নভেম্বর ৮, ২০২২, ০২:১৫ পিএম
শব্দদূষণের ফলে সবচেয়ে কম কানে শোনে রিক্সাচালক ও ট্রাফিক পুলিশ। ঢাকাসহ দেশের সব সিটি করপোরেশনে প্রায় ৪২ ভাগ রিকশাচলকই এই শব্দ দূষণের শিকার। এরপরই ট্রাফিক পুলিশ ও লেগুনা চালকেরা। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সাইয়েন্সের `বাংলাদেশের রাজপথে শব্দদূষণ এবং শব্দদূষণের কারণে রাজপথে কর্মরত পেশাজীবীদের শ্রবণ সমস্যা` নিয়ে করা এক গবেষণায় এই চিত্র উঠে এসেছে।
গবেষণায় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ (উত্তর ও দক্ষিণ) রাজশাহী, কুমিল্লা এবং সিলেট সিটি কর্পোরেশনের শব্দদূষণের মাত্রা পরিমাপ করা হয়েছে এবং এ সকল সিটি কর্পোরেশন রাজপথে কর্মরত ৬৪৭ জন পেশাজীবীর (ট্রাফিক পুলিশ ও সার্জেন্ট, বাস চালক ও হেলপার, পিক-আপ চালক, সিএনজি চালক, লেগুনাচালক, দোকানদার, মোটরসাইকেল, রিকশাচালক এবং প্রাইভেটকার) শ্রবণশক্তি পরিমাপ করা হয়েছে।
চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত এই গবেষণা করা হয়। মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সাইয়েন্সের ইব্রাহিম অডিটোরিয়ামে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন প্রধান গবেষক ড. সাইকা নিজাম।
রাজপথে শব্দদূষণের মাত্রা নির্ণয় এবং রাজপথে কর্মরত পেশাজীবীদের শ্রবণশক্তির ওপর সেই শব্দদূষণের প্রভাব নির্ণয় করার উদ্দেশ্যে এই গবেষণা চালানে হয় বলে জানান ড. সাইকা নিজাম।
গবেষণায় বলা হয়, জরিপে অংশ নেওয়াদের প্রতি চারজনে একজন কানে কম শোনার সমস্যায় ভুগছেন।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪২ শতাংশই রিকশাচালক। এছাড়া প্রায় ৩১ ট্রাফিক পুলিশ, ২৪ শতাংশ সিএনজি চালক, ২৪ শতাংশ দোকানদার, ১৬ শতাংশ বাস, ১৫ শতাংশ প্রাইভেটকার এবং ১৩ শতাংশ মোটরসাইকেল। এসব সমস্যায় ভোগাদের ৭ শতাংশের শ্রবণ সহায়ক যন্ত্র (কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট) ব্যবহার জরুরি।
সমস্যায় ভোগা এসব মানুষ সবচেয়ে বেশি কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের। ঢাকার কাছের এই বিভাগের ৫৫ শতাংশ মানুষ শব্দদূষণের শিকার। সিলেটে প্রায় ৩১ শতাংশ, ঢাকায় ২২ দশমিক ৩ শতাংশ, রাজশাহীতে প্রায় ১৪ শতাংশ রাজপথে কর্মরত পেশাজীবি শব্দদূষণে ভুগছেন।
এ সময় প্রতিকারে শব্দদূষণের উৎস এবং মাত্রা কমানোর জন্য পদক্ষেপ নেওয়াসহ বেশকিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। রাজপথে পেশাজীবীদের কর্মঘণ্টা কমানো, যেখানে প্রয়োজন সেখানে উপযুক্ত ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম নিশ্চিত করা, রিকশাচালক ও ট্রাফিক পুলিশের প্রতি বিশেষ নজর, নিয়মিত শ্রবণ পরীক্ষার তাগিদ দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, অসংক্রামক রোগের শব্দদূষণকে আমরা তেমনটা গুরুত্ব দিতাম না। কিন্তু এটাও বিশেষ গুরুত্বের দাবি রাখে। গবেষণায় এমন ভয়াবহ চিত্র উঠে আসবে তা ভাবিনি। বয়স বাড়লেই মানুষ ধীরে ধীরে কানে কম শুনতে শুরু করে। কানে না শোনার নানা কারণও থাকতে পারে। শুধু রাস্তায় নয়, বাসা-বাড়ির আশপাশে গড়ে ওঠা ভবনেও দায় রয়েছে। এ জন্য আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগ থেকেও একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এবি