জানুয়ারি ২৬, ২০২৩, ০৫:২৭ পিএম
শুধু পাঠ্যক্রম সংশোধন নয়,দক্ষ্য ও দেশপ্রেমিক নাগরিক সৃষ্টির জন্য শিক্ষায় মৌলিক সংস্কার অপরিহার্য শীর্ষক দাবি শিক্ষা গবেষণা সংসদের।এসময়ে বক্তারা সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে বলেন,এ সরকার ইসলাম বিরোধী শক্তিকে বেশি প্রাধান্য দেয়,এজন্যই নতুন বইয়ের উপরে মন্দিরের ছবি দেখা যায়। এসব ভারতকে খুশি রাখার জন্য করা হচ্ছে। এ দেশের মুসলমানরা এসব মানতে পারে না।
বৃহস্পতিবার (২৬) জানুয়ারি বিকাল ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে,শিক্ষা গবেষণা সংসদ ঢাকার আয়োজনে এ সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় তারা কিছু রূপরেখা উপস্থাপন করেন
জাতীয় শিক্ষাক্রম: কিছু মৌলিক তথ্য। গোড়ায় গলদ,বিপর্যয়ের প্রান্তসীমায় বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা বিদ্যমান চ্যালেঞ্জসমূহ সমাধান কোন পথে?-
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় চলমান এবং মান যে সংকট তার সাথে সাম্প্রতিক আলোচনা-সমালোচনার মাত্রাগত অসামঞ্জস্যতা রয়েছে; সংকটের যে গভীরতা তা শুধু উপরি আলোচনা করে সমাধান করা সম্ভব নয়, •শিক্ষা ব্যবস্থাকে যদি একটি মানব দেহের সঞ্চালনের সাথে তুলনা করা হয়, আর কোন একজন ব্যক্তির সমগ্র রক্ত দুষিত হয়, উচ্চ ররক্তচাপের সৃষ্টি হয়,হৃৎপিণ্ডে ব্লক ধরা পরে, মন্ত্রিকে রক্তক্ষরণ সৃষ্টি হয় আর একজন চিকিৎসক হনো যদি ঐ ব্যক্তির শরীরের বাহ্যিক চর্মরোগের চিকিৎসায় মনোযোগি হন তাকে আর যাই হোক যথার্থ চিকিৎসা বিবেচনা করা যাবে না।
এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার রাতার খাড়ীরে দৃষ্টিপাত করে সাম্প্রতিক গবেষনালও কিছু তথ্য উপস্থাপন করবো যেন শিক্ষা মনস্ক দেশপ্রেমিক চিন্তাশীল অভিভাবকগণ বাংলাদেশের জন্য দক্ষ ও দেশপ্রেমিক নাগরিক সৃষ্টির উপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থার বিনির্মানে দিকনির্দেশনা ও মতামত গঠন করতে পারেন।
জাতীয় শিক্ষাক্রম: কিছু মৌলিক তথ্য
শিক্ষাক্রমকে ইংরেজিতে কারিকুলাম বলা হয়, পাঠ্যসূচি হচ্ছে শিক্ষাক্রমের একটি অংশ যাকে ইংরেজীতে সিলেবাস বলা হয়।শিক্ষাক্রম এর অর্থ ব্যাপক এবং এর সাথে শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য, আতীয়-সামাজিক-সাংস্কৃতিক-ঐতিহ্য মূল্যবোধ প্রতিফলিত হয়।
২০১৭ সাল থেকে নতুন শিক্ষাক্রম উন্নয়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, ১০২ দেশের শিক্ষানীতি নির্দেশনা বিশ্লেষণ, ৫১ টি দেশের দক্ষতা ভিত্তিক শিক্ষাক্রম অনুসরণ ১১ টি দেশের দক্ষতাভিত্তিক যোগ্যতাকে অন্তর্ভূক্ত করার দাবী করা হয়েছে। দেশের ১৫৬ জন বিশেষজ্ঞা, ৮০০ জনের অধিক অংশিজন অংশ নিশ্চিত করা হয়েছে।
১৯৭৪ সালের শিক্ষা কমিশনের সুপারিশের আলোকে একিভূত শিক্ষা প্রবর্তন করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত দেশপ্রেমিক উৎপাদনমূখি অভিযোজনে সক্ষম সুখি ও বৈশ্বিক নাগরিক সৃষ্টির রূপকার এবং তা বাস্তবায়নের জন্য চারটি অভিলক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। (সুত্ৰ-জাতীয় শিক্ষাক্রম -)
যোগ্যতা নির্ধারণে প্রেরণা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল ভিত্তি হিসেবে মর্যাদা, সামাজিক ন্যায় বিচার ও সাম্য ধারণ করা হয়েছে এবং প্রতিটি বিষয়ের আলোকে নিয়া নির্বাচন করা হয়েছে। নির্ধারিত যোগ্যতা অর্জনের জন্য প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি অবধি ১০ টি মূল যোগ্যতার শিখনক্ষেত্র নির্বাচন করা হয়েছে।
শিক্ষাক্রমের সাথে পাঠ্যক্রমের অসামঞ্জস্যতা!
