নিজস্ব প্রতিবেদক
মার্চ ৩০, ২০২৩, ১১:৪৭ এএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
মার্চ ৩০, ২০২৩, ১১:৪৭ এএম
প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার, সাংবাদিক শামসুজ্জামানের মুক্তি, ডিজিটাল আইনসহ সকল কালা কানুন বাতিলের দাবি..
প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে নিশি রাতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের, পত্রিকাটির নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামানকে গভীর রাতে বাসা থেকে তুলে নেয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পেশাজীবীদের সংগঠন বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ- বিএসপিপি।
পরিষদের আহবায়ক প্রফেসর ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও সদস্য সচিব সাংবাদিক কাদের গনি চৌধুরী আজ বৃহষ্পতিবার সকালে এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগ জানান।
তাঁরা অবিলম্বে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান ও প্রতিবেদক শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার ও নি:শর্ত মুক্তির দাবি জানিয়ে বলেন আজ যেখানে জাতির বিবেক সাংবাদিকদের স্বাধীনতা নেই সেখানে সাধারণ নাগরিকের অবস্থা যে কতটা ভয়াবহ তা সহজে অনুমেয়।
পেশাজীবী নেতৃদ্বয় বলেন, বাংলাদেশের গণমাধ্যম চরম দুর্দিন অতিক্রম করছে। সরকার, সরকারি দল, আমলাতন্ত্র এবং প্রভাবশালী মহল গণমাধ্যমের কন্ঠরোধে যেন মরিয়া হয়ে উঠেছে। সাংবাদিক নির্যাতন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা ,হামলা, গ্রেফতার ,সাংবাদিক হত্যা, ঠুনকো অজুহাতে গণমাধ্যম বন্ধ করে দেয়া এখন নিত্য দিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে।বর্তমান সরকারের সময় অন্তত: ৫৪ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। চাঞ্চল্যকর সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছিল ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি।এক দশক পেরিয়ে গেলেও হত্যাকান্ডের বিচারতো দূরে থাক ,তদন্তেও অগ্রগতি নেই।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেত কড়া সমালোচনা করে বিবৃতিতে বলা হয়, সাংবাদিক নির্যাতনের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। ভিন্নমত ও সরকারের সমালোচনা দমনে এই আইনের নজিরবিহীন অপপ্রয়োগ চলছে। এই আইনে অভিযুক্তরা যখন আদালতে যাচ্ছেন,তখন তাদের জামিন দেয়া হচ্ছে না। নিপীড়নমূলক এই আইনের ১৪টি ধারাই যেহেতু জামিন অযোগ্য,তাই এটা একটা সাংঘাতিক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি করেছে। নিপীড়নমূলক এই আইনে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাজার বিধান রাখা হয়েছে ১৪ বছর। আমাদের দেশে মৃত্যুদন্ড বাদ দিলে কোনো খুনির সাজা হয় ১৪ বছর। সাংবাদিকদের অপরাধ কি এতো বিরাট যে তাকে খুনের মামলার আসামির সমান সাজা দিতে হবে? আমরা মনেকরি, এসব করা হচ্ছে সাংবাদিকদের কলম ও নাগরিকদের কন্ঠ থামিয়ে দেয়ার জন্য। যাতে সরকারের গুম, খুন, দুর্নীতি ,লুটপাট ও ব্যর্থতার কথা গণমাধ্যম প্রকাশ করতে না পারে।
বিবৃতিতে পেশাজীবীদের শীর্ষ এই দুই নেতা বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কবলে পড়ে বাংলাদেশের মিডিয়ার যখন প্রাণ যায় যায় অবস্থা,তেমনি পরিস্থিতিতে একের পর এক কালা কানুনের খড়্গ ঝুলিয়ে দেয়া হচ্ছে। সংবাদ মাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এমন কোনো পন্থা নেই যা অবলম্বন করা হচ্ছে না! আজ বাংলাদেশে সাংবাদিকদের যেন `মু্খে সেলাই`, `হাতে কড়া` আর `পায়ে ডান্ডাবেরি` পড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সমালোচনার সীমারেখা এতটাই টেনে দেয়া হয়েছে যে,সমালোচনার সময় কয়েক ব্যক্তির নাম ভুলেও মুখে বা কলমে আনা যাবে না। তারা যতই অপকর্ম বা ভুল করুক সমালোচনা করা যাবে না। তাদের সমালোচনা মানেই জেলে যেতে হবে না হয় নির্যাতিত হতে হবে। সরকারের এমন চন্ডালনীতির কারণে বাংলাদেশে এক `ভয়ের সংস্কৃতি` তৈরি হয়েছে। যার ফলে অনেকে স্বাধীনভাবে তাদের মনের কথা বলতে পারছে না। বহু সাংবাদিককে দেশান্তরি হতে হয়েছে। লিখার স্বাধীনতা না থাকায় এবং নিপীড়নের ভতে অনেক সাংবাদিক পেশা পরিবর্তন করছে। একই ভাবে বাক স্বাধীনতা সংকুচিত হওয়ায় মানুষকে এখন ভেবে চিন্তে কথা বলতে হচ্ছে।অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় এখন মড়ক ধরেছে।ফলে দুর্নীতি ও লুটপাট আজ সীমা ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশ দিন দিন মনুষ্য বসবাসে অযোগ্য হয়ে পড়ছে।
মিডিয়ার কন্ঠরোধের সংবিধান পরিপন্থী উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার পাশাপাশি বাক ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা এবং সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে।কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, প্রকাশ্য ও প্রচ্ছন্য নামামুখী চাপ এবং বিধিনিষেধর বেড়াজালে সাংবিধানিক এ অধিকার মলাটবদ্ধ নথিতে রুপান্তরিত হয়েছে। অতীতে যখনই গণতন্ত্র ,বাক স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার উপর আঘাত এসেছে বাংলাদেশের গণমাধ্যম ও সাংবাদিকরা সোচ্চার ভূমিকা পালন করেছে। এবার গণমাধ্যম কেন জানি "এক অসহায় আত্মসমর্পণ" করে বসে আছে! যা জাতির জন্য অত্যন্ত দুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিবৃতিতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সকল কালাকানুন বাতিল এবং সরকারকে নিপীড়নের পথ পরিত্যাগ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানানো হয়।
আ.রহিম/আরএস