Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪,

৩৩০ মিয়ানমার নাগরিককে বিজিপির কাছে হস্তান্তর

কক্সবাজার প্রতিনিধি

কক্সবাজার প্রতিনিধি

ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৪, ০১:৪৬ পিএম


৩৩০ মিয়ানমার নাগরিককে বিজিপির কাছে হস্তান্তর

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যসহ (বিজিপি) ৩৩০ জনকে দেশটির বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) কাছে হস্তান্তর করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

বৃহস্পতিবার ১৫ ফেব্রুয়ারি দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে বিজিবির কক্সবাজার রিজিয়নের সার্বিক তত্ত্বাবধানে মিয়ানমার নাগরিকদের বিজিপির কাছে হস্তান্তর করা হয়।

এর আগে সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে স্পিডবোটযোগে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পুলিশ কর্নেল মিউ থুরা নাঙয়ের নেতৃত্বে ৫ সদস্য বিশিষ্ট বিজিপি প্রতিনিধি দল কক্সবাজারের ইনানী নৌ-বাহিনী জেটিঘাটে এসে পৌঁছেছে।

হস্তান্তর শেষে বিজিবি মহাপরিচালক সাংবাদিকদের বলেন, সাম্প্রতিককালে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষের জেরে প্রাণভয়ে পালিয়ে আসা বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী বিজিপি সদস্যসহ ৩৩০ জন মায়ানমার নাগরিককে বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) এর কাছে হস্তান্তর করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এরমধ্যে  ৩০২ জন বিজিপি সদস্য, ৪ জন বিজিপি পরিবারের সদস্য, ২ জন সেনা সদস্য, ১৮ জন ইমিগ্রেশন সদস্য এবং ৪ জন বেসামরিক নাগরিকসহ সর্বমোট ৩৩০ জন।

বিজিবি মহাপরিচালক সাংবাদিকদের বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে জান্তা সরকারের বিভিন্ন বাহিনী ও সেদেশের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। অতি সম্প্রতি মায়ানমারের অভ্যন্তরীণ এই সংঘর্ষের প্রভাব বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তেও এসে পড়ে। এরই ধারাবাহিকতায় ৪ ফেব্রুয়ারি  থেকে মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু, ঘুমধুম ও বাইশফাঁড়ী সীমান্তের বিপরীতে মায়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি‍‍`র তুমব্রু রাইট ও লেফট ক্যাম্পে আক্রমণ করে। একইসাথে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার বালুখালী, পালংখালী এবং টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং, হ্নীলা ও শাহপরীরদ্বীপ সীমান্তের বিপরীতে কাইচিংরং, মইদু, গুদুছড়া ও মংডু এলাকায়ও গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ফলে মিয়ানমারের বিজিপি, সেনা, পুলিশ, ইমিগ্রেশন ও বেসামরিক সদস্যরা প্রাণভয়ে পালিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে অস্ত্রসহ বিজিবি‍‍`র কাছে আত্মসমর্পণ করে।  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধৈর্য ধারণ করে এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বজায় রেখে বিজিবিকে সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করার নির্দেশ দেন।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে বিজিবি‍‍`র তত্ত্বাবধানে মায়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী সদস্যদেরকে সম্পূর্ণভাবে নিরস্ত্রীকরণ করে এবং তাদেরকে নিরাপদ আশ্রয় প্রদান করে। এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় আগত ৯ জন বিজিপি সদস্যকে বিজিবির তত্ত্বাবধানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসার সুব্যবস্থা করা হয়।

বিজিবি মহাপরিচালক আরও বলেন,  ১১ ফেব্রুয়ারি  পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিজিপিসহ ৩৩০ জন সদস্যকে মায়ানমারে প্রত্যাবাসনের জন্য বিজিবিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। বিজিবি‍‍`র রামু সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মেহেদী হোসাইন কবীর এর নেতৃত্বে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও পুলিশের প্রতিনিধির সমন্বয়ে সাত সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রত্যাবাসন কমিটি গঠন করা হয়।

কমিটি মায়ানমারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃকপক্ষের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ ও সমন্বয় করে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী বিজিপিসহ অন্যান্য সদস্যদেরকে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। এরই ধারাবাহিকতায়  বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের জাহাজে করে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পুলিশ কর্নেল  মোয়ে তোরা নাঙ এর নেতৃত্বে ৫ সদস্য বিশিষ্ট বিজিপি প্রতিনিধিদল কক্সবাজারের ইনানীর নৌবাহিনীর জেটিঘাটে আসে এবং বিজিবির নিকট থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী ৩৩০ জন মায়ানমার নাগরিককে গ্রহণ করে মায়ানমারে নিয়ে যায়।

সীমান্তে বিজিবি‍‍`র টহল ও জনবল বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে জানান বিজিবি মহাপরিচালক। তিনি বলেন, সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থেকে বিজিবি সীমান্তের পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছে। বর্তমানে সীমান্ত পরিস্থিতি সম্পূর্ণরূপে বিজিবি‍‍`র নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পরিস্থিতি যাই হোক, সীমান্ত দিয়ে আর একজন মিয়ানমার নাগরিককেও বাংলাদেশ করতে দেওয়া হবে না।

আরএস

Link copied!