Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ০৬ নভেম্বর, ২০২৪,

এরশাদ শিকদার-বাংলা ভাইসহ ২৬ জনের ফাঁসি দেয়া জল্লাদের মুক্তি আজ

আমার সংবাদ ডেস্ক :

আমার সংবাদ ডেস্ক :

জুন ১৮, ২০২৩, ১২:১৪ পিএম


এরশাদ শিকদার-বাংলা ভাইসহ ২৬ জনের ফাঁসি দেয়া জল্লাদের মুক্তি আজ

দেশের ইতিহাসে দীর্ঘ সময় কারাগারে বন্দি থাকা জল্লাদ শাহজাহান ভূঁইয়া। ২০০১ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২৬ জনের ফাঁসি দিয়েছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে সব থেকে বেশি ফাঁসি দেওয়ার রেকর্ড তার।

যার মধ্যে ৬ জন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি, ৪ জন যুদ্ধাপরাধী, খুলনার কুখ্যাত সন্ত্রাসী এরশাদ শিকদার, জঙ্গি নেতা বাংলা ভাইসহ দুইজন জেএমবি সদস্য ও ১৪ জন অন্যান্য আলোচিত মামলার আসামির ফাঁসি কার্যকর করেছেন তিনি।

জানা যায়, শাহজাহান ভূঁইয়া একমাত্র জল্লাদ যিনি একরাতে দুই কারাগারে চার আসামিকে ফাঁসি দিয়েছেন। তাকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে অভিনয় জগতে জল্লাদদের আইডল ধরা হয়।

৩২ বছরের কারাগারে বন্দি থাকা জল্লাদ শাহজাহান ভূঁইয়া (৭৩) অবশেষে মুক্তি পাচ্ছেন। রোববার (১৮ জুন) সকালে তিনি মুক্তি পাবেন বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ।

জল্লাদ শাহজাহানের পরিচয়
পুরো নাম মো. শাহজাহান ভূঁইয়া। জন্ম ১৯৫০ সালের ২৬ মার্চে। জন্মস্থান নরসিংদীর পলাশ উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের ইছাখালী গ্রামে। তার তিন বোন ও এক ভাই। বাবার নাম হাছেন আলী, মায়ের নাম মেহের। পড়াশোনা করেছেন এইচএসসি পর্যন্ত। খাস হাওলা ফ্রি প্রাইমারি স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে মাধ্যমিক পড়াশোনা করেছেন পারলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে। এরপর ১৯৭৪ সালে নরসিংদী সরকারি কলেজে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অবিবাহিত।

সেনাবাহিনীতে ছিলেন তিন বছর
ছোট থেকেই সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ড তাকে খুব আকর্ষণ করতো। বিশেষ করে তাদের শৃঙ্খলাবোধ তার সবথেকে বেশি ভালো লাগতো। তাই মনেপ্রাণে সবসময় চাইতেন সুযোগ পেলেই সেনাবাহিনীতে চাকরি করবেন। বাবার কাছে একবার খবর পান সেনাবাহিনীতে লোক নেওয়া হচ্ছে।

এরপর সেনাবাহিনীর চাকরির জন্য অংশগ্রহণ করলে তিনি টিকে জান। পরে তিন বছর সেনাবাহিনীতে থাকার পর বাড়ি চলে আসেন। চাকরি করবেন না বলে ১১ মাস কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। ফলে সেনাবাহিনী থেকে চাকরি হারান।

নরসিংদী জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ
মুক্তিযুদ্ধের চারবছর পরের কথা, তখন তিনি তরতাজা তরুণ। এইচএসসি পাস করেছেন দুই বছর আগে। মনের অজান্তে ভালো লেগে যায় কমিউনিস্ট পার্টি, যোগ দেন দলে। তার কার্যক্রমে খুশি হয়ে কেন্দ্র থেকে ডেকে পাঠানো হয়। সেসময় নরসিংদী জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতির দায়িত্ব দিতে চাইলে তিনি রাজি হন। ১৯৭৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতির দায়িত্ব নেন।

অপরাধ জগতে প্রবেশের ইতিবৃত্ত
মানুষ হিসেবে শাহজাহানের বেশ সুনাম ছিলেন। পারতপক্ষে কারও উপকার ছাড়া ক্ষতি করার চেষ্টা করতেন না। তবে প্রচণ্ড বন্ধু পাগল ছিলেন। একবার গ্রামে দুই বন্ধুসহ শাহজাহানের নামে অভিযোগ ওঠে। গ্রামে বসা সালিশ কার্যক্রমে তাকে অপরাধী প্রমাণিত করে সাজা দেওয়া হয়। এরপর থেকেই বদলে যান। ওইদিনের অপমান সহ্য করতে না পেরে সিদ্ধান্ত নেন অপরাধ জগতে প্রবেশ করার।

