Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪,

দেশে নৌপথ বাড়ছে আরও ১০ হাজার কিলোমিটার

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৪, ০৬:৫৪ পিএম


দেশে নৌপথ বাড়ছে আরও ১০ হাজার কিলোমিটার

অভ্যন্তরীণ নৌপথসমূহের চলাচলের গুরুত্ব, নৌপরিবহনের চাপ এবং গভীরতা বিবেচনা করে ৬টি শ্রেণিতে নৌপথের শ্রেণিবিন্যাস করা হয়েছে। বর্তমানে ৫৯৬৮ কিলোমিটারের স্থলে ১৬ হাজার ১৫৫ কিলোমিটার নৌপথ পাওয়া গেছে। এই হিসেবে নৌপথ বাড়ছে ১০ হাজার কিলোমিটারের বেশি। 

নৌপথে নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে নৌযান চলাচলের নিশ্চয়তায় বিশেষ শ্রেণিতে সর্বনিম্ন সাড়ে চার মিটার গভীরতায় ওপর অংশে ২০ মিটার ছাড় দিয়ে সেতু বা অন্যকোনো স্থাপনা করতে হবে। সর্বশেষ যা ছিল ১৮ মিটার। এভাবে নদীর ৬টি শ্রেণিতে গভীরতা নির্ধারণ ও স্থাপনা নির্মাণের পরিমাপ নতুন করে ঠিক করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে ‘ডিটারমিনেশন অব স্ট্যান্ডার্ড হাই ওয়াটার লেভেল, স্ট্যান্ডার্ড লো ওয়াটার লেভেল এবং রি-ক্লাশিফিকেশন অব ইনল্যান্ড ওয়াটারওয়েজ ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সমীক্ষা প্রকল্পের ফলাফল চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে আয়োজিত এক কর্মশালায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এবং ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লিউএম) যৌথভাবে এ কর্মশালার আয়োজন করে।

কর্মশালায় জানানো হয়, ৩৩ বছর পর দেশের নদ-নদী নিয়ে এই সমীক্ষা তৈরি করা হলো। সমীক্ষার জন্য চারটি সংস্থার ৪৪২টি স্টেশনের ২৫ বছরের উপাত্ত বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। ১৯৬৭ সালে ১১৬ স্টেশনের, ১৯৮৭-৯০ সালে ১৬৬ স্টেশনের তথ্য নিয়ে সমীক্ষা হয়। সর্বশেষ সমীক্ষা শুরু হয় ১৯৯১ সালে। এতে দেখা গেছে, নানা কারণে নদী ও চ্যানেলের গতিপ্রবাহের পরিবর্তন হয়েছে। সেতুর কারণে সংকুচিত হয়েছে দেশের নদ-নদী। তাই নতুনভাবে নৌপথের বিন্যাসের প্রয়োজন বলেও মনে করেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। সর্বশেষ সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশের ৭০ ভাগ নদীর পানির পরিমাণ কমেছে। ৩০ ভাগের বেড়েছে। এই মুহূর্তে সাড়ে ৪৩ ভাগ পণ্য আমদানি হচ্ছে নৌপথে। নতুন সমীক্ষা অনুযায়ী সব নৌপথ সক্রিয় করা সম্ভব হলে জ্বালানি তেলের সাশ্রয় হবে, ব্যয় কমার পাশাপাশি পরিবেশ দূষণ হ্রাস পাবে। অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখবে দেশের নৌপথ। দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন প্রস্তাব চূড়ান্ত করার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিআইডব্লিউটিএ হাইড্রোগ্রাফি বিভাগের সহকারী পরিচালক ও প্রকল্প কর্মকর্তা রকিবুল্লাহ জানান, বিআইডব্লিউটিএ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করেছে আইডব্লিউএম। ১৮ কোটি ৩০ লাখ ৫৭ হাজার টাকার এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয় ২০২১ সালে। ওই বছরের অক্টোবরে শুরু হওয়া প্রকল্পটি গত বছরের সেপ্টেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। ছয় মাস বাড়িয়ে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত নতুন সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রস্তাব চূড়ান্ত হবে।

