Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪,

চুরি চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার

৮ বছরে পাঁচ শতাধিক মোটরসাইকেল চুরি

মো. মাসুম বিল্লাহ

আগস্ট ১৭, ২০২২, ০৫:১৫ পিএম


৮ বছরে পাঁচ শতাধিক মোটরসাইকেল চুরি

মোটরসাইকেল চুরি চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা (ডিবি) ওয়ারী বিভাগ।

মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) রাজধানীর শনিরআখড়া ও ধলপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশ জানায়, অভিযুক্তরা বড়লোক হওয়ার নেশায় গত আট বছরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে পাঁচ শতাধিক মোটরসাইকেল চুরি করেছে। চুরি করা মোটরসাইকেলগুলোর মধ্যে অধিকাংশই সুজুকি ব্র্যান্ডের জিক্সার মডেলের।

গ্রেপ্তাররা হলেন, চক্রের মুলহোতা নূর মোহাম্মদ (২৬), অন্যতম সহযোগী রবিন (২৩), সজল (১৮), মনির (২২) ও আকাশ (২২)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১৩টি চোরাই মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়।

ডিবি জানায়, পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সুজুকি জিক্সার মডেলের মোটরসাইকেল চুরি করত নুর মোহাম্মদ ও তার সহযোগীরা। বাইক চুরির জন্য চক্রটি বিশেষভাবে মাস্টার কি (নকল চাবি) তৈরি করে। সুযোগ বুঝে নকল চাবির মাধ্যমে টার্গেট করা বাইকটি স্টার্ট করা মাত্রই পালিয়ে যেত তারা। এভাবে পুরান ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকা থেকে গত কয়েক বছরে অন্তত ৫০০টি মোটরসাইকেল চুরি করেছে নুর মোহাম্মদ। এরপর কেরানীগঞ্জ, দোহার, মুন্সিগঞ্জসহ ঢাকার পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকায় চোরাই মোটরসাইকেল কম দামে বিক্রি করত তারা।

ডিবি আরও জানায়, সম্প্রতি রাজধানীর ওয়ারী ও গেন্ডারিয়া থানায় দুটি মোটরসাইকেল চুরি মামলার তদন্ত করতে গিয়ে ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় মোটরসাইকেল চোর চক্রের এ পাঁচ সদস্যকে শনাক্ত করা হয়।

বুধবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, প্রথমে মোটরসাইকেল চোর চক্রের দুই সদস্য নুর মোহাম্মদ ও রবিনকে যাত্রাবাড়ীর শনিরআখড়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে চক্রের অন্য তিন সদস্য সজল, মনির ও আকাশকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন মডেলের ১৩টি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়। এর মধ্যে সুজুকি ব্র্যান্ডের জিক্সার মডেলের সংখ্যাই বেশি।

তিনি বলেন, মোটরসাইকেল চুরির জন্য তাদের টার্গেটেড এরিয়া ছিল পুরান ঢাকা। ওই এলাকায় সুজুকি জিক্সার মডেলের মোটরসাইকেল চুরি করত তারা। গত কয়েক বছরে এই চক্রের সদস্যরা অন্তত ৫০০ মোটরসাইকেল চুরি করেছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তাদের চেহারার সঙ্গে মিল পাওয়ায় যায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে অভিযান চালিয়ে প্রথমে চক্রের মূল হোতা নূর মোহাম্মদ ও রবিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর নুর মোহাম্মদের তথ্য অনুযায়ী যাত্রাবাড়ীর ধলপুর এলাকা থেকে সজল, মনির এবং আকাশকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার নূর মোহাম্মদের বিষয়ে ডিবি প্রধান বলেন, সে মূলত জুরাইন এলাকায় একটি কাঠের দোকানে নকশার কাজ করত। আগে তার বাসা ছিল ঢাকার কেরানীগঞ্জে হাসনাবাদ এলাকায়। এক দিন হাসনাবাদ গলির ভেতর চায়ের দোকানে রবিনের সঙ্গে পরিচয় হয়। দুইজন মিলে পরিকল্পনা করে, কীভাবে দ্রুত সময়ে বড়লোক হওয়া যায়। নুর মোহাম্মদ রবিনকে বলে, তার কাছে করাত ধার দেওয়ার রেদ আছে যা দিয়ে মোটরসাইকেলের চাবি পাতলা করে ‘মাস্টার কি’ বানানো যাবে। পরিকল্পনা মোতাবেক রবিনের জিক্সার মোটর সাইকেলের চাবি রেদ দিয়ে ঘষে পাতলা করে শারিঘাটে পার্ক করা একটি জিক্সার মোটরসাইকেল পরীক্ষামূলকভাবে চুরি করে। এরপর থেকে এ চাবিকেই ‘মাস্টার কি’ হিসেবে ব্যবহার করে দুই বন্ধু দীর্ঘদিন ধরে মোটরসাইকেল চুরি করে আসছে।

তিনি বলেন, চোরাই মোটরসাইকেল বিক্রি করার জন্য তারা ঢাকার দোহারে সজলকে তাদের চক্রের সদস্য হিসেবে যুক্ত করে। ঢাকা মহানগর এলাকা থেকে মোটরসাইকেল চুরি করে নিরাপদ রোড হিসেবে পোস্তগোলা ব্রিজ পার হয়ে মাওয়া রোডের শ্রীনগর বাইপাস হয়ে মেঘুলা বাজার ও দোহারে যেত। অন্যদিকে বাবুবাজার ব্রিজ পার হয়ে কেরানীগঞ্জ, জয়পাড়া ও দোহার এলাকায় যাওয়ার রুট হিসেবে ব্যবহার করে। সজল ও মনির দোহারের বিভিন্ন এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে চোরাই মোটরসাইকেল ইন্ডিয়ান বর্ডার ক্রস গাড়ি বলে বিক্রি করে আসছিল।

গ্রেপ্তার সজলকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি বলেন, সে নিজেও বড়লোক হওয়ার নেশায় দোহারের মেঘুলা বাজারের একজন ধনি বেকারি ব্যবসায়ীর মেয়েকে পালিয়ে নিয়ে বিয়ে করে। কিন্তু মেয়ের মা-বাবা তাদের মেয়ের সঙ্গে সজলের সম্পর্ক ছিন্ন করলে সজল হতাশ হয়ে বড়লোক হওয়ার নেশায় আসামি নুর মোহাম্মদ ও রবিনদের চক্রে যোগ দেয়। গ্রেপ্তার সজল, মনির ও আকাশদের মূল কাজ ছিল দোহার ও আশপাশের এলাকা থেকে চোরাই মোটরসাইকেল বিক্রির জন্য ক্রেতা খুঁজে বের করা। প্রতিটি চোরাই মোটরসাইকেল তারা ৪০ থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করত। বিক্রির টাকা নূর মোহাম্মদ ৪০ শতাংশ রবিন ৩০ শতাংশ ও অবশিষ্ট টাকা অন্য ভাগ করে নিত।

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা জানায়, তারা ২০১৫ সাল থেকে মোটরসাইকেল চুরি করে আসছে। এ পর্যন্ত ৫০০ টিরও বেশি মোটরসাইকেল চুরি করেছে।

ডিবি প্রধান বলেন, বিভিন্ন থানায় নুর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে ৪টি মামলা, রবিনের বিরুদ্ধে ৩টি মামলা এবং অন্য তিনজনের বিরুদ্ধে ১টি করে মামলা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

এবি

Link copied!