Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪,

বাংলাদেশ শিশু পরিস্থিতি পর্যালোচনা ২০২২

মো. মাসুম বিল্লাহ

জানুয়ারি ২৪, ২০২৩, ০৫:২১ পিএম


বাংলাদেশ শিশু পরিস্থিতি  পর্যালোচনা ২০২২

বাংলাদেশ শিশু পরিস্থিতি পর্যালোচনা ২০২২ অনুযায়ী পত্রিকার পাতা থেকে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের শিশুদের উপর শারীরিক, মানসিক এবং যৌন নির্যাতন, বাল্য বিবাহ ও শিশু শ্রম সংক্রান্ত বিষয়কে তুলে ধরেছেন,মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন।

মঙ্গলবার (২৪) বিকেলে জানুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে,"মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের" আয়োজনে সংবাদপত্রের পাতা থেকে বাংলাদেশ শিশু   পর্যালোচনা (২০২২) শীর্ষক এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এমজেএফের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, এমজেএফের বিশ্লেষণ অনুযায়ী শিশুরা নিজের বাসায় নিরাপদ নয়। শিশু ধর্ষণ ও শিশুকে যৌন হয়রানি বন্ধ করার জন্য সবাইকে এখুনি জোটবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে, নতুবা এই হার বাড়তেই থাকবে। তিনি শিশু সুরক্ষায় নিয়োজিত সরকারি প্রতিষ্ঠানের সকলকে আরো বেশি সহৃদয়বান হওয়ার পাশাপাশি শিশু অধিকার রক্ষায় সকলকে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহবান জানান।

পত্রিকার পাতা থেকে তাদের সমীক্ষাগুলো হচ্ছে,

এমজেএফে‍‍`র শিশু পরিস্থিতি প্রতিবেদন ২০২২ অনুযায়ী বাল্যবিয়ে কমেছে ৯৪ শতাংশ
ঢাকা, ২৪ জানুয়ারি, ২০২৩। বাল্যবিয়ের হার ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে এসে ৯৪ শতাংশ কমেছে। ২০১১ এ দেশের ২৩ টি জেলায় ৪১,০৯৫ টি বাল্যবিয়ের সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। ২০২২ সালে বাল্যবিয়ের সেই সংখ্যা হয়েছে ২৩০১ টি। করোনার সময় অর্থাৎ ২০২০/২১ সালে বন্ধ থাকার অভাব অনটনের কারণে বাল্যবিয়ে বৃদ্ধি পেলেও ২০২২ এনে তা অনেক কমে গেছে।

২০২১ এর তুলনায় ২০২২ সালে শিশু ধর্ষণের হার কমেছে ৩১.৫ শতাংশ। ২০২২ রানুর থেকে পর্যন্ত সারাদেশে ৫৬০ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে এবং ১৮ জন শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। এরমধ্যে ধর্ষণের শিকার হলো মারা গেছে ১২ টি মেয়েশিশু। ২০২১ সালে শিশুদের এই সংখ্যা ছিল ৮১৮ জন। সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে অধিকাংশ শির পরিচিত দ্বারাই সংঘটিত হয়েছে।

একইভাবে পারিবারিক কারণেই বাল্যবিয়ে আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিবারের পরিচিত লোকদের মাধ্যমে ধর্ষণের শিকার হওয়া ছাড়াও, প্রতিবেশীদের হাতে শিশুদের একটি বড় অংশ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে শিশুর সর্বনিম্ন বয়স ২ বছর।৩/৪ বছর থেকে ১৯ বছর পর্যন্ত শিশুরা অধিকহারে ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। বেশীরভাগ শিশুকে খেলার সময় লোভ দেখিয়ে পরিচিতরা ধর্ষণ করছে। মূলত কম বয়সী শিশুরাই ধর্ষণের শিকার বেশি হচ্ছে। কিশোরীরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে বন্ধুদের যারা কর্মক্ষেত্রে, স্কুল যাওয়ার পথে ও পরিবারের ভেতরে।

২০২২ সালে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর হার আশংকাজনক মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২১ সালে যেখানে পানিতে ডুবে ৪০৫ জন শিশু মারা গিয়েছিল, ২০২২ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১১৫২ জন। এদেরমধ্যে ৫২০ টি মেয়েশিশু ও ৬৩২ টি ছেলেশিশু।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) আজ বাংলাদেশ শিশু পরিস্থিতি ২০২২। সংবাদপত্রের পাতা থেকে শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য উপস্থাপন করেছে।

উল্লেখ্য, এমজেএফ ২০১১ সাল থেকে সংবাদপত্রকে উৎস হিসেবে ধরে শিশু সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরণের সংবাদ নিয়মিত সংরক্ষণ করতে শুরু করে।

এটি জাতীয় বাংলা দৈনিক প্রথম আলো, যুগান্তর, সমকাল, ইত্তেফাক, কালের কণ্ঠ এবং তিনটি জাতীয় ইংরেজি দৈনিক ষ্টার, নিউ এইজ এবং ঢাকা ট্রিবিউনে প্রকাশিত শিশু অধিকার বিষয়ক সংবাদ পর্যালোচনা করে এই তথ্য উপাত্ত উপস্থাপণ করা হয়েছে। যৌন নির্যাতনের শিকার শিশুর সংখ্যা ২০২১ এর তুলনায় ২০২২ সালে কমে গেলেও, এই বছর ছেলেশিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়ার মান বেড়েছে। ২০২২ সালে মোট ৯৬ টি শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এরমধ্যে ছেলেশিশুর সংখ্যা ২০ জন, যা ২০২১ সালে ছিল ৬ জন।

