জুন ১৩, ২০২২, ১২:৫৭ এএম
আজ শেষ হচ্ছে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা। প্রচারণার শেষ দিনেও ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থী ও তাদের কর্মীরা। সাধারণ ভোটারদের আকৃষ্ট করতে তুলে ধরবেন প্রার্থীদের ব্যক্তিগত অবস্থান।
অন্যদিকে নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই সুষ্ঠু ভোটগ্রহণ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তাদের দাবি, নির্বাচনের মাঠে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী ও কর্মীরা ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারেন।
জানা যায়, সর্বশেষ গতকাল প্রার্থীদের জমজমাট প্রচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে পুরো কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন। গণসংযোগ, মিছিল-মিটিং, সভা-সমাবেশ, শোডাউন ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিজ নিজ প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করেছেন প্রার্থীরা। তারা সাধারণ ভোটারদের আকৃষ্ট করতে তুলে ধরছেন নিজেদের ব্যক্তিগত অবস্থান।
একই সাথে যানজটমুক্ত, জলাবদ্ধতামুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত ও মাদকমুক্ত নগর গড়ার প্রত্যয়সহ কুমিল্লা সিটিকে একটি আদর্শ ও পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন তারা। সর্বশেষ গতকাল সকালে নগরীর দারোগাবাড়ি এলাকায় নির্বাচনি প্রচারণা যান স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী ও সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু।
এসময় তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনার পরও সদর আসনের এমপি কুমিল্লা ত্যাগ করেননি। এর ফলে সুষ্ঠু ভোটগ্রহণ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বহিরাগত লোকজন নগরীর বিভিন্ন এলাকায় মহড়া দিচ্ছেন, এতে ভোটাররা আতঙ্কে আছেন। এদিন একই অভিযোগ তোলেন অপর স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার।
তিনি বলেন, এখনো পর্যন্ত কুমিল্লার নির্বাচনি পরিবেশ শান্ত থাকলেও ভোটের দিন নিয়ে আমরা শঙ্কায়। সদরের এমপি এলাকায় রয়ে গেছেন। নানাভাবে তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে করে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বজায় থাকছে না। তাদের এমন অভিযোগ মানতে নারাজ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত।
তিনি বলেন, কুমিল্লায় ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু ও সুন্দর আছে। আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ আছে, বিজয় নৌকারই হবে। নির্বাচন নিয়ে বিরোধীরা যে সব অভিযোগ করেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে সুষ্ঠু ভোটগ্রহণ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু এবং নিজাম উদ্দিন কায়সার। শেষ মুহূর্তেও তাদের অভিযোগ- ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী ও কর্মীরা নির্বাচনের দিন ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারে। ভোটের মাঠে আলাদা প্রভাব তৈরি করতে পারে বহিরাগতরা। নির্বাচনের দিন ভোট কেন্দ্র দখল ও সাধারণ ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে না দেয়ার ঘটনা ঘটতে পারে।
যদিও নির্বাচনে ভোটগ্রহণ ঘিরে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতের কোনো অভিযোগ কিংবা শঙ্কা নেই। তার এবং তার সমর্থকদের দাবি— অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি ভোটার নিজ নিজ পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবে। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষ থেকে যে দাবি তোলা হয়েছে, তা ভিত্তিহীন।
নির্বাচনে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে মরিয়া আওয়ামী লীগ। এজন্য দলটির সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ভোটারের দ্বারে দ্বারে গিয়ে নৌকার পক্ষে ভোট প্রার্থনা করছেন। দলটির টার্গেট এই সিটি ভোটে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করা। মূলত এই সিটিতে কখনোই বিজয় অর্জন করতে পারেনি আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীরা। এজন্য সাধারণ ভোটারদের প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন তারা। যদিও আওয়ামী লীগের জন্য বড় বাধা হতে পারে দলটির দলীয় কোন্দল। দলটির নেতারা প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত থাকলেও কেউ কেউ নীরব ভূমিকা পালন করছেন। তবে শেষ মুহূর্তে যদি দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকাশ্যে আসে, তাহলে এবার নির্বাচনেও নৌকার পরাজয় হতে পারে।
নির্বাচনি এলাকায় এমপি বাহার : নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অমান্য করে এখনো নিজ নির্বাচনি এলাকায় থাকার অভিযোগ উঠেছে আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের বিরুদ্ধে। আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে গত বুধবার তাকে নির্বাচনি এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেন নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
বিএনপিপন্থি দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী বলেছেন, এমপি বাহার নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনার তোয়াক্কা করছেন না। যা নিয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত ও এমপি বাহারের বিরুদ্ধে রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগও করেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু। লিখিত অভিযোগে বলা হয়, বহিরাগত লোকজন এনে জনসমাগম, মিছিল ও প্রচারণা চালাচ্ছেন রিফাত ও এমপি বাহার।