জুলাই ২৩, ২০২২, ১২:৫৩ পিএম
বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ তাজউদ্দীন আহমদের ৯৭তম জন্মদিন আজ। আজীবন সংগ্রামী রাজনীতিবিদ ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ। ছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম মহানায়ক।
গাজীপুরের কাপাসিয়ার দরদরিয়া গ্রামে ১৯২৫ সালের এই দিনে শনিবার (২৩ জুলাই) জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার পিতা মৌলভী মো. ইয়াসিন খান এবং মাতা মেহেরুননেসা খান।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে এসে যখন প্রধানমন্ত্রী হলেন তখন সেই সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্ব বর্তায় তাজউদ্দীন আহমদের কাঁধে। তাজউদ্দীন আহমদকে হত্যা করা হয় জেলখানার অভ্যন্তরে ৩ নভেম্বর ১৯৭৫ সালে।
আজীবন সংগ্রামী রাজনীতিবিদ ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ। ছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম মহানায়ক। ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতি করতেন তিনি।
১৯৪৩ সালে মুসলিম লীগের রাজনীতিতে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত হওয়ার পরের বছরই ১৯৪৪ সালে তিনি বঙ্গীয় মুসলিম লীগের কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি গঠিত পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের (বর্তমানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ) অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তাজউদ্দিন।
পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং ১৯৫১ থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত এ সংগঠনের নির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৫৩ থেকে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক ছিলেন। পরে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তাজউদ্দীন আহমদ মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন যা “মুজিবনগর সরকার”নামে অধিক পরিচিত। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে তিনি বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী হিসাবে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৫০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে বিএ (সম্মান) ডিগ্রি লাভ করেন। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের সদস্য হিসেবে তিনি ভাষা আন্দোলনকালে গ্রেফতার হন এবং নির্যাতন ভোগ করেন। ১৯৬৪ সালে রাজনৈতিক বন্দি হিসেবে কারাগারে থাকা অবস্থায় এলএলবি পাস করেন।
১৯৬৪ সালে তিনি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ১৯৬৬ সালে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালে তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন তিনি।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ভারতে যান এবং প্রবাসী সরকার গঠনের চিন্তা করেন তাজউদ্দীন। ৪ এপ্রিল দিল্লিতে ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে তাজউদ্দীনের আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়। ১০ এপ্রিল তিনি আগরতলায় সরকার গঠন করার উদ্যোগ নেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধকে সফল সমাপ্তির দিকে নিয়ে যেতে তার অসামান্য অবদান ছিল।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপরিবারে নিহত হওয়ার পর আরও তিনজন জাতীয় নেতা আবুল হাসনাত মোহাম্মদ (এএইচ) কামরুজ্জামান, এম মনসুর আলী ও সৈয়দ নজরুল ইসলামসহসহ তাকে বন্দী করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ১৯৭৫ সালের ৩রা নভেম্বর বন্দী অবস্থায় তাকে ওই তিন নেতার সাথে হত্যা করা হয়।
তাজউদ্দীন আহমেদের স্ত্রী সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। তাদের ৪ সন্তান রয়েছে। বড় মেয়ে শারমিন আহমদ রিপি, মেজো মেয়ে গাজীপুর-৪ আসনের বর্তমান এমপি সিমিন হোসেন রিমি এবং কনিষ্ঠ মেয়ে মাহজাবিন আহমদ মিমি। পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ সন্তান তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ গাজীপুর-৪ আসনের সাবেক এমপি ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।
আমারসংবাদ/টিএইচ