বস্তুনিষ্ঠভাবে প্রনীত শিক্ষাক্রম রুপরেখা, শ্লেষণ করার রয়েছে। কাঠামোগতভাবে এই শিক্ষাক্রমটি যৌক্তিক ও আধুনিক ধারাক্রম অনুসরণ করা হলেও শিক্ষাক্রমের সাথে পাঠাকদের বহুমাত্রিক সাম্যতা বৈশিত্ব ও সাংবাদিক চরিত্র স্পষ্ট,এই অসামঞ্জস্যতা এবং বৈশ্বিরত্বের মাত্রা দেখে প্রয়োজনীয় সংশোধন/পরিমার্জন/পরিবর্তন/ সংসার করা বাঞ্চনীয়।
বাংলাদেশের অপরাপর নীতির সাথে তার প্রতিফলনের বৈপিত্ব অত্যন্ত সাধারণ বিষয়ে পরিনত হয়েছে। শিক্ষাক্রম কাঠানোর বৈজ্ঞানিক ভিত্তির উপর তৈরি করে পাঠা সৃষ্টি ও পাঠ্যক্রমকে অসান্য, পারস্পরিক হিংসা উৎপাদনের জাতীয় বিপরীতে পরিচালিত করার প্রয়াস স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।এসব অসঙ্গতি ও বৈস্তিত্বের সংশোধন প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের শিক্ষা নীতি সহ শিক্ষা ব্যবস্থার মূলে আরো ভয়াবহ গল্প আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে।
এর থেকে সমাধানের লক্ষ্যে তারা কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন।
সুপারিশ না পদক্ষেপ?
যন্ত্রের সামান্য ক্ষতি হলে, মেরামত করে চলে, যদি যন্ত্র অচল হয় তাহলে পরিবর্তন বা সম্পূর্ন ঢেলে সাজাতে হয় (ওভারহলিং) আমাদের সমস্যা কি মেরামত যোগ্য নাকি পরিবর্তন করা অনিবার্য তা শিক্ষা নিয়ে অভিভাবকগণকে ভাবতে হবে।
সক্রিয়তা (Active)
অভিক্রিয়াশীলতা (Pro-Active)
প্রতিক্রিয়াশীলতা (Reactive )
প্রতিক্রিয়াশীলতা
অতিক্রিয়াশীলতা
প্রতিক্রিয়াশীলতা হলো- অপরে কাজ করবে আপনি প্রতিক্রিয়া করবেন আর অতিক্রিয়াশীলতা হচ্ছে- আপনি আগাম কাজ করবেন, অন্যরা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবে,আপনাকে বেছে নিতে হবে পথ।
আসুন গোড়ায় গলদ অনুসন্ধান করি!
৫২ বছরের বাংলাদেশ; শিক্ষায় আমাদের অগ্রগতি!
