নওগাঁ প্রতিনিধি
ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৩, ০৫:৪৫ পিএম
নওগাঁ প্রতিনিধি
ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৩, ০৫:৪৫ পিএম
নওগাঁর রাণীনগরে গবাদি পশুর জাত উন্নয়নে গরুর কৃত্রিম প্রজননে ৩০ টাকার সরকারি সিমেন খামারি ও পশুপালন কারিদের প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তার দপ্তর থেকে সরবরাহকৃত সিমেন কিনতে হয় ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকায়। এতে করে প্রতারিত হয়ে অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ্য হচ্ছেন স্থানীয় গবাদি পশু পালনকারীরা।
অনেকেই অতিরিক্ত দামে সিমেন কিনে প্রজনন করতে না পারায় মান নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। ফলে দুধ, মাংস উৎপাদন এবং জাত উন্নয়নে স্থবির হয়ে পড়ার আশংকা রয়েছে।
তবে প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা বলছেন, মাঠ কর্মীরা খামারিদের বাড়িতে গিয়ে গরুকে প্রজনন করতে কত টাকা নিচ্ছে এটা আমার জানা নাই।
জানা গেছে, উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তার পরিসংখ্যান অনুযায়ী রাণীনগরে মোট ১লক্ষ ১৫হাজার ৫৬৩টি গবাদি পশু রয়েছে। এর মধ্যে মাংস উৎপাদনে গবাদি পশু রয়েছে ১৯হাজার ৭৬৫টি এবং দুধ উৎপাদনে গাভী রয়েছে ৫৯হাজার ৭৩৮টি। এসব গাভী থেকে জাত উন্নয়নে সরকারী ভাবে কৃত্রিম প্রজননে প্রতি বছর প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তার কাছে সিমেন (বীজের) বরাদ্দ দেয়া হয় ১০ হাজার ৫০০টি। এই সিমেনগুলো পর্যায়ক্রমে উপজেলার ৮ ইউনিয়নে এক জন উপ-সহকারী কর্মকর্তা ও ৮জন মাঠ কর্মীদের মাধ্যমে গবাদি পশুকে কৃত্রিম প্রজনন করানো হয়। সরকারি ভাবে প্রতিটি ফ্রিজিয়াম এবং শাহীয়াল জাতের বীজ ৩০টাকা নির্ধারণ করা হয়।
গবাদিপশু পালনকারিরা জানায় ,দেশী জাতের বা ক্রস জাতের গাভী/বোকনা কিনে জাত উন্নয়নে এবং দুধ ও মাংস উৎপাদনের জন্য কৃত্রিম প্রজনন করা হয়। এক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত সিমেনের দামের চাইতে অতিরিক্ত টাকা নেয় মাঠ পর্যায়ের প্রজনন কর্মীরা। একবার প্রজনন করলে কোন কারনে গর্ভ ধারণ না করলে পরবর্তিতে একমাস বা দুই মাস পর আবারো প্রজনন করতে হয়। এক্ষেত্রে গরু পালনকারীকে প্রজননের জন্য আবারও ৫০০ থেকে ১হাজার টাকা গুনতে হয় বলে ভূক্তভূগিরা জানায়। ফলে টাকা বাঁচাতে গিয়ে অনেকটা বধ্য হয়ে মাঠ পর্যায়ের গৃহস্থরা স্থানীয় জাতের ষাঁড় দিয়েই গাভীকে প্রজনন করাতে বাধ্য হচ্ছে।
তারা বলছেন, সরকার নির্ধারিত দামে গবাদি পশুকে কৃত্রিম প্রজনন করাতে পারলে শতভাগ পশু পালনকারি এবং খামারিরা সরকারি সিমেন কাজে লাগিয়ে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে দেশের গবাদি পশুর জাত উন্নয়ন, দুধ ও মাংস উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ার আশা করছেন তারা।
উপজেলার গুয়াতা বাঁকাপাড়া গ্রামের আলম সরদার বলেন, গরুর কৃত্রিম প্রজনন করাতে মাঠ কর্মী ৫০০টাকা নিয়েছে। সেই সিমেনে কোন কারণে কাজ না হওয়ায় পরের বারে আবার ৫০০টাকা নিয়েছে। এতে এক গাভীকে কৃত্রিম প্রজননে ১হাজার টাকা দিতে হয়েছে।
গোনা ইউনিয়নের নান্দাইবাড়ী গ্রামের খামারী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তার খামারে ছোট বড় প্রায় ২০টি গরু আছে। গরু প্রজননে সরকারি বীজ নিতে ৫০০টাকা করে নেয়। বাধ্য হয়ে বে-সরকারীভাবে কিছু টাকা কমে প্রজনন করে নিচ্ছি।
রাণীনগর উপজেলার বড়গাছা ইউনিয়নের মাঠ কর্মী জিল্লুর রহমান বলেন, কৃত্রিম প্রজননে কেন্দ্র থেকে দূরত্বের হিসাবে ৫০০-১০০০টাকা নিয়ে থাকি। এছাড়া নির্ধারিত কেন্দ্রে আসলে ৭০ টাকা নেয়া হয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে দুই/একটি গরুকে ফ্রি প্রজননও করে থাকি।
রাণীনগর উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা কামরুন্নাহার আকতার বলেন, মাঠ কর্মীরা প্রতি মাসে সামান্য দুই হাজার টাকা করে সম্মানি পান। তারা অনেকটায় স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করেন। আমাদের নিকট থেকে কর্মীরা সিমেন নিয়ে সরকারি নির্ধারিত দামে প্রতি সিমেন ৩০টাকা জমা দিয়ে থাকেন। গবাদিপশু নির্ধারিত কেন্দ্রে নিয়ে আসলে ৩০টাকা করে নেয়ার কথা।
এছাড়া কেন্দ্রের বাহিরে বা গবাদি পশুর মালিকদের বাড়ীতে গেলে কত টাকা নিতে পারবেন তা জানা নেই আমার।
কেএস