জুলাই ২৬, ২০২২, ০৮:০৫ পিএম
ভাঙ্গা থানা। ফরিদপুর জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম থানা। পদ্মা সেতুর প্রবেশদ্বার ও ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের কারণে দক্ষিণ বঙ্গের ২১ জেলার মানুষের কাছেই ভাঙ্গার গুরুত্ব রয়েছে। রাজনৈতিকভাবেও ভাঙ্গা জেলার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। এ কারণে ভাঙ্গা থানায় অফিসার ইনচার্জ ওসির দায়িত্ব পালনে সবসময়ই নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। গোষ্ঠী বিবাদ, গ্রাম্য কাইজা, সংঘর্ষ, খুন-জখম, বাড়িঘর ভাংচুর-লুটপাট যেন এখানের নিত্য দিনের সঙ্গী। এমন একটি থানায় সকল অপরাধ দমনে কঠিন চ্যালেঞ্জ নিয়ে নতুন অফিসার ইনচার্জ ওসি হিসাবে যোগদান করেছেন জিয়ারুল ইসলাম।
গত ২১ জুলাই বৃহস্পতিবার তিনি জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে ভাঙ্গায় যোগদান করেন। `পুলিশ জনগনের সেবক, সেবাই পুলিশের ধর্ম’, পুলিশই জনতা, জনতাই পুলিশ’ এ শ্লোগানকে সামনে রেখে উপজেলার জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস, বাল্য বিবাহ, ইভটিজিং, মাদক, আইন-শৃঙ্খলা শান্তি-রক্ষা, জুয়া, পারিবারিক কলহ’সহ বিভিন্ন সামাজিক, পারিবারিক ও রাজনৈতিক অপরাধ দমনে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন নব নিযুক্ত ওসি জিয়ারুল ইসলাম।
ভাঙ্গা থানা এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, নতুন কর্মস্থল ও নতুন পদে কাজের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে একান্ত আলাপচারিতায় ওসি জিয়ারুল ইসলাম অনেক চ্যালেঞ্জের কথা বলেছেন। পাঠকদের জন্য চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।
আমার সংবাদ : নতুন কর্মস্থলে আপনাকে শুভেচ্ছা। কেমন আছেন?
জিয়ারুল ইসলাম : প্রথমে ভাঙ্গাবাসীকে শুভেচ্ছা। জ্বি, আমি ভালো আছি।
আমার সংবাদ : আপনি তো মাত্র কয়েকদিন হলো ভাঙ্গা থানার দায়িত্বে এসেছেন। থানার সহকর্মীরা আপনাকে কেমন সহযোগিতা করছেন?
জিয়ারুল ইসলাম: সহকর্মীরা অনেক হেল্পফুল। আমি আগেও ওসি’র দায়িত্বে পালন করেছি, সেখানে যেমন সহায়তা পেয়েছি, এখানেও সেটাই পাচ্ছি। কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
আমার সংবাদ : নানা কারণে জেলার অন্যান্য থানার মধ্যে ভাঙ্গা গুরুত্বপূর্ণ। এ এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন?
জিয়ারুল ইসলাম : মাত্র ৭ দিন হলো দায়িত্ব নিয়েছি। এ এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই রয়েছে। রাজনৈতিক কিংবা অন্য কোনো কারণ বা সমস্যা তেমন টের পাচ্ছি না।
আমার সংবাদ : জেলার অন্যান্য থানার চেয়ে ভাঙ্গা একটু ঘনবসতিপূর্ণ। উপজেলা সদর থেকে গ্রামগুলোর দুরত্ব অনেক। এ এলাকায় অপরাধের ধরণগুলো কেমন?
জিয়ারুল ইসলাম : দায়িত্বে আসার পরেই অপরাধ মানচিত্র নিয়ে বসেছিলাম সহকর্মীদের সঙ্গে। এখানকার অপরাধ সীমিতই মনে হয়েছে। উল্লেখ করার মতো বড় কোনো অপরাধ কর্মকাণ্ড হচ্ছে না। তবে গ্রাম্য গোষ্ঠিগত বিবাদ ও জমিজমা নিয়ে দ্বন্দ্ব মারামারি আছে। আমি আসার পর প্রথম ২দিনে কোনো মামলা হয়নি। কয়েকটা মাত্র জিডি হয়েছিল।
আমার সংবাদ : বড় কোনো ঘটনার অগ্রগতি সম্পর্কে যদি বলেন?
জিয়ারুল ইসলাম : মাত্র এসেছি। আগে এডজাস্ট করে নেই। এরপর খোঁজ খবর নিয়ে সব জানা যাবে। আমি যখন এসেছি, অপরাধী যেই হোক ছাড় পাবে না।
আমার সংবাদ : থানায় জিডি হলে পুলিশের কোনো তৎপরতা থাকে না। দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তারা যোগাযোগ করেন না- এমনটাই অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। আপনার এ সম্পর্কে কোনো ইনকুয়ারি রয়েছে কিনা?
