আগস্ট ৫, ২০২৩, ০৭:২৩ পিএম
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, আগামী ৭ থেকে ৮ বছরের মধ্যে সমুদ্র থেকে গ্যাস পাবে দেশ। এতে ভান্ডারে যোগ হবে নতুন গ্যাস। শিল্পের গ্যাস সংকট থাকবে না। পরিকল্পিত শিল্প গড়লে গ্যাসের কোনো সংকট হবে। আর ভোলায় শিল্প-কারখানা করলে সঙ্গে সঙ্গেই গ্যাস পাবেন উদ্যোক্তা।
শনিবার (৫ আগস্ট) মতিঝিলে ‘বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ সর্বোত্তম ব্যবহার ও বঙ্গবন্ধুর দর্শন’ শীর্ষক সেমিনারে এ কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী।সেমিনারের আয়োজন করে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)। এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. খায়রুজ্জামান মজুমদার, জ্বালানি বিষেশজ্ঞ ড. বদরূল ইমামসহ ঢাকা চেম্বার সভাপতি ব্যারিস্টার সমীর সাত্তার, এফবিসিসিআই নেতা ও ব্যবসায়ীরা।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা গভীর সমুদ্রে কাজ করার জন্য একটা অবস্থানে এসেছি। যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম তেল কোম্পানি এক্সন মবিলসহ অনেক কোম্পানি সমুদ্রে কাজ করার আগ্রহ দেখিয়েছে। এক্সন মবিলতো লিখিতভাবে আবেদন করেছে। সেটা যাচাই-বাছাই করছি, সার্ভে কমপ্লিট হলে দরপত্র আহ্বান করা হবে। আমরা আশা করছি, সমুদ্র থেকে আগামী আট বছরের মধ্যে গ্যাস পাবো। অফশোর উইন্ড পাওয়ার করার জন্য ডেনমার্কের একটি কোম্পানি প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। অফশোরে গ্যাসের জন্য মাল্টিক্লায়েন্ট সার্ভেও প্রায় শেষ পর্যায়ে।
নসরুল হামিদ বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু চাইলেন নিজস্ব বিদ্যুত ও জ্বালানির ব্যবস্থা করা। তার মৃত্যুর কয়েকদিন আগে তিতাসসহ পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্র শেল অয়েল কোম্পানির কাছ থেকে ১৭ কোটি টাকায় কিনে নিয়েছিলেন। তখনকার ১৭ কোটি টাকা অনেক বড় অর্থ ছিল। সেই কেনায় পাঁচ গ্যাসক্ষেত্র জাতীয় অর্থনীতিতে ৩ লাখ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। আমরা এখনো গ্যাস ব্যবহার করছি। তিনি না কিনলে আমরা গ্যাসের আমদানিতে থাকতাম। আমাদের এত শিল্প গড়ে উঠতো না, দেশ এগোতো না।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আশুলিয়ায় একটা শিল্পের লাইনে গ্যাস টানা হয়। সেখান থেকে আরও পাঁচজন আসেন তাদের শিল্পে গ্যাস লাইন নেওয়ার জন্য, পরে একই লাইনে একটা গ্রামেও গ্যাসের সংযোগ দেওয়া হয়। তাহলে একটা লাইনে কতটুকু গ্যাস পাওয়া যাবে। আপনারা পরিকল্পিত শিল্প গড়ে তুলুন গ্যাসের সমস্যা দূর হবে। আমাদের ভোলায় গ্যাস উত্তোলন হচ্ছে। আপনারা শিল্প গড়ে তুলুন সঙ্গে সঙ্গেই গ্যাস পাবেন। কিন্তু ভোলার গ্যাস পাইপে করে খুলনায় নেওয়াটা সময়সাপেক্ষ, তবুও আমরা সব উদ্যোগ নিচ্ছি।
বিদ্যুৎ নিয়ে তিনি বলেন, একটা সময় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন শহরের মতোই গ্রামের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে হবে। তাকে শহীদ করা হলেও তার স্বপ্ন পূরণে তার দুই কন্যাকে আল্লাহ বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। তার কন্যা ৯৬ সালে ক্ষমতায় এসেই বিদ্যুতের বেসরকারিকরণ করেছিলেন। বিদ্যুতের উৎপাদনে জোর দিয়েছিলেন। কিন্তু খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসার পর আবারও সব বন্ধ করা হয়। আবার শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়িয়েছেন, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ গেছে।