নদী রক্ষার দায়িত্ব সবার একথা উল্লেখ করে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে সমন্বয় দরকার। দেশে প্রতিনিয়ত ডেভেলপমেন্টের কারণে নদীগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদের বর্তমান বাস্তবতা নিয়ে ভাবতে হবে। এক সময় দেশের খালগুলো নদী ছিল। দখলের কারণে খালে রূপ নিয়ে, এখন নালাও নেই। ঢাকার চার নদীর শাখাগুলো দখল হয়ে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, তুরাগ, বালু, শীতলক্ষ্যা নদী দখল হয়ে যাচ্ছে। আমরা পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করতে কাজ করছি। দুই-তিন বছরে জলাবদ্ধতা হচ্ছে না; এটা ভালো দিক। তবে শীতলক্ষ্যায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্মিত সেতু পরিকল্পিত হয়নি।

২০১০ সালে নদ-নদীর ওপর পরিকল্পিতভাবে সেতু ও কালভার্ট নির্মাণের উদ্দেশ্যেপ্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে একটি বিধিমালা জারি করা হয়। প্রয়োজনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সনে ওই বিধিমালায় একটি সংযোজনীও যুক্ত করা হয়। এর আগে ৪০ বছরে এরকম বিধিমালা কেন হয়নি? এমন প্রশ্ন রেখে প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশের অসংখ্য নদীতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোটি কোটি ব্লক আছে। নদী ধ্বংসে এই প্রতিষ্ঠান তো দায় এড়াতে পারে না।

নানামুখী অত্যাচারের কারণে নদীর চরিত্র বদলাচ্ছে, গতিপথ পরিবর্তন করছে জানিয়ে খালিদ মাহমুদ বলেন, নদীতে যাত কম পারা যায় স্থাপনা নির্মাণ করতে হবে। তবে জনপ্রতিনিধিদের কারণে নদীতে সেতু বাড়ে।

নৌ-সড়ক ও রেলপথ রক্ষা করে বহুমুখী যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, নদীর প্রবাহ বন্ধ হলে বাংলাদেশের প্রাণ থাকবে না, তা মানতে হবে। রাজধানীর চারপাশে নদীর জায়গা উদ্ধার অভিযান ও নদী ঘিরে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড মানুষের চোখে পড়েছে। এখন নদীতে ময়লা ফেলতে মানুষ ডান-বামে তাকায়। এটা কম সফলতা নয়। সময় এসেছে নদী রক্ষার পাশাপাশি মানুষের কাঠামো উন্নয়নেও কাজ করতে হবে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, এর আগে ১৯৬৭ সনে এবং ১৯৮৯ সনে নদীর ‘হাই ও লো লেভেল’ নিয়ে সমীক্ষা পরিচালনা করা হয়েছিল। ওই সমীক্ষা দুটি করেছিল বিদেশি সংস্থা। এবার আমাদের জাতীয় প্রতিষ্ঠান আইডব্লিউএম এই সমীক্ষার কাজ করেছে। এর ফলে প্রমাণ হয়, জ্ঞান-বিজ্ঞানে ও সক্ষমতায় বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ নদ-নদীর ওপর পরিকল্পিতভাবে সেতু ও কালভার্ট নির্মাণের উদ্দেশ্যে বিধিমালা (সংশোধিত) তৈরি করবে। সে বিধিমালায় যাতে কোনো স্ট্রাগল তৈরি না হয়; সেটি হবে সবার জন্য ফলপ্রসূ এবং সবার জন্য সুবিধাজনক। নদীর কথা চিন্তা করে জাহাজগুলোর হাইট নির্ধারণ করতে হবে। ব্রিজের হাইটের চেয়ে নদীতে পিলারের কারণে সিলট্রেশন হয়ে যাচ্ছে। নদীতে ব্রিজ তৈরির ক্ষেত্রে যাতে কম পিলার থাকে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তফা কামাল, বিআইডব্লিউটিএর সদস্য প্রকৌশল মোহাম্মদ মনোয়ার উজ জামান। আইডব্লিউএম-এর নদী ও পানি বিশেষজ্ঞ ফারহানা আখতার কামাল সমীক্ষা প্রকল্পের ফলাফল উপস্থাপন করেন। এরপর মুক্ত আলোচনায় বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা মতামত তুলে ধরেন।

আরএস
 

Link copied!