নিজস্ব প্রতিবেদক
জুলাই ২১, ২০২২, ০১:৪৩ এএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
জুলাই ২১, ২০২২, ০১:৪৩ এএম
কক্সবাজারের রামুতে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) ‘টেকনিক্যাল সেন্টার’ নির্মাণের লক্ষ্যে বরাদ্দ দেয়া জমি পরিবেশের ঝুঁকি সৃষ্টি করবে।
পরিবেশ ও প্রতিবেশের ঝুঁকি সৃষ্টি করে জঙ্গল খুনিয়াপালংয়ে এ ২০ একর সংরক্ষিত বনভূমি অবমুক্ত করে অবকাঠামোগত উন্নয়ন ফুটবলের মৌলিক নীতির লঙ্ঘন। তাই বাফুফেকে দেয়া বনভূমির বরাদ্দ বাতিলের দাবি জানিয়েছে পরিবেশ আইনবিদরা।
গতকাল বুধবার বেলা ১১টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত ‘কক্সবাজারের বনে আগ্রাসন বন্ধ কর’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনের এ দাবি করেন তারা।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, বন উজাড় ও পাহাড়গুলো কেটে সমান করা হলে এমন ক্ষতি হবে যেটা কল্পনা করতে পারবে না কেউ।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, কেউ সমুদ্র, পাহাড় সৃষ্টি করতে পারবেন না। কিন্তু গাছ লাগাতে পারবেন। তবে বন সৃষ্টি করতে পারবেন না। সংবিধানে বলা হচ্ছে, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নদী, জলাশয় বন ও বন্যপ্রাণী রক্ষা করা হবে। এখন যদি বন উজাড় করে এ টেকনিক্যাল সেন্টার করতে হয় তাহলে সাংবিধানিক এ প্রতিশ্রুতি ভেঙে ফেলা হবে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাফুফে এ সিদ্ধান্ত কীভাবে নিতে পারে। ফুটবলের যে মৌলিক নীতি তারা সেটি লঙ্ঘন করছে
এখানে। কারণ আমাদের সংবিধান ও আইনের লঙ্ঘন করে তারা এটি করছে। ফিফার ও সুনির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে।
সেখানে পরিষ্কারভাবে বলা আছে, তারা তাদের সব কার্যক্রম বিশেষ করে ফুটবলের অবকাঠামগত উন্নয়ন কার্যক্রম কোনোভাবে পরিবেশ ও প্রতিবেশগত ঝুঁকি সৃষ্টি না করে এটা নিশ্চিত করতে ফিফা অঙ্গীকারবদ্ধ। একইভাবে তাদের সব বিনিয়োগ যাতে কোনোভাবেই পরিবেশ ও প্রতিবেশগত ঝুঁকি সৃষ্টি না করে সেটা ফিফা ও ফিফার অন্তর্গত ফেডারেশনগুলোর দায়িত্ব। বন দখল করে টেকনিক্যাল সেন্টার করা হবে এটা বাফুফে বললে তো আর হবে না।
তিনি বলেন, আশা করি ফিফার কাছে সরাসরি যাওয়ার প্রয়োজন পড়বে না। সংবাদ মাধ্যম এটা প্রচার করলে ফিফা অবশ্যই বিবেচনা করবে। পরিবেশ ও প্রতিবেশগত তাদের সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার রয়েছে। তাই ফিফা এখানে বিনিয়োগের পথ থেকে সরে আসবে এবং সেটা তারা করবে না। সরকার যুব মন্ত্রণালয় ও ফিফা নিজেদের এমন একটা বিব্রতকর অবস্থায় ফেলবে না যেটা অনুমোদন পাওয়ার পর ফিফা যদি বলে এখানে বিনিয়োগ করব না। তাই এটা বাফুফে এবং সরকারকে মনে রাখতে হবে।
টিআইবি প্রধান বলেন, এমন তো কোনো কথা নেই ওই জায়গাতেই টেকনিক্যাল সেন্টার করতে হবে। সরকারের হাতে কি সারা দেশে আর কোনো জমি নেই। অবশ্যই আছে এবং সে জমি বের করা সরকারের পক্ষে অসম্ভব নয়। স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে একটি গাছের জন্য লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে। সেখানে কোনো একটা গাছ মারা গেলে এর জন্য বিচার পর্যন্ত হয়।
আমাদের দেশে বন উজাড় করা হয়। সবচেয়ে বড় উন্নয়ন তো বন ও পরিবেশের উন্নয়ন। পৃথিবীর এমন কোনো শহর নেই, যেখানে পাঁচটি নদী রয়েছে। বাংলাদেশে একমাত্র ঢাকা শহরে পাঁচটি নদী রয়েছে এবং তার পাশে দেশের প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতি বাস করেন।
এখানে নদীগুলো বাড়ির পশ্চাতে থাকে অথচ বাড়ির সম্মুখে নদী থাকার কথা। আমরা চাইলে পারি- হাতিরঝিল তার প্রমাণ। এর আগে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন গ্রিন কক্সবাজারের সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী। তিনি বলেন, এ সংরক্ষিত বনটি এশীয় বন্য হাতি, বানর, বন্য শূকর, বিভিন্ন প্রজাতির সাপ ও পাখির আবাসস্থল এবং বিচরণক্ষেত্র।
জঙ্গল খুনিয়াপালং মৌজা প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকার অংশ হওয়ায় এ এলাকাতে প্রাকৃতিক বন ও গাছপালা কর্তন বা আহরণ এবং ভূমির প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য নষ্ট বা পরিবর্তন হতে পারে এমন সব কাজ আইনত নিষিদ্ধ।
তিনি বলেন, এ টেকনিক্যাল সেন্টার নির্মাণ করতে হলে কাটা পড়বে সংরক্ষিত বন ও প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকার অন্তত ৩০ হাজার গাছ। অথচ বরাদ্দ দেয়ার আগে কোনো পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ করা হয়নি। বাফুফের টেকনিক্যাল সেন্টার নির্মাণ বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় ভূমি বরাদ্দের বিষয়ে সরেজমিন তদন্তপূর্বক মতামত প্রদানের জন্য বন বিভাগকে অনুরোধ জানায়।
তিনি আরও বলেন, বন বিভাগের আইনি আপত্তি উপেক্ষা করে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় গত ৭ জুন কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার জঙ্গল খুনিয়াপালং মৌজার ২০ একর সংরক্ষিত বনভূমি বন আইনের ২৭ ধারা মোতাবেক ডি-রিজার্ভ ঘোষণা করে বাফুফের টেকনিক্যাল সেন্টার নির্মাণের লক্ষ্যে সাংঘর্ষিক শর্তে বরাদ্দ প্রদান করে।
বাফুফের টেকনিক্যাল সেন্টার নির্মাণের জন্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় কর্তৃক ২০ একর বনভূমি বরাদ্দ প্রদানের সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিলের এবং বাফুফের টেকনিক্যাল সেন্টার অন্যত্র উপযুক্ত কোনো স্থানে বরাদ্দ দেয়ার দাবি জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন খুশী কবির, বাপা সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল, স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন, গোলাম মনোয়ার কামাল, এএলআরডি উপ-প্রধান নির্বাহী রওশন জাহান মনি, ব্লাস্ট উপদেষ্টা এসএম রেজাউল করিমসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।