এপ্রিল ১৪, ২০২৩, ০৯:১৬ এএম
আজ পহেলা বৈশাখ। আজ সূর্যের নতুন আলোর সঙ্গে এসেছে নতুন বছর, বঙ্গাব্দ ১৪৩০। আজ নব আনন্দে জেগে ওঠার দিন। প্রতিটি নতুন বছর নতুন সম্ভাবনা নিয়ে আসে, আসে শুভর প্রত্যাশায়। তাকে স্বাগত জানাতে মানুষ পথে নেমে আসে। ভোরের আলোয় গান গেয়ে আর মানুষের মঙ্গল কামনায় শোভাযাত্রায় অংশ নিয়ে বরণ করে নতুন বছরকে। এ বছর প্রতিটি স্কুল-কলেজ থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করার সরকারি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী দিয়েছেন।
ভোরের প্রথম আলো রাঙিয়ে দেবে নতুন স্বপ্ন, প্রত্যাশা আর সম্ভাবনাকে। নতুন বছর সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে নতুন প্রত্যাশা, নতুন শপথ। আজ দেশ জুড়ে নানা অনুষ্ঠানে গানে গানে, আনন্দ আয়োজনে নতুন বছরকে বরণ করে নিতে বন্ধু আত্মীয়স্বজন মিলে মিশে উচ্ছ্বাসে মেতে উঠবে।
‘এসো হে, বৈশাখ এসো এসো/ তাপস নিঃশ্বাস বায়ে, মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে,/ বছরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক যাক যাক’/। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এ গানের কথার মতই নতুন বছরের আগমনে ঘুচে যাক অতীতের গ্লানি।
‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর/ তোরা সব জয়ধ্বনি কর/ ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কাল বোশেখির ঝড়।’ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই কবিতার ভেতর দিয়েই নতুন বছরে সব অপ্রাপ্তি ভুলে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে বাঙালি।
রাজধানীতে প্রতি বছর ছায়ানটের প্রভাতি অনুষ্ঠান দিয়ে শুরু হয় পহেলা বৈশাখ উদযাপন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে নববর্ষ উদযাপন পরিণত হয়েছে বাংলাদেশের সর্বজনীন উৎসবে। আজ সবার ঠিকানা হয়ে উঠবে রমনা বটমূলসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, বাংলা একাডেমি, ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবর এলাকা। রাজধানীতে ভোর সোয়া ৬টায় ছায়ানটের প্রভাতি আসরে তবলা বাদন দিয়ে শুরু হবে বর্ষবরণ উৎসব। প্রায় ছয় দশক ধরে বৈশাখে নতুন আবাহন নিয়ে হাজির হয় ছায়ানট। ছায়ানট বাঙালিকে বাংলাদেশে নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার এক নতুন ধারার জন্ম দিয়েছে। এ দীর্ঘ পথচলা নিঃসন্দেহে জাতির জীবনে এক প্রেরণাসঞ্চারি ঘটনা। বিটিভি ছায়ানটের অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করবে।
ছায়ানটের প্রভাতি অনুষ্ঠান যেমন পাকিস্তান আমলে এক দ্রোহ থেকে জন্ম নিয়েছিল, মঙ্গল শোভাযাত্রাও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের প্রতিবাদ জানিয়ে শুরু হয়েছিল। এরপর দেশে রাজনৈতিক নানা পটপরিবর্তন হয়েছে। তবে, এ দুটি আয়োজন সব সময় মানুষকে প্রতিবাদ করার আহ্বান জানিয়েছে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের শপথ নেওয়ার প্রত্যয় জুগিয়েছে। ইউনেস্কোর অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পাওয়া মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হবে সকাল ৯টায়। নতুন অঙ্গীকার ও উৎসাহের মধ্য দিয়ে পালিত হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। শুধু ঢাকা নয়, এখন সারা দেশেই ছায়ানটের আদলে গানের আয়োজন এবং মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়।
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে দেশবাসীসহ বাঙালিদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। নববর্ষে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমীন চৌধুরী, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু, বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ, জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের, জাতীয় পার্টি-জেপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি ও দলের মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম প্রমুখ।
আজ সরকারি ছুটি। বাংলা নববর্ষ ১৪৩০ উদযাপনে রাজধানীর সাংস্কৃতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন সংগঠন এবং প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে নববর্ষকে বরণ করে নেওয়ার জন্য শোভাযাত্রা, আলোচনাসভা, গান, আবৃত্তি, সেমিনার, নাটক প্রদর্শনী ও খাবার বিতরণ। বিটিভিসহ বেসরকারি টিভিতে দিনটি উদযাপনের জন্য নানা অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করা হবে। এছাড়া, ছায়ানটের প্রভাতি অনুষ্ঠান বিটিভি ও বাংলাদেশ বেতার সরাসরি সম্প্রচার করবে। নগরীর বিভিন্ন স্থানে বৈশাখী মেলা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগ দিনব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করবে। ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীসহ অন্যান্য সাংস্কৃতিক সংগঠন যথাযোগ্য মর্যাদায় বাংলা নববর্ষ উদযাপন করবে। পাশাপাশি শিল্পকলা একাডেমি, সুরের ধারা, বাংলা একাডেমিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন রাজধানীতে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে।
এআরএস