যেভাবে আটক হন
গ্রামের ওই ঘটনার পরে জল্লাদ শাহজাহান তখন বাংলাদেশের একজন বহুল পরিচিত সন্ত্রাসীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছেন। তাছাড়া কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদানের পর থেকে যেকোনো অপারেশনে (দলীয় গোপন কার্যক্রমে) তার চাহিদা দিনদিন বাড়তে থাকে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য অপারেশন ছিল ১৯৭৯ সালে মাদারীপুর জেলায়, এটাই ছিল তার জীবনে সর্বশেষ অপারেশন। সেখানে কাজ শেষ করে মানিকগঞ্জ হয়ে ঢাকায় ফেরার চেষ্টা করেন। তবে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে শাহজাহানের দল মানিকগঞ্জ হয়ে ঢাকায় ফিরছে।

মানিকগঞ্জে পুলিশ চেকপোস্ট বসালে শাহজাহান তার বাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে তা জানতে পারেন। সব জেনেই ওই এলাকা দিয়ে ঢাকায় ফেরার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। মানিকগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিও হয়। তবে পুলিশ তাকে ধরতে পারেনি। এরপর ঢাকায় পৌঁছে যখন নরসিংদীর উদ্দেশ্যে রওনা হন, সেসময় তাকে আটক করে পুলিশ। এরপর থেকে তার বন্দি জীবন শুরু।

জল্লাদ হিসেবে আত্মপ্রকাশ
জীবনের সোনালি সময় তাকে কারাগারেই কাটাতে হবে- এমন ভাবনা থেকে চিন্তা করলেন জল্লাদ হিসেবে সময় দিলে সাজা কিছুটা হলেও কমবে। তাই নিজেকে অন্যভাবে প্রস্তুত করার জন্য জেল সুপারের কাছে জল্লাদের খাতায় নাম লেখানোর আগ্রহ প্রকাশ করেন। প্রথমে তিনি সহযোগী জল্লাদ হিসেবে গফরগাঁওয়ের নূরুল ইসলামকে ফাঁসি দিয়ে তার জল্লাদ জীবনের সূচনা করেন। এরপর ১৯৯৭ সালে কারা কর্তৃপক্ষ তাকে প্রধান জল্লাদ মনোনীত করে।

প্রধান জল্লাদ হওয়ার পর আলোচিত ডেইজি হত্যা মামলার আসামি হাসানকে প্রথম ফাঁসি দেন। একটি ফাঁসি দিতে প্রধান জল্লাদের সঙ্গে ৬ জন সহযোগী থাকেন। এছাড়া একটি ফাঁসির রায় কার্যকর করলে প্রত্যেক জল্লাদের ২ মাস ৪ দিন করে কারাদণ্ড মওকুফ করা হয়। শুধু ফাঁসির রায় কার্যকর নয়, কারাগারে যারা জল্লাদ হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করতেন, কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে শাহজাহান তাদের প্রশিক্ষণ দিতেন।

৩৬ মামলায় ১৪৩ বছরের জেল
১৯৯১ সালে আটক হওয়ার আগে ও পরে তার নামে সর্বমোট ৩৬টি মামলা হয়। এর মধ্যে একটি অস্ত্র মামলা, একটি ডাকাতি মামলা এবং অবশিষ্ট ৩৪টি হত্যা মামলা। বিচারকার্যে দেরি হওয়ার কারণে সাজা ছাড়াই তিনি ১৯৯১ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত ৪ বছর হাজতি হিসেবে কারাগারে থাকেন। ১৯৯৫ সালে তার সাজা হয় ১৪৩ বছর।

পরে ৮৭ বছর সাজা মওকুফ করে তাকে ৫৬ বছরের জন্য কারাদণ্ড দেওয়া হয়। শাহজাহানের জেল থেকে বের হওয়ার তারিখ তার জেল কার্ডের ওপর লেখা ছিল ‘ডেট অব রিলিজ ২০৩৫’। তবে ফাঁসি কার্যকর, সশ্রম কারাদণ্ড এবং বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করে এখন তার ‘ডেট অব রিলিজ’ চলতি বছরের ১৮ জুন (আজ)।

এইচআর

 

Link copied!