে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ খসড়া প্রজ্ঞাপনে এই বিধান রোহিত করা হয়েছে। যা কিনা নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী শিক্ষাকে অগ্রসর করার জন্য অসঙ্গতিপূর্ণ। এ সময় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা ২০২৫ এ নারী কোটা বহাল রাখার দাবি জানায় সংগঠনটি।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আরও জানায়, আমরা দেখতে পাচ্ছি অতীতের মতো সুপারিশ পেশের সঙ্গে সঙ্গে মৌলবাদী, নারী বিদ্বেষী গোষ্ঠী ধর্মের দোহাই দিয়ে নারীর অধিকার এবং নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে শুরু করেছে। আমরা আশা করব এই অপতৎপরতা, অপকৌশল রোধে দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারীর মানবাধিকার রক্ষা করার ক্ষেত্রে সরকার, সকল রাজনৈতিক দল ও সমাজ এগিয়ে আসবে। সংবাদ সম্মেলনে সামপ্রতিক নারীর মানবাধিকার পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পক্ষ থেকে সাতটি সুপারিশ করা হয়।

সুপারিশগুলো হলো- ১. নারী বিদ্বেষী প্রচার প্রচারণা বন্ধ করার লক্ষ্যে এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ২. নারীর প্রতি সকল প্রকার সহিংসতার দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে। ৩. মব সহিংসতার অবসান ঘটনোর জন্য যাবতীয় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ৪. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ৫. নারী নির্যাতন ও সহিংসতার বিষয়ে বাস্তব তথ্য প্রদানে গণমাধ্যমকে আরও উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। ৬. মৌলবাদী, সামপ্রদায়িক গোষ্ঠীর সামপ্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টির প্রয়াস প্রতিহত করতে হবে। ৭. সমতাপূর্ণ সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় নীতিমালা বিরোধী অপতৎপরতা প্রতিহত করতে হবে।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের অ্যাডভোকেসি ও নেটওয়ার্কিং পরিচালক জনা গোস্বামীর পরিচালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, যুগ্ম সম্পাদক সীমা মোসলেম ও মাসুদা রেহানা বেগম।