আগস্ট ২১, ২০২২, ০৬:২৫ পিএম
ইন্দোনেশিয়ার বালির সেক্রেড মাঙ্কি ফরেস্টের মূল আকর্ষণ লম্বা লেজওয়ালা ম্যাকাক বানর। পার্কের ভেতর বিশাল জায়গায় তারা ছোটাছুটি করে। শত শত বানর পর্যটকদের মনোরঞ্জন করার পাশাপাশি তাদের দেয়া খাবারও খায়।
আরাম-আয়েশে থাকার ফলে অন্যান্য বন্য বানরের চেয়ে তাদের হাতে সময় অনেকটা বেশি। এ বাড়তি সময়ে বানরগুলো পাথর দিয়ে খেলে। গবেষকরা দেখেছেন, তারা এ পাথরগুলোকে প্রায়ই ‘সেক্স টয়’ হিসেবে ব্যবহার করে।
গত ৪ আগস্ট ‘ইথোলজি: ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ বিহেভিওরাল বায়োলজি’তে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে গবেষকরা বিশ্লেষণ করেছেন কেন বালির এ বানরগুলো পাথর দিয়ে খেলে। কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সভিত্তিক সাইট ‘ভাইস’ এ গবেষণাপত্রের ভিত্তিতে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। নিউজবাংলার পাঠকদের জন্য সেটির ভাষান্তর করা হয়েছে।
২০১৬ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত সংগৃহীত ভিডিও ফুটেজে অভয়ারণ্যে শত শত মেয়ে ও পুরুষ বানরের মধ্যে দেখা গেছে তারা পাথর কামড়ানো ও জড়ো করার মতো নিরীহ আচরণ ছাড়াও যৌনাঙ্গে পাথর দিয়ে টোকা দেওয়া ও ঘষে যৌন উত্তেজনা সৃষ্টি করছে।
পুরুষ বানরের ক্ষেত্রে যৌনাঙ্গে পাথর দিয়ে টোকা দেয়া ও ঘষার ঘটনা বেশি দেখা গেছে। আর যখন তাদের ‘ইরেকশন’ (যৌনাঙ্গ দৃঢ় হওয়া) হয়েছে, তখন এ প্রক্রিয়া দীর্ঘস্থায়ী হয়। কিন্তু যৌনাঙ্গে পাথর ঘষলেও পুরুষ বানরগুলো কখনও বীর্যপাত করতে পারেনি।
গবেষণা দলের অন্যতম সদস্য ও কানাডার ইউনিভার্সিটি অফ লেদব্রিজের পিএইচডি শিক্ষার্থী ক্যামিলিয়া সেনি ভাইসকে বলেন স্বমেহন প্রাইমেটদের মধ্যে অস্বাভাবিক না হলেও কোনো যন্ত্র ব্যবহার করে এ প্রক্রিয়া বেশ বিরল।
তিনি বলেন, ‘এর কোনো ভালো ব্যাখ্যা দেয়া মুশকিল। কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে তাদের এটা করতে ভালো লাগে দেখেই এমনটা করে বলে মনে হয়। তাদের যৌনাঙ্গে পাথর ঘষে বিশেষ ধরনের স্পর্শজনিত উত্তেজনা তারা অনুভব করে, যেটা তাদের ভালো লাগে। এটা বন্ধ করারও কোনো কারণ নেই।’
যদিও গবেষণায় শক্ত প্রমাণ পাওয়া গেছে যে পুরুষ বানররা স্বমেহনের জন্য পাথর ব্যবহার করছে, তবে মেয়ে বানর যারা পাথর দিয়ে নিজেদের যৌনাঙ্গ স্পর্শ করে, তাদের ক্ষেত্রে কী ঘটছে তা নিশ্চিত করা কঠিন।
সেনি বলেন, ‘মেয়ে বানরদের ক্ষেত্রে বিষয়টা বোঝা মুশকিল। কারণ তাদের উত্তেজনা খালি চোখে দেখে বোঝা যায় না।’
তবে গবেষকরা দেখেছেন যে বয়স্ক মেয়ে বানরগুলো নির্দিষ্ট ধাঁচের কিছু পাথর ব্যবহার করে, যেগুলো ছুঁচালো ও অমসৃণ পৃষ্ঠতল সমৃদ্ধ।
পাথর দিয়ে খেলার এ স্বভাব, যা জাপানি ম্যাকাকদের মধ্যেও দেখা গেছে, সেটি একই প্রজাতির বানরের নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর মধ্যে একটি স্বভাবগত আচরণ হিসেবে বিবেচিত। সেনি বলেন, বালির ম্যাকাকদের মধ্যে পাথর নিয়ে খেলা বেশ সাধারণ এবং পাথরের সাহায্যে স্বমেহনও এ খেলা থেকে উদ্ভূত হয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘যদি আমরা বানরগুলোকে পাথর নিয়ে খেলতে দেখি, তাহলে হয়তো ওই প্রক্রিয়া আমাদের চোখে পড়বে।’
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্থানীয়, লম্বা লেজের ম্যাকাক প্রায়ই মানুষের সঙ্গে সংঘাতপূর্ণ এলাকায় বাস করে। বালিতে, ম্যাকাকগুলো তাদের বুদ্ধিমত্তার জন্য পরিচিত। তারা পর্যটকদের কাছ থেকে জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয়া শিখেছে। বানরগুলো তাদের জিম্মি করে রাখে যতক্ষণ না মুক্তিপণ হিসেবে খাবার দেয়া হয়।
গবেষকরা বলছেন, সেক্রেড মাঙ্কি ফরেস্টের বানরগুলো মানুষের বসতি দিয়ে ঘেরা। মন্দিরের কর্মীরা দিনে অন্তত তিনবার তাদের ফল ও সবজি খেতে দেয়। বানরদের পাথর দিয়ে খেলা শুরুর কারণ হিসেবে সেনি এই খাদ্য নিরাপত্তার দিকে ইঙ্গিত করেছেন। তিনি যোগ করেন, যে ম্যাকাকগুলো এই কাজে জড়িত, তাদের সবাইকে ভালোভাবে খাওয়ানো হয়েছে।
সেনি আরও বলেন, ‘আমরা এটা জোর দিয়ে বলতে পারি, খাওয়া-দাওয়া খুঁজতে হয় না বলে তারা যে অবসর সময় পায়, সেটা এ পাথর নিয়ে খেলার একটা ব্যাখ্যা হতে পারে। তবে এটা পর্যাপ্ত ব্যাখ্যা নয়। এটা পুরো গল্পের একটা অংশ। আরেকটি অংশ কী, সেটা নির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল। কারণ সেটা জানতে হলে আমাদের পাথর ব্যবহারকারী প্রথম বানরটিকে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন।’
আমারসংবাদ/আরইউ