জ্বালানি বিষয়ে তিনি বলেন, প্রতিদিন ঢাকায় ২০০ তেলবাহী গাড়ি ঢুকছে। এতে যানজট হচ্ছে আবার ফুয়েল খরচ বাড়ছে, সময় লাগছে। আমরা পাইপ লাইনের মাধ্যমে বিমান ও গাড়ির তেল ঢাকায় আনার ব্যবস্থা করছি। আগামী দুই বছর পর আর কোনো তেলের গাড়ি ঢাকায় আসবে না, সব পাইপ লাইনের মাধ্যমে আসবে। এয়ারপোর্টেও পাইপে আসবে তেল এটা হবে অটোমেশন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনারারী অধ্যাপক জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. বদরুল ইমাম বলেন, বঙ্গবন্ধু যদি সেদিন পাঁচটি গ্যাস ক্ষেত্র কিনে না নিতেন, পুরোপুরি বিদেশির ওপর নির্ভর করতে হতো। এখন যে গ্যাস পাচ্ছি তার সিংহভাগ আসে কিনে নেওয়া পাঁচটি গ্যাস ক্ষেত্র থেকে। বঙ্গবন্ধু একইসঙ্গে সমুদ্রে অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করেন। বঙ্গবন্ধু ঘাতকদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হলে আস্তে আস্তে অনুসন্ধান কমে যেতে থাকে। ত্রিপুরা তাদের ছোট্ট আয়তনে ১৬৮টি অনুসন্ধান কূপ খনন করেছে। আয়তনের দিক থেকে কয়েকগুণ বড় বাংলাদেশ মাত্র ১০০টি কূপ খনন করেছে। এতেই বুঝতে পারা যায়, বাংলাদেশ কতটা পিছিয়ে।
বদরুর ইমাম বলেন, এখনকার সংকট দূর করার একমাত্র উপায় হচ্ছে সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান। সাগরে আমাদের দুই পাশে ভারত ও মিয়ানমার গ্যাস পেয়েছে। কিন্তু আমরা ওই অঞ্চলে গ্যাস পাইনি, প্রাকৃতিক কারণে নয়, অনুসন্ধান ঢিলেমির কারণে। ভূতত্ত্ববিদরা মনে করেন, ভবিষ্যতে বাংলাদেশের বড় রিজার্ভ পাওয়া যাবে মিয়ানমার সংলগ্ন এলাকায়।
এই জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বলেন, বড়পুকুরিয়ার উত্তরাংশে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করা যেতে পারে। কারণ সেখানে মাটির স্বল্প গভীরে কয়লার অবস্থান। বাংলাদেশে লোহার খনি আবিষ্কার করেছে জিএসবি। হাকিমপুর উপজেলায় অবস্থিত ক্ষেত্রটিতে বিশাল মজুদ রয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, বঙ্গবন্ধু নিজস্ব সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে সচেষ্ট ছিলেন। ২০৪১ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে লক্ষ্যমাত্রা, এটা নিশ্চিত করতে হলে বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এখন আমাদের জ্বালানি খাত অনেকটা আমদানি নির্ভর, সেখান থেকে বের হয়ে আসতে না পারলে ঝুঁকি থেকে যায়। অনেক দেশ রয়েছে যারা জ্বালানি রফতানি করে। আমাদের সে সুযোগ নেই, আমাদের একমাত্র রফতানি পণ্য হচ্ছে শিল্পপণ্য। শিল্পকে অব্যাহত রাখতে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি জরুরি। নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি নিশ্চিত করতে হলে নিজস্ব কয়লা উত্তোলন করা জরুরি। এক সময় যে দেশগুলো কয়লার বিরুদ্ধে কথা বলতো, ইউক্রেন যুদ্ধের পর তারা আবার কয়লার দিকে ঝুঁকেছে।
আরএস