বিভিন্ন কারণে রিপোর্টকালীন সময়ে আত্মহত্যা করেছে ৪৪ টি শিশু, যা ২০২১ তুলনায় কম। এদের মধ্যে ২৭ জন মেয়ে ও ১৩ জন ছেলে। ২০২১ সালে আত্মহত্যা করা শিশুর সংখ্যা ছিল বেশি অর্থাৎ ৭৮ জন। এদের মধ্যে ছেলেশিশু ৫৭ জন ও মেয়েশিশু ২১ জন। মূলত পরীক্ষায় ফল বিপর্যয়, পরিবারের উপর রাগ, প্রেমে ব্যর্থ হয়ে, উত্যক্ত হওয়ার, ধর্ষণের শিকার হওয়ায় বা ধর্ষণ চেষ্টা করায়,ধর্ষণের বা শ্রীলতাহানির বিচার না পাওয়ায় এবং সাইবার ক্রাইম বা ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়েও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে।

২০২২ সালে হত্যাকান্ডের শিকার হয়ে শিশুমৃত্যুর হার বেড়েছে। ২০২২ তে ৩১১ জন শিশু হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে এবং হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে ৪২ টি শিশুকে। ২০২১ সালে হত্যার শিকার হয়েছিল ১৮৩ জন শিশু।

ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিয়ে আলাদাভাবে আধেয় বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে ২০২২ সালে মোট ১১টি এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। ক্ষতিক্রান্ত শিশুর সংখ্যা ১৫ জন এবং সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ঢাকায়। ১৫ জন গৃহকর্মী ধর্ষণসহ নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এরমধ্যে ৫ জন নিহত, ৭ জন আহত ও ৩ জন আত্মহত্যা করেছে। নিহত গৃহকর্মীদের মধ্যে ৩ জন হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে। ২ জনের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে।

সড়ক দুর্ঘটনায় ২০২১ সালে ৬৯ টি শিশু নিহত হলেও ২০২২ সালে এসে সেই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১৯৬। ২০২২ সালে মোট নিখোঁজ শিশুর সংখ্যা ২০ জন। এরমধ্যে মেয়েশিশু ৬ জন ও ছেলেশিশু ১৪ জন। ২০২১ সালে নিখোঁজ শিশুর সংখ্যা ছিল ৩৮ জন এরমধ্যে মেয়েশিশু ৩১ জন ও ছেলেশিশু জন

২০২২ সালে যে ৩৫ টি শিশু অপরাধমূলক কাজের সাথে জড়িত, এদের মধ্যে ৬ জন মেয়েশিশুও আছে। তবে ২০২১ সালে অপরাধের সাথে জড়িত ছিল ১২০ জন, সবাই ছিল ছেলেশিশু। ২০২২ সালে অপহরণের শিকার হয়েছে ৩০ জন শিশু অপহরণের কারণ হিসেবে টাকা, প্রেম, বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান, প্রতিশোধ গ্রহণ, পাচার ও মুক্তিপন দাবির কথা সংবাদে প্রকাশিত হয়েছে।

শিশু নির্যাতনের ৬৬ টি ঘটনার মাধ্যমে ৬৮ জন শিশু নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে। ২০২১ সালে শিশু নির্যাতনের ১৬টি ঘটনা ঘটেছে। নির্যাতনকারী হিসেবে গৃহকর্তা, বাবা-মা, শিক্ষক, উত্ত্যক্তকারী, স্থানীয় চেয়ারম্যান, চাকুরীদাতা, প্রতিবেশী এবং সৎ মা।শিশুকে নিয়ে ২৬ টি বিষয়ের উপর নেতিবাচক খবর ছাপা হয়েছে ২০২৮ টি। অন্যদিকে ইতিবাচক সংবাদ ছাপা হয়েছে ১২ টি বিষয়ের উপর ৬৭ টি।

এমজেএফের বার্ষিক ‍‍`বাংলাদেশ শিশু পরিস্থিতি পর্যালোচনার উদ্দেশ্য হলো শিশু সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নীতি নির্ধারণী সুপারিশ তুলে ধরা। উল্লেখ্য, জাতিসংঘ শিশু অধিকার কমিটি ২০০৯ সালে প্রণীত তাদের “বাংলাদেশ বিষয়ক সমাপনী পর্যবেক্ষণ" প্রতিবেদনে বাংলাদেশ শিশু পরিস্থিতি নিরূপণের জন্য নিয়মিত তথ্য-উপাত্ত সংরক্ষণের একটি ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছিল।

এমজেএফের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনামের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আমরান খান, সহকারী পরিচালক, সমাজসেবা অধিদপ্তর, রোকসানা বেগম, ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স এবং আধ্যাপক ড: শাহনাজ হুদা, চেয়ারপারসন, আইন অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশ শিশু পরিস্থিতি ২০২২‍‍` এর সার্বিক চিত্র উপস্থাপন করেন এমজেএফের কোঅর্ডিনেটর রাফেজা শাহীন প্রমুখ।

এবি

Link copied!