জিয়ারুল ইসলাম : পুলিশের কাজই সাধারণ মানুষকে সেবা দেয়া। আমি থানায় আসার পর এ ধরনের কোনো অভিযোগ এখনো পাইনি। জিডি তো হচ্ছেই। অভিযোগ পেলে বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা হবে।
আমার সংবাদ : আপনি তো বললেন আপনার থানার অপরাধ মানচিত্র রয়েছে। মানচিত্রে কোন কোন এলাকা অপরাধকর্মের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ?
জিয়ারুল ইসলাম : হুম, আমাদের থানা এলাকার অপরাধ মানচিত্র রয়েছে। ভাঙ্গা থানার মধ্যে সদরের আশপাশের গ্রামগুলো এছাড়া দুরবর্তি কয়েকটি ইউনিয়নে দলাদলি মারামারির ঘটনা ঘটে। এসব এলাকায় বিট পুলিশিং আরো সক্রিয় ও কার্যকর করা হবে। আর উপজেলার হাইওয়ের আশপাশে সব সময় পুলিশি টহল টিম থাকে।
আমার সংবাদ : রাজনৈতিক কিংবা স্থানীয় প্রভাবশালীগের কোনো চাপ রয়েছে কি না?
জিয়ারুল ইসলাম : না রাজনৈতিক বা স্থানীয় প্রভাবশালীদের কোনো চাপ নেই। তবে ভাঙ্গা গোল চত্ত্বর কেন্দ্রীক ইভটিজিং ও কিশোর গ্যাং দমনে চ্যালেঞ্জ থাকবে। এছাড়া নিয়মিত ছোট কিছু অপারেশন তো থাকেই।
আমার সংবাদ : প্রয়োজনের তুলনায় আপনার এই থানায় জনবল কম রয়েছে বলে তথ্য রয়েছে। আপনার কি মনে হয়, বর্তমান জনবল নিয়ে পুরো এলাকার মানুষের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা সম্ভব?
জিয়ারুল ইসলাম : সব মিলিয়ে জনবল প্রায় ৩০ জন বা কমবেশি হতে পারে। ৩০ জনের কাঁধের উপর ১২ টা ইউনিয়নের প্রায় ৩ লাখ মানুষের নিরাপত্তা ও আইনশৃ্ঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব। কাজটা একটু কঠিনই বটে। তবে জনবল বেশি হলে কাজে আরো সুবিধা হতো।
আমার সংবাদ : থানার ওসি’র দায়িত্ব অনেক। ব্যস্ততাও কম নয়। সব মিলিয়ে কাজের বাইরে নিজের পরিবারকে কিভাবে সময় দেন?
জিয়ারুল ইসলাম : পরিবার আমার কাজ ও সেবার মানসিকতাকে মেনে নিয়েছে। আমি পরিবারের চেয়ে পেশাকেই বেশি গুরুত্ব দেই। শুধু পেশা বললে ভুল হবে। বলতে পারেন সেবা দেয়ার নেশা। কাজের ব্যস্ততার কারণে পরিবারকে চাহিদা মতো সময় দেয়া সত্যিই কঠিন। আমার লক্ষ্য সততার সঙ্গে দায়িত্ব শেষ করা। পারিপার্শ্বিকতার কারণে নিজে সৎ থেকে দায়িত্ব পালন কঠিনই। তবে আমি প্রত্যয়ী। যতো দিন বাঁচি সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যেতে চাই।
আমার সংবাদ : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
জিয়ারুল ইসলাম : আপনাকেও ধন্যবাদ।
জানা গেছে, ২০০৭ সালে উপ পরিদর্শক হিসাবে পুলিশে যোগদান করেন জিয়ারুল ইসলাম। পরে পদন্নোতি পেয়ে ওসি তদন্ত হিসাবে ফরিদপুরের চরভদ্রাসন ও নগরকান্দা থানায় দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। পরে ২০২১ সালে অফিসার ইনচার্জ হিসাবে পদন্নোতি পেয়ে চরভদ্রানস থানায় যোগ দেন। সর্বশেষ চরভদ্রাসন থেকে বদলি হয়ে ভাঙ্গা থানায় আসেন জিয়ারুল ইসলাম। চাকরির সুবাদে তিনি ঝিনাইদহ, রাজবাড়ী, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর জেলা পুলিশে দায়িত্ব পালন করেছেন। জিয়ারুল ইসলামের দেশের বাড়ি যশোর সদরে। ১ সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে তার সংসার।