সার্বজনীন মানবাধিকার সনদ-১৯৪৮ ধারা- ২৬ (প্যারিস ঘোষণা) অনুযায়ী শিক্ষার স্তর ৩টি; প্রাথমিক / বুনিয়াদি (১২ বছর মেয়াদি), ১২ বছরের পরবর্তি পেশাভিত্তিক /কারিগরি শিক্ষা এবং উচ্চশিক্ষা।বাংলাদেশের সংবিধান ১৭ অনুচ্ছেদ এর আলোকে আইন দ্বারা প্রাথমিক শিক্ষাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক হয়নি। পৃথিবীর ১০৫ টি দেশ যাদের শিক্ষা আইনের দ্বারা সুরক্ষিত বাংলাদেশ সে তালিকার বাইরে; দেশে ১০ ধরণের প্রাথমিক শিক্ষা ২৪ ধরনের প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে (কওমী মাদ্রাসা এবং ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ছাড়া) (তথ্যসুত্র: ডিপিই ও ব্যানবেউজ রিপোর্ট-২০১৫)একবার অর্থ হচ্ছে আমরা আমাদের শিশুদেরকে ১৩ বা তারও অধিকভাবে বিভক্ত ধারায় শিক্ষা প্রদান করছি; > প্রাথমিক শিক্ষাকে ৫ বছর মেয়াদ থেকে ৮ বছরে উন্নীত করার ঘোষনা থাকলেও বিগত ১০ বছরে এর কোন অগ্রগতি নেই।
গবেষকগন এই সিদ্দান্তকে ইতোমধ্যে অবান্তর ও অসম্ভব বলে অভিহীত করেছেন। (সুত্র: রফিক, ২০২১) > অবকাঠামো সুবিধা, ইনরোলমেন্ট, শিক্ষক যোগ্যতা, আর্থিক বরাদ্দ সহ পাচটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে আমাদের প্রাথমিক শিক্ষার মান তলানীতে।
বিপর্যয়ে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা!
সমাধান হিসেবে তারা ব্যাখ্যা করে বলেন, সমস্যার একমাত্রিক সমাধান না সমন্বিত ও সমাধান
বাংলাদেশের মানব সম্পদ এর দক্ষতা উন্নয়ন ও দেশপ্রেমিক নাগরিক সৃষ্টিই হতে হবে শিক্ষার মূল লক্ষ্য বর্তমানের ১৭ কোটি মানুষ ২০৩০ সালে হবে কর্মক্ষম মানুষ হবে ১২.৮ কোটি।
শুধুমাত্র ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে শিক্ষায় পূর্নাংগ সমাধান হবে না। শিক্ষাকে সার্বজনীন করতে সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন।
আইন-নীতি, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা, মান সম্পন্ন শিক্ষার জন্য মানসম্পন্ন (জাতীয় চেতনা ও বৈশ্বিক চাহিদার সমন্বয়) পাঠ্যক্রম, মানসম্পন্ন শিক্ষক ও মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিখন উপকরণ পরিবেশ সহযোগে জাতীয় নীতি-কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার সমান্বত পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে।
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে অধ্যক্ষ সৈয়দ আবদুল মজিদ, প্রধান অতিথি প্রফেসর ড. মোহাম্মাদ আবদুর রব
প্রফেসর ড. এম কোরবান আলীর সভাপতিত্বে,প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন অধ্যক্ষ সৈয়দ আবদুল মজিদ, প্রধান অতিথি প্রফেসর ড. মোহাম্মাদ আবদুর রব এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, প্রফেসর ড. তাজমেরি এস ইসলাম কবি আবদুল হাই শিকদার,অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া ড.খলিলুর রহমান মাদানী,ড. আবদুল আজিজ,সাংবাদিক শহীদুল ইসলাম, সাংবাদিক শাহেদ মতিউর রহমান, ইঞ্জি শেখ আল আমিন, এড.সাইফুর রহমান সাংবাদিক কামাল উি ইকবাল হোসেন ভূঁইয়া সাংবাদিক গণি চৌধুরী প্রমুখ।