মে ৮, ২০২৩, ০৬:৪২ পিএম
ঈদযাত্রায় বিভিন্ন সড়কে সংঘটিত দুর্ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তৈরি পরিসংখ্যান প্রতিবেদনকে প্রশ্নবিদ্ধ বলে উল্লেখ করেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। পাশাপাশি নিজেদের করা প্রতিবেদনটিকে সঠিক দাবি করেছে সংগঠনটি।
সোমবার (৮ মে) সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ কথা জানান।
বিআরটিএ’র তৈরি প্রতিবেদনে দুর্ঘটনা ও হতাহতদের সংখ্যা কম দেখানো হয়েছে দাবি করে তাদের এপ্রিল মাসের দিনভিত্তিক দুর্ঘটনার তথ্য যাত্রী কল্যাণ সমিতিকে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে সংগঠনটি।
সোমবার বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদারের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এ অনুরোধ জানানো হয়।
এর আগে এবারের ঈদযাত্রায় ১৫ এপ্রিল থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত ১৫ দিনে ৩০৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২৮ জন নিহত ও ৫৬৫ জন আহত হয়েছে বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করে যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
পরদিন বিআরটিএ’র পক্ষ থেকে ওই প্রতিবেদনকে অবাস্তব ও কাল্পনিক দাবি করে তাদের কাছে বিস্তারিত তথ্য চেয়ে চিঠি দেওয়া হয় বলে জানান মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
চিঠিতে একই সময়ে বিআরটিএ’র প্রতিবেদনের চেয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদনে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ৫১টি, নিহত ৮৯ জন, আহত ৫৫ জন বেশি কেন হয়েছে—ব্যাখ্যা চাওয়া হয়।
বিষয়টি বিশ্লেষণের জন্য বিআরটিএ’র করা ১ এপ্রিল থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দিনভিত্তিক সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদনের বিস্তারিত তথ্য যাত্রী কল্যাণ সমিতির কাছে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছে সংগঠনটি। ওই প্রতিবেদনটি পাওয়া গেলে দ্রুততম সময়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদনের বিস্তারিত তথ্য বিআরটিএ’র কাছে জমা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির চিঠিতে বলা হয়, ‘বিআরটিএ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন তৈরি করে মাসভিত্তিক প্রকাশ করছে। পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বিআরটিএ’র প্রতিবেদনের সাথে পুলিশের প্রতিবেদন বা বেসরকারি কোনও সংগঠনের প্রতিবেদনের মিল নেই। যাত্রী কল্যাণ সমিতির ঈদযাত্রার সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন ১৫ এপ্রিল থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত ১৫ দিনে ৩০৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২৮ জন নিহত, ৫৬৫ জন আহত হয়েছে। যা দেশের বহুলপ্রচলিত ও বিশ্বাসযোগ্য গণমাধ্যমগুলোতে উঠে এসেছে। তা আমরা একত্রিত করে প্রতিবেদন তৈরি করেছি মাত্র।’
বাংলাদেশে সংঘটিত দুর্ঘটনার ৪০ শতাংশও গণমাধ্যমে আসে না উল্লেখ করে যাত্রী কল্যাণ সমিতির চিঠিতে বলা হয়, এবারের ঈদে আগে-পরে ১৩ দিনে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে এক হাজার ৪ জন সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত রোগী ভর্তি হয়েছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, তাছাড়াও সারা দেশে ১২টি বিভাগীয় বড় হাসপাতাল রয়েছে। দেশের ৬৪ জেলায় ৬৪টি জেলা সদর হাসপাতাল, ৪৯৫টি উপজেলায় ৪৯৫টি উপজেলা হাসপাতালে ঈদের আগে পরে ১৫ দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় আক্রান্ত রোগী ভর্তির তথ্য পাওয়া গেলে দেশে মহামারি সড়ক দুর্ঘটনার ভয়াবহতার চিত্র চরমভাবে ফুটে উঠতো।
সারাদেশের হাসপাতালগুলোর হিসাব বাদ দিয়ে কেবল ঈদের আগে-পরে ১৫ দিনে উল্লেখিত তিন হাসপাতালে ২ হাজার জন সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগী ভর্তি হয়েছে। এই তিন হাসপাতালে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগীর পরিমাণের চেয়ে বিআরটিএ’র সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদনে উঠে আসা আহত রোগীর পরিমাণ কয়েক গুণ কম হওয়ায় বিআরটিএ’র সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদনটি অবাস্তব ও কাল্পনিক কিনা বিভিন্ন মহল থেকে যাচাই-বাছাইয়ের প্রশ্ন উঠেছে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির চিঠিতে আরও বলা হয়, সরকার সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে আন্তরিক। কিন্তু বিআরটিএ দেশে সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনার সঠিক চিত্র সরকারের সামনে তুলে না ধরে বারবার সড়ক দুর্ঘটনা কমেছে এমন তথ্য উপাত্ত দিয়ে দেশে দুর্ঘটনা কমেছে মর্মে জাহির করতে চায়। ফলে সরকার সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সঠিক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে বারবার হোঁচট খাচ্ছে।
সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, যাত্রী কল্যাণ সমিতির তৈরি সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান জনসম্মুখে প্রকাশ না করার জন্য বলা বা প্রকাশ করার আগে বিআরটিএ-কে দেখাতে বলা বিআরটিএ’র এখতিয়ারবহির্ভূত বলে মনে করি।
পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিটি সড়ক দুর্ঘটনার সংবাদে সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগী, উদ্ধারকারী পুলিশ কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি অথবা ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তার বক্তব্য থাকে। তাই যাত্রী কল্যাণ সমিতি এসব দুর্ঘটনার সংবাদগুলোকে সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ হিসেবে ধরে নেয়।
এইচআর