ডিসেম্বর ২, ২০২৩, ০৬:৪১ পিএম
নভেম্বর মাসে ৮৪ রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৭জন, আহত হয়েছেন ৬২৯ জনেরও বেশি। সরকার বিরোধীদের ২১১৬ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার করেছে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী।
আজ শনিবার (২ ডিসেম্বর) মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) নভেম্বর মাসের প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়।
জানা যায়, বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ এবং এইচআরএসএস এর তথ্য অনুসন্ধানী ইউনিট ও স্থানীয় প্রতিনিধিদের তথ্যের ভিত্তিতে ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসের মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
এইচআরএসএসের মাসিক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের ওপর কমপক্ষে ১৯টি গুপ্ত হামলায় ৩ জন নিহত ও ১৬ জন আহত হয়েছেন। বিএনপির ৮ জন নেতাকর্মীকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে এবং পরবর্তীতে ৪ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
১০০টিরও বেশি বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের বাড়িতে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। একইসঙ্গে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলির দ্বারা কমপক্ষে ২১১৬ জন রাজনৈতিক গ্রেপ্তারের শিকার হয়। তন্মধ্যে বিএনপি-জামায়াতের ২০৯০ জন।
বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কর্মসুচিকে কেন্দ্র করে কমপক্ষে ১১২টি মামলায় ৩৫৬৪ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরো ৯৬৬৩ জনকে অজ্ঞাত আসামী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। কারা হেফাজতে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের দ্বারা বিরোধাীদলীয় কমপক্ষে ১১৭টি সভা-সমাবেশ আয়োজনে বাধা প্রদানের ঘটনা ঘটেছে।
এসময় তাদের সাথে সংঘর্ষে কমপক্ষে ২৮২ জন আহত এবং মিছিল-সমাবেশ কেন্দ্রিক ১৯৩০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনী সহিংসতায় অন্তত ২৫ টি ঘটনায় ২০৬ জন আহত হয়েছেন।
এ মাসে ৯টি হামলার ঘটনায় ১০ জন সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন; আহত হয়েছেন অন্ততপক্ষে ০৬ জন, লাঞ্ছনার শিকার হয়েছে ২ জন ও গ্রেপ্তার ২ জন। একই সময়ে আশঙ্কাজনকভাবে, সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩ এর অধীনে দায়ের করা ২টি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন ৪ জন ও অভিযুক্ত হয়েছেন ৪০ জন। লক্ষ¥ীপুর রামগঞ্জে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী-এমপির আপত্তিকর ছবি ফেসবুকটিকটকে পোস্ট দিয়ে কটূক্তি করায় ফারুক হোসেন (৩৪) নামের এক যুবককে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তিন বছরের সশ্রম কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত।
নভেম্বর মাসে ২৩ টি শ্রমিক নির্যাতনের ঘটনায় পুলিশের গুলিতে ২ জনসহ নিহত হয়েছেন ৪ জন এবং আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৬০ জন। গার্মেন্ট শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কমপক্ষে ৬২ টি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২০০ জনের বেশি শ্রমিক এবং মামলার আসামি করা হয়েছে ৩৪০০০ জনের বেশি। এটি উদ্বেগজনক যে, এ মাসে “গণপিটুনির” ৮টি ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৭ জন এবং আহত হয়েছেন ৬ জন। এছাড়াও “ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)” কর্তৃক ২ টি হামলার ঘটনায় ১ জন বাংলাদেশী নিহত ও ১ জন আহত হয়েছেন
নভেম্বর মাসে ১০৬ জন নারী ও কন্যা শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৪২ জন, যাদের মধ্যে আশঙ্কাজনকভাবে ২৩ জন (৫৫%) ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু। এটা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় যে, ৯ জন নারী ও কন্যা শিশু গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন, আত্মহত্যা করেছেন ১ জন এবং ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ২ জনকে। ২২ জন নারী ও কন্যা শিশু যৌন নিপীড়ণের শিকার হয়েছেন তন্মধ্যে শিশু ৮ জন।
যৌতুকের জন্য নির্যাতনের ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩ জন নারী এবং শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২ জন। পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন ২১ জন, আহত হয়েছেন ৬ জন এবং আত্মহত্যা করেছেন ১০ জন নারী। অন্যদিকে, ৮৪ জন শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। যাদের মধ্যে ২৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং ৫৮ জন শিশু শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
এইচআর